সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জেল থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে ফেরার ধর্মগুরু ‘দেবী’ সাধ্বী জয়শ্রী গিরি। অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি, নারীপাচার চক্র চালানো ও কালো টাকা লেনদেনের অভিযোগে চলতি বছরই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সম্প্রতি জেল থেকে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য ১০ দিনের প্যারোলে মুক্তি পায় সে। কিন্তু জেল থেকে বেরোতেই ফেরার হয়ে গেল সাধ্বী। এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। পালানোর আগে অবশ্য দামী স্পা-যে যেতে ভোলেনি সাধ্বী। দেখেছে এস এস রাজামৌলির ‘বাহুবলী ২’। গত বুধবার সবরমতী সেন্ট্রাল জেলে তার ফিরে আসার কথা থাকলে এখন তার খোঁজে চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
২০১৭-র জানুয়ারিতে গুজরাটের বাঁশকথা জেলা থেকে স্বঘোষিত ধর্মগুরু সাধ্বী জয়শ্রী গিরি ভালই ব্যবসা ফেঁদেছিল। বাড়িতে আশ্রম খুলে শিষ্যদের কাছ থেকে দেদার সোনার গয়না, দামী শাড়ি, মদের বোতল ভেট নিচ্ছিল সাধ্বী। তার বিলাসবহুল জীবনযাপন দেখে অনেকেরই চোখ কপালে ওঠে। কিন্তু সুখ বেশিদিন স্থায়ী হল না। জানুয়ারিতে তার বাড়িতে হানা দেন ক্রাইম ব্রাঞ্চের আধিকারিকরা। ৮০ লক্ষ টাকার সোনার বাঁট, নগদ প্রায় দেড় কোটি টাকা উদ্ধার হয় সাধ্বীর বাড়ি থেকে। সেই সঙ্গে বিদেশি মদের বোতল, ৫০০টিরও বেশি শাড়ি, প্রায় ২০০টি চপ্পলও উদ্ধার করে পুলিশ। ড্রাই স্টেট হওয়ায় গুজরাটে মদ উৎপাদন, জমিয়ে রাখা, বিক্রি ও মদ্যপান নিষিদ্ধ। অথচ, পুলিশ জানতে পারে শিষ্যদের কাছ থেকে দামি বিদেশি মদের দাবি করত ‘গুরুমা’ সাধ্বী। সেই মদ বিতরণ করা হত বাড়ির ভিতর হাই-প্রোফাইল পার্টিতে।
পুলিশ সূত্রে খবর, বড়লোক বাড়ির ছেলেমেয়েদের ভুলিয়ে সেই পার্টিতে নিয়ে আসত সাধ্বীর অনুগামীরা। পার্টিতে মদ্যপান করিয়ে তাদের আপত্তিকর দৃশ্যের ছবি তুলে রাখা হত। তারপর চলত ব্ল্যাকমেল, এমনকী, কখনও তাঁদের অপহরণ করে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ চাইত সাধ্বীর অনুগামীরা। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ আরও জানতে পারে, গতবছরের নভেম্বরে ৫ কোটি টাকার সোনার বিস্কুট কিনে সাধ্বী তার বিল না মিটিয়েই চম্পট দেয়। শেষ পর্যন্ত পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। সবরমতী সেন্ট্রাল জেলে তাকে রাখা হয়। সম্প্রতি চারজন পুলিশকর্মীর নজরদারিতে তাকে ১০ দিনের প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়।
কিন্তু সূত্রের খবর, প্যারোলে মুক্তির পর নামীদামি শপিং মল, সিনেমা হল ও বার-এ ঘুরতে দেখা গিয়েছে সাধ্বীকে। সঙ্গে ছিল মোবাইল ফোন। ফোনে কাউকে প্যারোলে আরও কয়েকদিন মুক্তির দাবি জানাচ্ছিল সাধ্বী। সেই সময় তার সঙ্গে ছিল মাত্র এক পুলিশকর্মী। কিন্তু সুযোগ বুঝে ওই নিরাপত্তারক্ষীর তাঁর চোখে ধুলো দিয়ে চম্পট দেয় সাধ্বী। এই ঘটনায় পুলিশ সাধ্বীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ওই চার পুলিশকর্মী, সাধ্বীর আইনজীবী ও ওই আইনজীবীর স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে। তদন্তকারী অফিসার এল এস চৌধুরি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “পুলিশকর্মীদের গাফিলতি ছাড়া এই কাণ্ড ঘটতে পারে না। এখনও পর্যন্ত আমরা ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছি। সাধ্বী জয়শ্রী গিরিকে গ্রেপ্তার করতে চিরুনি তল্লাশি শুরু হয়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.