স্টাফ রিপোর্টার: সপ্তম পে কমিশনে সায় দিয়েই দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা৷ ফলে নতুন মাসের শুরুতেই বেতন বৃদ্ধির সুখবর থাকছে দেশের ৪৭ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী ও ৫৩ লক্ষ অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর জন্য৷ সরকারি কর্মীদের মোট বেতন বাড়ছে ২৩.৫৫ শতাংশ৷ এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের জন্য এই বৃদ্ধির পরিমাণ ২৪ শতাংশ৷ এর জন্য সরকারি খাতের খরচ বাড়বে এক লক্ষ কোটির কিছু বেশি৷ বুধবার অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এক সাংবাদিক সম্মেলনে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের কথা জানিয়ে বলেন, সরকার সপ্তম পে কমিশনের সুপারিশ মেনে নিয়েছে৷ এর ফলে সরকারি কর্মীদের বেতন বেসরকারি ক্ষেত্রের চেয়ে অনেক বেশি হবে৷ সেজন্য, অভিযোগ আর প্রতিবাদের অবসর থাকবে না বলেই আশা করছেন অর্থমন্ত্রী৷ যদিও এই বেতন বৃদ্ধিতে মোটেই খুশি নন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা৷ তাঁদের অভিযোগ, অতীতের ছ’টি পে কমিশনেই এত কম বৃদ্ধির সুপারিশ ছিল না৷ ৭০ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম বেতন বৃদ্ধি৷
এই বছরের শুরু থেকেই পে কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করার জন্য সমস্ত মহল থেকে একটা অঘোষিত চাপ ছিলই কেন্দ্রের উপর৷ কারণ ষষ্ঠ পে কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে জানুয়ারি মাসেই৷ ক্যাবিনেট সচিব পি কে সিনহার নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশও জমা পড়েছে কিছুদিন আগেই৷ বুধবার সপ্তম পে কমিশনের প্রস্তাব বিষয়ে সহমত হল মন্ত্রিসভা৷ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের মোট বেতনের উপর ২৩.৫৫ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধি হবে৷ এর মধ্যে মূল বেতন বা বেসিকের উপর বেতন বৃদ্ধি হচ্ছে ১৪.২৭ শতাংশ৷ অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পেনশন বৃদ্ধি হচ্ছে ২৪ শতাংশ৷ নতুন হিসাবে একজন সরকারি কর্মীর ন্যূনতম বেতন সাত হাজার থেকে বেড়ে হচ্ছে ১৮ হাজার টাকা৷ ফলে একজন গ্রুপ ডি পর্যায়ের সবচেয়ে কম বেতনের সাফাই কর্মীও কমপক্ষে ১৮ হাজার টাকা বেতন পাবেন৷ উল্টোদিকে, ক্যাবিনেট সচিব পর্যায়ের কর্মীর বেতন ৯০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হচ্ছে আড়াই লক্ষ টাকা৷ প্রথম শ্রেণির অফিসারের ন্যূনতম বেতন হচ্ছে ৫৬,১০০ টাকা৷ ইতিমধ্যেই সরকারি কর্মীদের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ পদের বেতনের মধ্যে এই বিপুল ফারাকের কারণে প্রশ্ন উঠছে৷ প্রশ্ন উঠছে বেতন কাঠামোর মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য নিয়েও৷ তবে পে কমিশনের এবারের সুপারিশের তাৎপর্যপূর্ণ দিক হল, প্রচলিত পে ব্যান্ড ও গ্রেড পে ব্যবস্থার অবলুপ্তি হবে৷ নতুন যে ব্যবস্থা হবে, তা অনেক বেশি স্বচ্ছ হবে বলেই দাবি করা হয়েছে৷
ষষ্ঠ পে কমিশনের সুপারিশ ছিল ২০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির৷ কিন্তু তা কার্যকর করার সময় ৪০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির অনুমোদন দেয়৷ এবারের পে কমিশনে সরকারি কর্মচারী ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের মোট বেতন ও পেনশন ২৩.৫৫ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছিল৷ সেই সুপারিশ কার্যকর করার জন্য সরকারের উপর বার্ষিক ১.০২ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক চাপ পড়বে৷ যা দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ০.৭০ শতাংশ৷ আর্থিক চাপের প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী জেটলি বলেছেন, “এটি কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়৷ আগেই বাজেটে এর জন্য সংস্থান রাখা হয়েছে৷” তবে তিনি মেনে নিয়েছেন, মুদ্রাস্ফীতির হারে এর একটা চাপ আসবে৷ এবারের পে কমিশনের প্রস্তাব অনুমোদন হওয়ার পরও বেতন বৈষম্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সর্বস্তরের কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা৷ নিজেদের দাবি আদায়ে আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছে সংঘ পরিবারের শ্রমিক সংগঠন বিএমএস-সহ বেশ কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন৷
নতুন হারে বেতন কার্যকর হবে ২০১৬-র ১ জানুয়ারি থেকে৷ তবে বকেয়া এক সঙ্গে মিলবে কি না, আপাতত সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন কর্মীরা৷ গত মার্চে বাজেটেই এই খাতে রেল কর্মীদের জন্য ২৮,৪৫০ কোটি এবং অন্য কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের জন্য ৭৩,৬৫০ কোটি বরাদ্দ করা হয়৷ পে কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করতে বছরে এক লক্ষ কোটিরও বেশি টাকা প্রয়োজন হবে৷ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের ‘এক পদ এক পেনশন’-এর জন্যও প্রয়োজন হবে সত্তর হাজার কোটি৷ কংগ্রেস নেতা সি পি যোশী দলের তরফে বলেছেন, “পে কমিশনের সুপারিশ মেনে এক ধাক্কায় এতটা বেতন বৃদ্ধি করল কেন্দ্র৷ কিন্তু দেশে কোনও বিনিয়োগ নেই৷ কেন্দ্রের তরফে যে জিডিপির কথা বলা হচ্ছে তার কোনও সত্যতা নেই৷ কেন্দ্র দেশের অর্থনীতির সদর্থক প্রভাব দেখাতে তা মিথ্যে বানিয়ে বলছে৷ এই সিদ্ধান্তের ফলে ভুগতে হবে মধ্যবিত্তকেই৷” অন্য এক কংগ্রেস নেতার কথায়, জিএসটি বিল পাস করাতে ব্যস্ত কেন্দ্র৷ কিন্তু করের মধ্যে সাম্য এলে তা ভালর থেকে আম আদমির জন্য খারাপই করবে শেষ পর্যন্ত৷ এর ফলে বিলাস-করের হার কমবে৷ সুবিধা হবে ধনীদের৷ উল্টোদিকে, সাধারণ মানুষকে কম হারে যে কর দিতে হয়, তা বেড়ে যাবে অনেকটাই৷ পাশাপাশি বেতন বৃদ্ধির ফলে সমাজের এক শ্রেণির মানুষের হাতে বেশি অর্থ আসবে৷ সব মিলিয়ে বাজারদরও আরেক দফা বাড়বে বলে দাবি ওই কংগ্রেস নেতার৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.