সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ব্যক্তিগত গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজের জন্য দিল্লির আসার মতো পরিস্থিতিতে নেই। এই কথা জানিয়ে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) বৈঠকে গরহাজির থাকলেন বাজার নিয়ামক সংস্থা সিকিওরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ব্যারো অফ ইন্ডিয়া (সেবি)-র চেয়ারপার্সন মাধবী পুরী বুচ। যার জেরে বিরক্তি প্রকাশ করে বৃহস্পতিবারের বৈঠক মুলতবি করে দেন কমিটির চেয়ারম্যান কে সি বেণুগোপাল। এরপরই কেন্দ্রের শাসক ও বিরোধী দলের মধ্যে শুরু হয় বিতর্ক, বাদানুবাদ। বৈঠক মুলতুনি করে দেওয়ায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিজেপি। কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই এভাবে বৈঠক মুলতবি করে দেওয়া অসংসদীয় কাজ, বৈঠকের বিষয়ে বাইরে কথা বলেও সংসদীয় রীতিনীতির অপমান করেছেন চেয়ারম্যান, এমনই অভিযোগে লোকসভার স্পিকারের কাছে নালিশ করেছে বিজেপি। বিরোধী সাংসদরা আবার সেবি চেয়ারম্যানকে কটাক্ষ করে বলেন, এভাবে কতদিন পালিয়ে পালিয়ে বাঁচবেন?
মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গের সম্প্রতি প্রকাশ পাওয়া রিপোর্টে সেবি প্রধানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। যেখানে বলা হয়, মাধবী সেবির চেয়ারপার্সন হওয়ার পরও তাঁর ও তাঁর স্বামীর আর্থিক উপদেষ্টা সংস্থা, যে সংস্থা বিভিন্ন শিল্প সংস্থাকে পরামর্শ দিয়ে আয় করে, সেখানে যুক্ত ছিলেন। বলা হয়, বিভিন্ন অখ্যাত ও বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থার মাধ্যমে আদানিদের বিভিন্ন সংস্থায় লগ্নি করিয়ে কৃত্রিমভাবে আদানিদের শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি করানো হয়। সেই লগ্নিতে ছিল বুচ দম্পতির অর্থও। সঙ্গে যুক্ত হয় বিরোধীদের নানা দাবি। বলা হয়, সেবির দায়িত্বে থেকেও বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে বেতন তুলেছেন মাধবী। এক সময় লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী স্বয়ং মাধবীর অপসারণের দাবি তোলেন। এরপরই নবনির্মিত পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি ডেকে পাঠায় মাধবীকে।
মাধবী পুরী বুচের বৈঠকে না আসা নিয়ে রীতিমতো কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্র। সংবাদমাধ্যমে লিখেছেন, ‘ব্যক্তিগত জরুরি কাজ এসে যাওয়ায় পিএসি মিটিংয়ে আসতে পারলেন না শ্রীমতী বুচ। ম্যাডাম, এভাবে পালিয়ে বেড়িয়ে লাভ নেই। মুখোমুখি হোন ও স্বীকার করুন।’ এদিকে, রীতিমতো ক্ষিপ্ত হয়ে বেণুগোপাল বলেন, “উনি আগেই আবেদন করেছিলেন, যাতে ওঁকে হাজিরা দেওয়া থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আমরা তা খারিজ করে দিই। আজ সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ উনি জানান, কিছু ব্যক্তিগত কারণে উনি দিল্লি আসার মতো অবস্থায় নেই। একজন মহিলার থেকে এই অনুরোধ পাওয়ার পর বৈঠক মুলতবি করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না।” উল্লেখ্য, মাধবীকে বৈঠকে ডাকা নিয়ে আগেই আপত্তি জানিয়েছিলেন কয়েকজন বিজেপি সাংসদ।
কমিটির সদস্য নিশিকান্ত দুবে স্পিকারকে চিঠি লিখে দাবি করেন, এভাবে কোনও স্বশাসিত সংস্থার প্রধানকে ডাকতে পারে না পিএসি। এরপরই তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন। আরেক বিজেপি সাংসদ তথা কমিটির সদস্য রবিশঙ্কর প্রসাদের বক্তব্য, “কারও সঙ্গে আলোচনা না করে এভাবে নিজে নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না চেয়ারম্যান।” এছাড়াও বৈঠকের বিষয়ে বেণুগোপালের সংবাদমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি সাংসদরা। যদিও তাঁরা হয়তো ভুলে গিয়েছেন, চলতি সপ্তাহেই ওয়াকফ সংক্রান্ত যৌথ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে হওয়া গন্ডগোল নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন বিজেপিরই সাংসদ তথা সেই কমিটির চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পাল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.