সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতীয় ব্যাঙ্কিং পরিষেবায় এত বড় দুর্নীতি এর আগে হয়েছে কি না, মনে করতে পারছেন না অর্থনীতিবিদরা। বড়সড় প্রতারণামূলক লেনদেনের হদিশ মিলল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে। অভিযোগ, ওই ব্যাংকের মুম্বইয়ের একটি শাখাতেই ১১,৫০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা সম্পূর্ণ ভুয়ো ও প্রতারণামূলক। ব্যাংক বুধবারই এই প্রতারণার কথা প্রকাশ্যে এনেছে। এরপরেই ব্যাংকের শেয়ার দর প্রায় ১০ শতাংশ পড়ে গিয়েছে। নীরব মোদিকে নিয়ে এদিন কেন্দ্রকে আক্রমণ করেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। টুইটারে তিনি লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দাভোসে আলিঙ্গনরত অবস্থায় দেখা গিয়েছে অভিযুক্ত নীরব মোদিকে। অভিযুক্ত এ দেশের প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা নিয়ে মালিয়ার মতোই পালিয়ে গিয়েছে আর সিবিআই তাঁকে পালাতে দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন রাহুল।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অবশ্য ওই বিপুল অঙ্কের টাকা লেনদেনে জড়িত অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের নাম প্রকাশ করেনি। তবে তারা আর্থিক অপরাধ সংক্রান্ত তদন্তকারী সংস্থাকে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে জানিয়েছে। তদন্তও শুরু হয়েছে। সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, গত সপ্তাহে ব্যাংকেরই এক গ্রাহক ধনকুবের হীরে ব্যবসায়ী নীরব মোদির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে ইডি ও সিবিআই। আর্থিক দুর্নীতির মামলায় মোদির বাসভবনে হানা দেন ইডি কর্তারা। কুরলাতে তাঁর বাসভবনে, কালা ঘোড়া এলাকায় তাঁর গহনার দোকান, বান্দ্রা ও লোয়ার প্যারেলে তাঁর তিনটি সংস্থা, গুজরাটের সুরাটে, দিল্লির ডিফেন্স কলোনিতে, চাণক্যপুরিতে তাঁর শোরুমে আজ একযোগে অভিযান চালান ইডি অফিসাররা। সিবিআইয়ের দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে ইডি। দায়ের হয়েছে আর্থিক তছরুপের মামলা। ইডি সূত্রে খবর, তল্লাশি অভিযান আরও বেশ কিছুদিন চলবে। তবে যাঁর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, সেই নীরব মোদি কিন্তু বেপাত্তা। আশঙ্কা, বিজয় মালিয়ার মতো তিনিও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন সম্ভবত।
সূত্রের খবর, গত ৩১ জানুয়ারি ২৮০ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে সিবিআই নীরব মোদি, তাঁর স্ত্রী আমি মোদি, ভাই নিশাল মোদি ও কাকা গীতাঞ্জলি জেমস-এর কর্ণধার মেহুল চস্কির-সহ ব্যাঙ্কেরই দুই কর্তা গোকুলনাথ শেট্টি ও মনোজ খারাতের নামও জড়িয়েছে এই দুর্নীতির মামলায়। জানা যাচ্ছে, মোদি ও চস্কি হীরে, সোনা ও সোলার এক্সপোর্টের ব্যবসায় পরস্পরের সঙ্গী ছিল। ইতিমধ্যেই মোদির বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে ইডি। জানা যাচ্ছে, যে অঙ্কের অর্থ প্রতারণামূলক লেনদেন হয়েছে তা ওই ব্যাঙ্কের মোট বাজার মূলধন ৩৬ হাজার কোটি টাকার এক তৃতীয়াংশ। তাছাড়া, ২০১৭-র ডিসেম্বরের হিসাব অনুযায়ী বাজারে ছড়িয়ে থাকা ৪.৫ লক্ষ কোটি টাকা ঋণের ২.৫৫ শতাংশ এই অর্থ। ২০১৭ অর্থবছরে ব্যাংকের নিট মুনাফা ১,৩২৪ কোটি টাকার আট গুণ। শেয়ারের পতনে বিনিয়োগকারীরা এক দিনেই ৩,৮৪৪ কোটি টাকা খুইয়েছেন।
দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলি ইতিমধ্যেই বিপুল অর্থের অনাদায়ী ঋণ (এনপিএ) সমস্যায় জর্জরিত। পিএনবি’র ঘটনা সামগ্রিকভাবে পুরো ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট মহলের। পাশাপাশি, পিএনবির নতুন সিইও সুনীল মেহতার কাছেও বিষয়টি বড় চ্যালেঞ্জের। গতবছর মে মাসে তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। ব্যাংক বলেছে, এই লেনদেনগুলির জন্য ব্যাংকের কতটা ক্ষতি হবে বা দায় বাড়বে তা বোঝা যাবে লেনদেনগুলি খতিয়ে দেখার পর। তার আগে বিস্তারিত কিছু জানানো সম্ভব নয়। তবে শুধু পিএনবি নয়, এই ধরনের আর্থিক বেনিয়ম লক্ষ্য করা গিয়েছে আরও বেশ কয়েকটি ব্যাংকে। ২০১১-তে সর্বপ্রথম ব্যাংকিং সেক্টরে এই দুর্নীতি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের নজরে আসে। অর্থ মন্ত্রক গোটা বিষয়টির উপর নজর রাখছে। সিবিআই ও ইডি এক্ষেত্রে একযোগে তদন্ত চালাবে বলে সূত্রের খবর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.