সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফের ইউরোপকে তোপ দাগলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে ভারত। যে কোনও একটি পক্ষ বেছে নেওয়ার জন্য ইউরোপীয় দেশগুলি বারবার ভারতকে চাপ দিয়ে এসেছে। কিন্তু নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সরেনি ভারত। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়ে দিলেন, নিজের স্বার্থ অনুযায়ী বিদেশনীতি প্রণয়ন করার ক্ষমতা আছে ভারতের। কিছু দেশ হয়তো ভারতের বিদেশনীতি পছন্দ করে না, কিন্তু তাতেও কূটনৈতিক দিক থেকে সমস্যায় পড়ছে না ভারত। বরং বিশ্বের অন্যান্য দেশের সমস্যার প্রতি ইউরোপীয় দেশগুলির দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো দরকার। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে একটি সভায় গিয়েছিলেন জয়শংকর (S Jaishankar)। সেখানেই এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে এই কথা বলেন তিনি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে ভারতের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। তিনি জিজ্ঞাসা করেন, বিশ্বের বিভিন্ন বিষয়ে ভারত এখন অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করছে। সেই পরিস্থিতিতে ‘দড়ির উপর হাঁটতে থাকা’ বিদেশনীতি গ্রহণ করে এগিয়ে যাওয়া কি সম্ভব? সেই প্রশ্নের উত্তরে জয়শংকর সাফ জানিয়ে দেন, আমরা দড়ির উপর হাঁটছি না। আমাদের বিদেশনীতি যথেষ্ট ভাল জায়গায় রয়েছে। জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে আমাদের বিদেশনীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।” ভারত-চিন (India-China Relation) দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়েও প্রশ্ন করা হয় তাঁকে। সেই প্রসঙ্গে জয়শংকর বলেন, “রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই চিনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। একটি যুদ্ধের ফলাফল অন্য কোনও দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করবে, সেটা হয় না। এইভাবে বিশ্ব রাজনীতি চলে না।”
প্রসঙ্গত, বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা, পুরনো বন্ধু ও সহযোগী রাশিয়াকে চটাতে চায় না ভারত। সেই কারণেই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর পরেও প্রকাশ্যে মস্কোর নিন্দা করেনি ভারত। কারণ রাশিয়া এবং চিনের মধ্যে অটুট বন্ধুত্বের সম্পর্ক। মস্কোর বিপক্ষে গিয়ে চিন-রাশিয়া অক্ষয় আরও মজবুত করতে চায় না সাউথ ব্লক।
ইউরোপ যেভাবে ভারত-চিন সম্পর্ককে ব্যাখ্যা করে, সেই দৃষ্টিভঙ্গি পালটানো দরকার বলেও দাবি করেছেন জয়শংকর। তিনি বলেছেন, “ইউরোপীয় দেশগুলি মনে করে, ইউরোপের সমস্যাই বিশ্বের সমস্যা। কিন্তু নানা প্রান্তে আরও অনেক জটিলতা রয়েছে, সেগুলি নিয়ে একটুও চিন্তিত নয় ইউরোপ। এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার।” তিনি আরও বলেছেন, “রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবস্থানের বিচারে ভারত-চিন সম্পর্ককে দেখছে ইউরোপ। তাদের বোঝা উচিৎ, ইউক্রেন সমস্যা শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই ভারত এবং চিনের সমস্যা ছিল।” আন্তর্জাতিক মঞ্চে চিনের বিরুদ্ধে অন্যান্য দেশগুলির সাহায্য চায় ভারত, সেই কথাও বলেছেন জয়শংকর।
রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণে অশোধিত তেল (Russian Oil) কিনেছে ভারত। তাতে প্রশ্ন উঠেছে, রাশিয়াকে আর্থিক ভাবে সাহায্য করছে ভারত। কিন্তু সেই দাবি খারিজ করে দিয়ে জয়শংকর বলেছেন, “তাহলে তো রাশিয়া থেকে গ্যাস কেনা মানে আর্থিক সহায়তা করা।” প্রসঙ্গত, অধিকাংশ ইউরোপীয় দেশ রুশ গ্যাসের উপর নির্ভরশীল। বিশ্বের পঞ্চম বা ষষ্ঠ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত। তাই কোন ক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত নিতে হবে, খুব ভাল করেই জানি আমরা। পৃথিবীতে কোনও দেশই নিজের স্বার্থ বাদ রেখে বিদেশনীতি প্রণয়ন করে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.