শঙ্কর ভট্টাচার্য: এবার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসতে চলেছেন ‘চিন্নাম্মা’ শশীকলা নটরাজন? অন্তত তেমনটাই খবর এআইএডিএমকে শিবিরের৷ ঘুঁটি সাজানোর পর্ব শেষ৷ এবার শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা৷ চেন্নাইয়ের রাজনৈতিক মহলের খবর, আজ বিধায়কদের বৈঠকের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিষয়ে ঘোষণা হতে পারে৷ রবিবার দুপুরে ডাকা হয়েছে ওই বিশেষ বৈঠক৷ তবে দলীয় সূত্রের খবর, আগামী ৯ ফেব্রূয়ারি তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিতে চাইছেন৷ কারণ জ্যোতিষীর মতে, ওই দিনটি অত্যন্ত শুভ এবং পবিত্র শশীকলার পক্ষে৷ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে দলের তরফে এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা হচেছ না৷ মুখ বন্ধ রেখেছে অন্য দলগুলিও৷
তামিলনাড়ুতে যে ক্ষমতার পরিবর্তন হচেছ, তা বোঝা গিয়েছিল গত মাসেই৷ ২৬ জানুয়ারি দলের বিধায়কদের বৈঠক ডেকেছিলেন শশীকলা৷ পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্বগ্রহণের পর সেটাই ছিল তাঁর প্রথম বৈঠকে৷ সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী পন্নিরসেলভমকে কিন্তু মঞ্চে বসতে দেওয়া হয়নি৷ শশীকলা-সহ দলের অন্য গুরুত্বপূর্ণ সব নেতাই বসেন মঞ্চে৷ পন্ন্রিসেলভমের জায়গা হয়েছিল সাধারণ বিধায়কদের মাঝে৷ ওই দিন সন্ধ্যায় শশীকলার পোয়েজ গার্ডেনের বাড়িতে বসে সাংসদদের নিয়ে বৈঠক করেন ৷ সেই বৈঠকেও গুরুত্বপূর্ণ সব নেতা থাকলেও আমন্ত্রণ পাননি মুখ্যমন্ত্রী৷ তারই বদলা হিসাবে গত সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী পন্নিরসেলভম ঘোষণা করেন, ‘আম্মা’ জয়ললিতার ঘোষিত সব প্রকল্পই চলবে৷ থাকবে জয়ার ছবি৷ অন্য কোনও নেতা বা নেত্রীর ছবি ব্যবহার করা চলবে না৷ মূলত শশীকলার ছবি ব্যবহার ঠেকাতেই এই ঘোষণা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ শনিবারই শশীকলা দলে রদবদল করেন৷ জয়ললিতার ঘনিষ্ঠ বহু নেতাকেই গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে দেন৷ প্রাক্তন মন্ত্রী কে এ শেনগোট্টিয়ান, এস গোকুলা ইন্দিরা আর বি ভি রামন, মন্ত্রী ডি দয়কুমার, প্রাক্তন মেয়র সদাই দুরাইস্বামীকে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আনা হয়৷
গত প্রায় এক মাস ধরেই চলছে সলতে পাকানো পর্ব৷ প্রথমে দলের সাধারণ সম্পাদক পদে চলে আসেন শশীকলা৷ তার পর থেকেই এআইএডিএমকের বর্ষীয়ান নেতা তথা লোকসভার ডেপুটি স্পিকার এম থাম্বিদুরাই বলেন, এক পদ, এক নেতা নীতি বজায় রাখতে হবে৷ মানে পার্টির নেত্রীকেই করতে হবে মুখ্যমন্ত্রী৷ ব্যস, তাঁর এই বক্তব্যের পর থেকেই তামিলনাড়ুর এডিএমকে শিবিরে কার্যত শশীকলা লাও পার্টি বাঁচাও ধাঁচের স্লোগান উঠতে শুরু করে৷ এর মধ্যেই শশীকলার স্বামী নটরাজন দিল্লিতে লবি শুরু করেন৷ মূলত কংগ্রেস এবং ইউপিএ শিবিরের সঙ্গেই তিনি যোগাযোগ রাখেন বলে জানা গিয়েছে৷ দলীয় সূত্রের খবর ওই খেলার পিছনে কংগ্রেসের এক শীর্ষ তামিল নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর হাত রয়েছে৷ সব মিলিয়ে এখন শশীর ক্ষমতায় আসা কেবল সময়ের অপেক্ষা৷
প্রশ্ন উঠছে কেন হঠাত্ এই পরিবর্তন? কারণ শশী আর পন্নিরসেলভম তো একই ‘লবির’ প্রতিনিধি৷ দু’জনেই শক্তিশালী ‘থেবর’ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি৷ পন্নিরকে ‘তুলে’ এনে পোয়েজ গার্ডেনে জয়ললিতার সামনে তুলে ধরেছিলেন ওই শশীকলাই৷ পিছনে ছিলেন শশীর ভাগ্নে দিনকরণ৷ এখন তিনি গুরুদক্ষিণা চাইছেন বলে মনে করা হচ্ছে৷
আবার জাল্লিকাট্টু আন্দোলনের পিছনেও শশীকলার হাত দেখতে পাচ্ছেন রাজানৈতিক মহল৷ মূলত পন্নিরসেলভমকে ‘ব্যর্থ’ প্রমাণ করতেই নাকি উস্কে দেওয়া হয় যুবকদের৷ আর নেতৃত্ব দেয় সেই থেবর সম্প্রদায়ের যুবারাই৷ আর পন্নির দ্বারস্থ হন প্রধানমন্ত্রীর৷ তবে এর মধ্যেই মাদ্রাজ হাইকোর্ট ফেরা আইন লঙ্ঘনের পুরনো মামলা থেকে শশীকলাকে অব্যাহতি দেয়নি৷ ১৯৯৫-৯৬ সালে দায়ের করা ওই মামলা প্রধান অভিযুক্ত শশী এবং তাঁর ভাগ্নে টি টি ভি দিনকরণ৷ সেই মামলার অগ্রগতি হলে কিন্তু ক্ষমতায় এলেও পদত্যাগ করতে হবে শশীকলাকে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.