নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: নদী কারও একার নয়। কোনও রাজ্য নদীর জলের অধিকার একা নিতে পারে না। কাবেরী নদীর জলবণ্টন মামলার রায়ে এমনই জানাল সুপ্রিম কোর্ট। একইসঙ্গে তামিলনাড়ুর কাবেরীর জলের ভাগ কমিয়ে দিয়ে বাড়ানো হল কর্নাটকের জলের পরিমাণ। বেঙ্গালুরুতে জলের চাহিদা বাড়ায় ১৪.৭৫ হাজার মিলিয়ন কিউবিক ফিট (টিএমসিএফটি) কাবেরীর জল অতিরিক্ত পেতে চলেছে কর্ণাটক। কর্ণাটকে বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে সুপ্রিম কোর্টের এই রায় রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। গত এক দশক ধরে কাবেরীর জলবণ্টন নিয়ে তামিলনাড়ু ও কর্ণাটকের বিবাদ চলছে। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ বলে, নদী কোনও নির্দিষ্ট রাজ্যের হয় না। তাই রাজ্যগুলিকে নদীর জল ভাগাভাগি করে নিতে হবে। এতদিন কর্নাটক তামিলনাড়ুকে প্রতি বছর কাবেরীর জল ছেড়ে দিত ১৯২ টিএমসিএফটি। এদিনের রায় অনুযায়ী এবার থেকে কর্ণাটকের সিদ্দারামাইয়া সরকারকে তামিলনাড়ুর জন্য ছাড়তে হবে ১৭৭.২৫ টিএমসিএফটি জল। কেরল ও পুদুচেরি কাবেরীর যা জল আগে পেত এখনও তাই পাবে। দক্ষিণ কর্ণাটকের কোদাগু এলাকা কাবেরী নদীর উৎস। তারপর তা বইছে তামিলনাড়ু, কেরল ও পুদুচেরিতে।
কর্নাটকের জনবহুল শহর বেঙ্গালুরুতে লোকসংখ্যা ও শিল্প-বাণিজ্য সংক্রান্ত কাজ বাড়ায় জলের চাহিদা অনেক বেড়েছে। সে কথা মাথায় রেখেই কর্ণাটক কাবেরীর জল বেশি পাবে বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। স্বাভাবিকভাবেই এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকার। অন্যদিকে এই রায়ে কিছুটা কোণঠাসা তামিলনাড়ুর পালানিস্বামী সরকার। যদিও রায় শুনে তামিলনাড়ু সরকারের তরফে এখনও কোনও মন্তব্য করা হয়নি। ২০০৭-এ কাবেরী জলবিতর্ক ট্রাইবুন্যাল জানিয়েছিল, লোয়ার কোলেরুন আনিকাট এলাকায় কাবেরী অববাহিকায় মোট জলের পরিমাণ ৭৪০ টিএমসিএফটি। ট্রাইবুন্যালের নির্দেশ অনুযায়ী, এর মধ্যে তামিলনাড়ুর ৪১৯ টিএমসিএফটি জল পাওয়া উচিত। কর্ণাটককে কাবেরীর বাঁধ খুলে দশটি ভাগে প্রতি বছর ১৯২ টিএমসিএফটি জল দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ট্রাইবুন্যাল। ট্রাইবুন্যালের এই রায়ের আগে তামিলনাড়ু ৫৮২ টিএমসিএফটি ও কর্নাটক ৪৬৫ টিএমসিএফটি কাবেরীর জল দাবি করেছিল। সেই রায়ে অখুশি হয়ে দুই রাজ্যই সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করেছিল। দীর্ঘ বিতর্কের পর সেই মামলারই রায় বের হল এদিন। নদীর জলের অধিকার নিয়ে দুই রাজ্যের কোন্দল প্রসঙ্গে এদিন রায় ঘোষণার সময় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা বলেন, নদী দেশের সম্পদ। কোনও রাজ্য তাকে নিজের বলে দাবি করতে পারে না। যেখানে ঘাটতি রয়েছে সেখানে জল শুধুমাত্র প্রয়োজনের জন্য ব্যবহার করা উচিত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.