Advertisement
Advertisement

Breaking News

Rohingya

কাজ চাইলে জানতে চায় জঙ্গি কি না! দিল্লির বস্‌তিতে আতঙ্কে দিন কাটছে রোহিঙ্গাদের

তাঁদের আরজি, গণতন্ত্র আসার আগে যেন মায়ানমারে না পাঠানো হয়।

Rohingya refugees in Delhi narrate horrific experience | Sangbad Pratidin
Published by: Sulaya Singha
  • Posted:August 22, 2022 9:57 pm
  • Updated:August 22, 2022 9:57 pm  

সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: সারি দিয়ে দশ বাই দশের কয়েকটা কামরা। যাকে কোনওভাবেই ঘর বলা যায় না। বাঁশের খুঁটিকে পিলার করে চট, কাপড়, কোথাও আবার এক টুকরো প্লাই বোর্ডের দেওয়াল। টিমটিম করে জ্বলছে ছোট্ট এলইডি লাইট। গলি, তস্য গলি। যেখানে পাশাপাশি দু’জন হাঁটতে পারেন না। ভনভন করছে মাছি। মাথার উপর ত্রিপলের আস্তরণ। এদিক ওদিক হয়ে যাওয়া ফুটে থেকে উঁকি দিচ্ছে সুয্যিমামা। আলো বলতে ওই টুকুই। ওঁদের জীবনের মতো বাসস্থান জুড়েও শুধুই অন্ধকার। কালিয়াকুঞ্জ মেট্রো স্টেশনের মাত্র কয়েকশো মিটার দূরের বস্তি দেখে বোঝার উপায় নেই, এটি দেশের রাজধানীর অংশ। গর্তে ভরা নিচু মাটির রাস্তা। সামান্য বৃষ্টিতেই যা জলে থইথই হয়ে যায়। মোট ৫২টি পরিবার। সদস্য ২৫৪ জন। ভিতরে মাস খানেক আগে বসানো একটি মাত্র টিউবকল। নেই কোনও শৌচাগার। অত্যন্ত কম কথায় এভাবেই তুলে ধরা যায় দিল্লির মদনপুর খাদরে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের ছবি।

গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় আবাসনমন্ত্রী হরদীপ সিং পুরির একটি টুইটে হঠাৎ করেই পালটে গিয়েছিল এখানকার ছবি। পুরি বলেছিলেন, বস্‌তি থেকে বক্করওয়ালা এলাকায় স্বল্পমূল্যের ফ্ল্যাটে পাঠানো হবে রোহিঙ্গাদের। সঙ্গে সঙ্গে দেশজুড়ে বিতর্ক। যাঁদের এখনও পর্যন্ত শরণার্থীর আখ্যা পর্যন্ত দেওয়া হয়নি, তাঁদের কীভাবে পাকাবাড়িতে পাঠানোর বন্দোবস্ত করা হচ্ছে? বিতর্ক এড়াতে দ্রুত আসরে নামে অমিত শাহের মন্ত্রক। আরও একবার স্পষ্ট করে দেওয়া হয় রোহিঙ্গারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী। তাঁদের কোনও ফ্ল্যাটে সরিয়ে দেওয়ার অনুমতি দেয়নি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সঙ্গে উল্লেখ করা হয়, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ম মেনে রাখা হবে ডিটেনশন ক্যাম্পে। দিল্লি সরকারকে সেই নির্দেশই দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

Rohinga

[আরও পড়ুন: আড়ালে থেকেই অন্যদের ইনস্টাগ্রাম স্টোরি দেখতে চান? জেনে নিন তিন সহজ উপায়]

কেন্দ্রীয় দুই মন্ত্রকের এই মতানৈক্য, এর ফলে কী ভাবছেন রোহিঙ্গারা? উত্তর পেতেই ঢুঁ মারা তাদের ক্যাম্পে। কথা বলতে রাজি হলেন, তবে শর্ত হল, রেকর্ড করা যাবে না তাঁদের বক্তব্য। তবেই মুখ খুললেন ‘জামিনদার’ মহম্মদ সেলিম। বলছিলেন, “আমাদের কাছে রাষ্ট্রসংঘের রিফিউজি কার্ড আছে। ভারত সরকারের কাছে আমাদের বায়োমেট্রিক নমুনাও রাখা। লং টার্ম ভিসা আছে। তাহলে কীভাবে আমরা অবৈধ হলাম? এটা ঠিক আমাদের কাছে পাসপোর্ট ছিল না। মায়ানমার তো আমাদের নাগরিকত্বই খারিজ করে দিয়েছিল। কী করে ওখানের ডকুমেন্ট থাকবে? দিনমজুরের কাজ করে দু’বেলা পেটে কিছু দিই। সকালে সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা, বিকেলে ৩টে থেকে ৫টা কারেন্ট থাকে না। জলের ব্যবস্থা নেই। ওই দেখুন একটা টিউবকল। দু’-তিন মাস আগে লাগিয়েছি। তাতে আড়াইশো জনের চলে। প্রাপ্তি একটাই বাচ্চারা স্কুলে পড়ছে। কেউ সাধ করে ভিটেমাটি ছেড়ে আসে না ভাইসাব। চোখের সামনে মা-বোনদের ধর্ষিতা হতে দেখেছি। বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিতে দেখেছি। রিফিউজির জীবন কী, যাঁদের কেটেছে, তাঁরাই জানে।” এক নিশ্বাসে কথাগুলি বলে গেলেন ৩৪ বছরের যুবক। পাশ থেকে আরেকজন বলে উঠলেন, “কাজ চাইতে গেলে যেই শোনে যে এই ক্যাম্পে থাকি, বলে তোরা তো আতঙ্কওয়াদি (সন্ত্রাসবাদী)। আমাদের দেখে মনে হচ্ছে?” কিছুতেই নিজের নাম বললেন না। শুধু বললেন, “নাম শুধু জামিনদারের জানুন, তাহলেই হবে।”

কথা প্রসঙ্গে উঠল হরদীপ সিং পুরির টুইটের বিষয়। “এই নোংরা জায়গার থেকে ওই ফ্ল্যাটে আমাদের পাঠালে তা তো স্বর্গ। কিন্তু আদৌ কি তা হবে? ওখানে পাঠালে তো আমাদের কাজ করতে বাইরে বেরোতে দেওয়া হবে না। ওটা তো আসলে ডিটেনশন ক্যাম্প। জেলে থাকার থেকে এই নোংরার মধ্যে খোলা আকাশের নিচে থাকা ভাল,” বলছিলেন সেলিম। এখনও ওদের চোখগুলো স্বপ্ন দেখে মায়ানমারে ফেরত যাওয়ার। কিন্তু দেশে গণতন্ত্র ফেরার পর। কেন্দ্রের কাছে তাঁদের আরজি কিছুতেই যেন তার আগে মায়ানমারে না পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরিচয় না দেওয়া পাশের সেই লোকটি ছলছলে চোখে বলছিলেন, “বিশ্বাস করুন, আমরা সন্ত্রাসবাদী না। আপনাদের দেশ। তাড়িয়ে দিতেই পারেন। কিন্তু তাড়ালে অন্য কোথাও পাঠান, মায়ানমারে না…।”

প্রাণের তাগিদে তাঁদের কষ্টের কথা শুনে হয়তো মন ভারী হয়ে যেতেই পারে বহু যুগ আগে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে প্রবীণদের। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে কাঁটাতার পার করার যন্ত্রণার সঙ্গে সঙ্গেই যে চলে আসছে সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদের তত্ত্বও। ক্যাম্পের ঠিক বাইরে মোষ চড়াচ্ছিলেন বছর ষাটেকের হীরা সিং। নিজেই জিজ্ঞেস করলেন, “কী বলছিল ওরা? সবক’টা বেইমান। আমাদের খায় আর পাকিস্তানের গুণগান করে। ১৪ তারিখ পাকিস্তানের পতাকাও তুলেছিল। বিভিন্ন এনজিও, সরকারের থেকে টাকা আসে। মদ, গাঁজা খেয়ে বেড়ায়। আর আমরা গাধার খাটনি খেটে মরছি।”

মত-ভিন্ন মত। তর্ক পালটা তর্ক। প্রাণের তাগিদে দেশ থেকে পালিয়ে এসে অতি কষ্টে জীবন কাটাচ্ছেন লাখ লাখ রোহিঙ্গা। তাঁদের পেটের জ্বালাকে হাতিয়ার করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিও করছে বিদেশি কিছু শক্তি। তবে ঘিঞ্জি ওই কামরাগুলোয় যেভাবে দিন কাটছে আট থেকে আশির, তা বর্ণনাতীত।

[আরও পড়ুন: ‘পঞ্চায়েত ভোটে পেশিশক্তি প্রয়োগ নয়’, সাংগঠনিক বৈঠকে দলীয় কর্মীদের কড়া বার্তা অভিষেকের]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement