সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ঘড়ির কাঁটায় ঠিক ভোর ৫.৩০ মিনিট। দীর্ঘ টানাপোড়েনের অবসান ঘটল। প্রায় আট বছর পর সুবিচার পেলেন নির্ভয়ার মা। ফাঁসিকাঠে ঝোলানো হল ২০১২ সালে ধর্ষণে দোষীসাব্যস্ত চারজন। নির্ভয়ার মা বলছেন, “দেশের মেয়েরা আজ বিচার পেল।”
তবে নির্ভয়া কাণ্ডের দোষীদের ফাঁসি নিয়ে শেষমুহূর্ত পর্যন্ত চলল নাটক। বৃহস্পতিবার রাতে ফাঁসির কয়েক ঘণ্টা আগে দিল্লি হাই কোর্টে অক্ষয় কুমার সিং, পবন গুপ্তা ও বিনয় শর্মা ক্ষমার আরজি জানায়। রাতেই শুরু হয় শুনানি। আর গভীর রাতেই তা খারিজ করে দেয় দিল্লি হাই কোর্ট। দিল্লি হাই কোর্ট তিনজনের আরজি খারিজ করার পর পবন গুপ্তার আইনজীবী মধ্যরাতে আবেদন জানান সুপ্রিম কোর্টে। পবন ঘটনার সময় নাবালক থাকা সত্ত্বেও কেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ তার ক্ষমার আরজি খারিজ করেছেন, এই দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন পবনের আইনজীবী।
ইয়াকুব মেমনের ঘটনার মতোই রাত আড়াইটের সময় সেই মামলার শুনানি শুরু হয় শীর্ষ আদালতে। পবনের আইনজীবীর দাবি, ঘটনার সময় যে তাঁর মক্কেল স্কুলে পড়ত, সেই সমস্ত নথিপত্র সরকারকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকারের তরফে সেইসব নথি চেপে যাওয়া হয়। সরকারের পক্ষে সওয়াল করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। সুপ্রিম কোর্ট পবনের আইনজীবীর যুক্তি শুনতে চায়নি। শীর্ষ আদালত বলে, এই নিয়ে সব সওয়াল আগেই হয়ে গিয়েছে। স্কুলের দেওয়া শংসাপত্রের উপর বয়স ঠিক করা যায় না। সমস্ত আইনি জটিলতা মিটে যায় ফাঁসির ঘণ্টা কয়েক আগে।
বুধবার থেকেই ফাঁসির প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিল তিহার জেল কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার সন্ধেতেও আরও একবার প্রস্তুতি নেয় তিহার কর্তৃপক্ষ। পবন জল্লাদই ফাঁসি দিলেন এই চার দোষীকে। দেশে প্রথম এই একসঙ্গে চার জনের ফাঁসির ঘটনা ঘটল। ফাঁসির আগে যাতে দোষীরা আত্মহননের চেষ্টা না করে, তার জন্য কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয়েছিল তাদের। ফাঁসির পর তাদের দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হচ্ছে। তারপর তাদের দেহ তুলে দেওয়া হবে পরিবারের হাতে।
২০১২ সালের নির্ভয়া ধর্ষণ কাণ্ড এখনও সবার মনের কোণে রয়েছে। গত সাড়ে সাত বছর ধরে নির্ভয়ার পরিবার লড়াই করেছে। অবশেষে মিলল সুবিচার। তিহারের ৩ নম্বর জেলে ফাঁসি হল এই চার দোষীর। বুধবার পবন জল্লাদ-সহ জেল কর্তৃপক্ষ ফাঁসির মহড়া দিয়েছিলেন। দোষী চারজনের সমান ওজনের বস্তা ঝুলিয়ে দড়ি থেকে শুরু করে বাকি আরও সব পরীক্ষা করা হয়েছে। দশটি দড়ি নিয়ে আসা হয়েছে বিহার থেকে। সেগুলি শেষবারের মতো পরীক্ষা করা হয় বৃহস্পতিবারই। শুক্রবার সূর্যোদয়ের আগেই ফাঁসিকাঠে ঝুলল পবন, অক্ষয়, বিনয় এবং মুকেশ।
Delhi: Security deployed outside Tihar jail, where the four 2012 Delhi gang-rape death row convicts will be hanged shortly. pic.twitter.com/QxyQi0XnWD
— ANI (@ANI) March 19, 2020
১৯৮২ সালের জানুয়ারি মাসে তিহার জেল দুই কুখ্যাত অপরাধী রঙ্গা-বিল্লার ফাঁসির সাক্ষী হয়েছিল। পরে ১৯৮৯ সালে ইন্দিরা গান্ধীর হত্যায় অভিযুক্ত সতবন্ত সিং ও কেহর সিংয়ের ফাঁসিও হয়েছিল তিহারে। এই সমস্ত ফাঁসির ঘটনার পর আবারও নির্ভয়া কাণ্ডে অভিযুক্ত এই চারজনের ফাঁসির সঙ্গে এক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হল তিহার জেল। নির্ভয়ার পরিবারের কথায়, গোটা দেশের মেয়ে বিচার পেল। ধর্ষকের পরিণতি কী হতে পারে, সেটাই দেখল এ দেশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.