সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গত বিশ বছরের সর্বক্ষণের সঙ্গী। বহু যুদ্ধের সহকর্মী। সবচেয়ে বিশ্বস্ত। যাঁকে ছাড়া একমুহূর্তও চলা প্রায় অসম্ভব ছিল আম্মার। সেই মানুষটি কিন্তু আজও রয়ে গেলেন সেই একরকম, সাদামাটা। ভাবলেশহীন, নির্বিকার। এই উপমাগুলি আজ তাঁর সঙ্গে যথার্থ। আজ তামিলদের প্রিয় পুরাতচি তালাইভির মরদেহ শায়িত বিখ্যাত রাজাজি হলে। একইভাবে যেমন এম জি রামচন্দ্রণের মরদেহ শায়িত ছিল। তখন পরপর দু’দিন মোট ২১ ঘণ্টা ঠাঁয় প্রিয় এমজিআরের মরদেহর মাথার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন আম্মু। মঙ্গলবার সকাল থেকে আম্মার মরদেহর সামনে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে সেই মানুষটি। তিনি শশীকলা নটরাজন। গুরু আম্মার একনিষ্ঠ শিষ্যা। কালো শাড়ি পরে, কান্না-আবেগ ভুলে তিনি দাঁড়িয়ে। ঠিক যেন ২৯ বছর আগের এক চেনা দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। শুধু সময়টাই বদলেছে, ছবি একইরকম রয়ে গিয়েছে।
সাতের দশকে জরুরি অবস্থার সময় জয়ললিতার সংস্পর্শে আসেন শশীকলা। তারপর এআইএডিএমকে পার্টিতে যত উত্থান হয়েছে আম্মার ততই তাঁর ঘনিষ্ঠ হয়েছেন শশীকলা। আম্মার পাশে সর্বক্ষণের সঙ্গী হিসাবে শশীকলার উপস্থিতি একসময় চেনা ছবি হয়ে দাঁড়ায়। যদিও ২০১১ সালে দল থেকে শশীকলাকে বহিষ্কার করা হয়, কিন্তু কয়েকমাস পরেই ফের স্বমহিমায় দলে প্রত্যাবর্তন হয় তাঁর। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি শশীকে। আম্মার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছিলেন ব্যক্তিগত জীবনেও। তবে আম্মার অকাল প্রয়াণে শশীকলাকে ঘিরে বেশ কিছু প্রশ্ন গোটা তামিল সম্প্রদায়ের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। আম্মার অবর্তমানে তবে কি শশীকলাই দলের কেন্দ্রীয় মুখ হতে চলেছেন? যেমনটি এমজিআরের মৃত্যুর পর ধূমকেতুর মতো উত্থান হয়েছিল জয়ললিতার। এমজিআরের অবর্তমানে দলের সর্বেসর্বা হয়ে উঠেছিলেন আম্মা। তবে কি সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে চেন্নাইয়ের রাজনীতিতে? অনেক পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদের মতে, শশীকলা এখন দলের মধ্যে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবেন। তাঁদের মতে, দলের বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত থেকে শুরু করে আম্মার শেষকৃত্য, সবই শশীকলার তদ্বিরেই হয়। তাই থেকে দ্রাবিড় আন্দোলনের প্রবীন ঐতিহাসিক এ আর বেঙ্কটাচালপতির মতে, আম্মার মৃত্যুর পর মুখ্যমন্ত্রীর পদে পন্নির সেলভমের দায়িত্বগ্রহণ জরুরিকালীন বন্দোবস্ত ছাড়া আর কিছুই না। ভবিষ্যতের কান্ডারি কিন্তু শশীকলাই। তবে অনেকের মতে, মুখ্যমন্ত্রীত্ব নয় বরং দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়াই শশীকলার এখন প্রধান লক্ষ্য। তবে দলের একাংশের মতে, বিধায়করা শশীকলার পক্ষে হলেও দলের নিচুতলার কর্মীদের সমর্থন কিন্তু তাঁর দিকে নেই। এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে কীভাবে পরবর্তী ভোট পর্যন্ত শশীকলা টানতে পারে এখন সেটাই দেখার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.