ফাইল ছবি।
স্টাফ রিপোর্টার, নয়াদিল্লি : ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ ভারতীয় সংবিধানের অবিচ্ছেদ্য এবং অসংশোধনীয় অঙ্গ। সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে এই দুই শব্দকে বাদ দেওয়ার আবেদন করে শীর্ষ আদালতে বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী সুব্রহ্মণ্যম স্বামী, অশ্বিনী উপাধ্যায়দের দায়ের করা জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে গুরুত্বপূর্ণ এই পর্যবেক্ষণ রাখল সুপ্রিম কোর্ট। নভেম্বরের দ্বিতীয় ভাগে এই মামলার রায়দান করা হবে বলে জানিয়েছে বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ।
১৯৭৬ সালে সংবিধানের ৪২-তম সংশোধনীতে সংবিধানের প্রস্তাবনায় যুক্ত হয় উল্লেখিত শব্দ দু’টি। এদিন আদালতে আইনজীবী বিষ্ণুশঙ্কর জৈন দাবি করেন, সংসদে কোনওরকমের আলোচনা বা বিতর্ক ছাড়াই জরুরি অবস্থার সময় এই সংশোধনী এনেছিল তৎকালীন ইন্দিরা গান্ধী সরকার। যা সম্পূর্ণভাবে অসাংবিধানিক। তাই সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে বাদ দেওয়া হোক এই দুই শব্দ। শুনানিতে মামলা দায়ের করা বিভিন্ন আইনজীবীরা মোটামুটি এই বক্তব্যই রাখেন আদালতের সামনে। এক সময় যথেষ্ট বিরক্ত হয়ে বিচারপতি খান্নাকে বলতে শোনা যায়, “আপনারা কি চান না, ভারত ধর্মনিরপেক্ষ থাকুক?”
জবাবে আইনজীবী জৈনকে বলতে শোনা যায়, “বলছি না যে দেশ ধর্মনিরপেক্ষ নয়। সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করছি। অসাংবিধানিকভাবে প্রস্তাবনায় ঢোকানো দু’টি শব্দকে বাদ দেওয়ার কথা বলছি।” এরপর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণে বেঞ্চ বলে, “ফরাসি মডেলের ধর্মনিরপেক্ষতা নয়, ভারত নিজস্ব ধ্যানধারণার একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ গঠন করেছে। আবার মনে রাখতে হবে, সমাজতন্ত্রের মানে সকলের জন্য সমান সুযোগ, সম্পদের উপর সমানাধিকার। পশ্চিমি সমাজতন্ত্রের সঙ্গে একে গুলিয়ে ফেললে চলবে না।”
আদালত এদিন পরিষ্কার করে দেয়, সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞা, ধারণা দেশে বারবার বিবর্তিত হয়েছে। এর আগেও বহুবার বহু রায়ে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাকে স্বীকৃতি দিয়েছে আদালত। এই দু’টি শব্দ এখন সংবিধানের মূল ভিত্তি হয়ে গিয়েছে, যা কোনও অবস্থাতেই আর পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এর আগে গত ১১ জুলাইয়ের শুনানিতেও শীর্ষ আদালত স্পষ্ট করেছিল, ধর্মনিরপেক্ষতা ভারতের সংবিধানের মূল কাঠামোর অঙ্গ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.