দেবশ্রী সিনহা: উরি হামলার পর যখন সারা বিশ্বেই পাকিস্তান কার্যত কোণঠাসা, সেই সময় একের পর এক দেশের সঙ্গে সামরিক বোঝাপড়া বাড়িয়ে চলেছে ভারত৷ ফ্রান্সের সঙ্গে রাফেলের চুক্তির পর এবার রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক চুক্তি করতে চলেছে নয়াদিল্লি৷
চলতি ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনেই এই প্রস্তাবিত চপার চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে পারেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ কূটনৈতিক সূত্রের খবর, ‘কমোভ-২২৬টি’ চপারের চুক্তি করতে চলেছে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে৷ ২০০টি কমোভ চপারের খরচ পড়বে প্রায় ১০০ কোটি ডলার৷ যার উৎপাদন হবে যৌথভাবে৷
প্রধানমন্ত্রী মোদির ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ মিশনের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হল কমোভের উৎপাদন৷ নতুন প্রযুক্তির দ্বারা তৈরি এই চপার ভারতীয় সেনাকে আক্ষরিক অর্থে মদত জোগানোর জন্যই৷
ভারতীয় সেনার ‘লাইফ লাইন’ চিতা ও চেতকের মতো ‘লাইট ওয়েট’ চপারের বিকল্প হিসাবেই দেখা হচ্ছে কমোভকে৷ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এক আধিকারিকের মতে, চিতা ও চেতক ক্রমে পুরনো হয়ে যাওয়ার ফলে মাঝে মধ্যেই যান্ত্রিক ত্রূটি দেখা গিয়েছে৷ এমনকী, সাম্প্রতিক অতীতে প্রায় ১২ জন পাইলট চিতা হেলিকপ্টারের ‘ক্র্যাশ’ করায় প্রাণ হারিয়েছেন৷ সেক্ষেত্রে ‘লাইট ওয়েট’ হেলিকপ্টার কমোভকে ক্রমশ চিতা ও চেতকের স্থানেই রাখা হবে বলে দাবি করছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সূত্র৷
যা আগামী দিনে ভারতীয় সেনার সঙ্গী হয়ে উঠবে৷ কে-২২৬টি অনায়াসেই ১৫০০ কিলোগ্রাম ওজনের সামগ্রীর পরিবহণের ক্ষমতা রাখে৷ এছাড়াও একইসঙ্গে সাতজন সৈন্য বা যাত্রীকে ২২০ কিলোমিটার বেগে নিয়ে যাওয়ায় সক্ষম কমোভ৷ এছাড়াও কমোভকে ব্যবহার করা যেতে পারে পরিদশর্নকারী হেলিকপ্টার হিসাবে৷
ভারত ও রুশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সম্পকের্র আরেক ধাপ এগিয়ে গিয়ে যাবতীয় চুক্তি হতে চলেছে৷ তারই মধ্যে কমোভ অন্যতম৷ গত বছর ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী মোদির রাশিয়া সফরের সময়ই কমোভের জন্য প্রাথমিক আলোচনা ও চুক্তি হয়েছিল রুশের সঙ্গে৷ তখনই প্রধানমন্ত্রী মোদি এই চুক্তিকে আক্ষরিক অর্থে প্রতিরক্ষায় সবার্ধিক সাহায্যকারী চুক্তি হিসাবে ব্যাখ্যা করেন৷
তবে ভারত কমোভ-সহ এখন রাশিয়ার দিকে তাকিয়ে ‘ফিফথ্ জেনারেশন’ যুদ্ধবিমান ও সামরিক সহায়তার বিভিন্ন সামগ্রীর দিকে৷ যার মধ্যে এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স মিসাইল সিস্টেম, এমআই ১৭ ভি-ফাইভ মিডিয়াম লিফ্ট ট্রান্সপোর্ট হেলিকপ্টার, বিএমপি, ডিজেল ইলেকট্রিক সাবমেরিনের ক্রয় ও নিউক্লিয়ার পাওয়ার সাবমেরিনের লিজের জন্য ইতিমধ্যেই কথাবার্তা শুরু হয়ে গিয়েছে৷
যে কোনও ধরনের সন্ত্রাস হামলার মোকাবিলা ও প্রতিরক্ষাকে আরও মজবুত করে গড়ে তুলতেই দীর্ঘদিনের কূটনেতিক মিত্র রাশিয়াকে পাশে পেল ভারত৷ এমনকি আগামী সময়ে ভারত-রাশিয়া যৌথ সেনা মহড়াও যে করা হবে তাও সুনিশ্চিত করা হয়েছে দুই কূটনৈতিক মিত্র রাষ্ট্রর তরফ থেকে৷
এদিকে, ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের জন্য সেজে উঠেছে গোয়ার তাজ এক্সোটিকা রিসর্ট৷ ব্রিকসের পাঁচ সদস্য দেশের বিশেষ স্থাপত্যের আদলে বালির মডেল তৈরি করছেন পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত বালুকাশিল্পী সুদর্শন পট্টনায়ক৷ এগুলি হল চিনের মহা প্রাচীর, রাশিয়ার সেইণ্ট বাসিল ক্যাথিড্রাল, ভারতের তাজমহল, ব্রাজিলের ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার এবং দক্ষিণ আফ্রিকার আফ্রিকানস ল্যাঙ্গুয়েজ মনুমেন্ট৷ এই কাজের জন্য সদস্য দেশগুলি থেকেই বালি আনা হয়েছে গোয়ায়৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.