সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: সুপ্রিম কোর্টে আর জি কর মামলার শুনানিতে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ রাজ্য। সিবিআই এবং অন্যান্য আইনজীবীদের তরফে নির্যাতিতার শরীরের নমুনা সংগ্রহ এবং প্রমাণ লোপাটের চেষ্টার অভিযোগে একাধিক যুক্তি দেওয়া হল। পালটা দিলেন রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বলও। শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিল, আগামী সোমবার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে ফের রিপোর্ট দেবে সিবিআই। মঙ্গলবার মামলার পরবর্তী শুনানি।
এদিন মুখবদ্ধ খামে সিবিআই তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট পেশ করেছে। তবে সেই রিপোর্ট নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। তিনি বললেন, “ওপেন কোর্টে কিছু মন্তব্য করতে চাই না। যাতে তদন্তে প্রভাব পড়ে। আগামী সোমবার তদন্তের আবার স্টেটাস রিপোর্ট দিন।” আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর ফের স্টেটাস রিপোর্ট দেবে সিবিআই। ১৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
যদিও এদিন এই মামলায় প্রাথমিক তদন্ত নিয়ে রাজ্যকে একাধিক প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করেছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, “এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে প্রথম ৫ ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা ৫ দিন পরে গিয়েছি। তখন অনেক কিছু পালটে গিয়েছে।” রাজ্যের বিপক্ষের একাধিক আইনজীবী এদিন ইঙ্গিত করেছেন, নির্যাতিতার শরীর এবং ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রেও প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা হতে পারে। আইনজীবীদের বক্তব্য, “নির্যাতিতার গোপনাঙ্গ থেকে সংগৃহীত নমুনা ঠিকমতো সংরক্ষণ করা হয়নি। তা ৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে রাখার কথা ছিল, তা হয়নি।” এতে প্রমাণ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছে সিবিআই। ফের ওই নমুনা পরীক্ষা করতে একাধিক কেন্দ্রীয় এজেন্সির কাছে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবীরা। একই সঙ্গে তাঁদের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, “কারা নমুনা সংগ্রহ করছেন সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।” এদিন প্রধান বিচারপতি জানতে চান, পুরো নমুনা সংগ্রহের ভিডিও ফুটেজ সিবিআইকে জমা দেওয়া হয়েছে কিনা। রাজ্যের তরফে জানানো হয়, সিবিআই সব ভিডিও ফুটেজ পেয়ে গিয়েছে। যদিও সিবিআইয়ের তরফে সলিসিটর জেনারেল জানান, মাত্র ২৭ মিনিটের চারটি ক্লিপ দেওয়া হয়েছে তাঁদের। অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ ভিডিও ফুটজে দেওয়া হয়নি।
এদিন ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন ওঠে শীর্ষ আদালতে। সিব্বলের কাছে মৃতদেহের ময়নাতদন্তের চালান দেখতে চান প্রধান বিচারপতি। সিব্বল জানান, এই মুহূর্তে তাঁর কাছে নেই। সলিসিটর জেনারেলের দাবি, যে নথিপত্র দেওয়া হয়েছিল সিবিআইকে, তাতে চালান ছিল না। ময়নাতদন্ত কি সঠিকভাবে হয়েছে? প্রশ্ন তোলেন আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি। সিবিআইয়ের তরফেও জানানো হয়, ময়নাতদন্ত কখন করা হয়েছে, সেই সময়ের উল্লেখ নেই। যদিও রাজ্যের আইনজীবীর যুক্তি, সব কিছু উল্লেখ রয়েছে রিপোর্টে। সেই সংশয়ের প্রেক্ষিতে রাজ্যের তরফে জানানো হয়, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সন্দেহ হলে তাঁর কাছে রিপোর্ট চাওয়া হোক।
তবে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ নমুনা সংগ্রহ নিয়ে রাজ্যকে তিরস্কারসূচক কোনও মন্তব্য করেনি। বস্তুত তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে সেভাবে ‘ওপেন কোর্টে’ কিছু বলতে চায়নি ডিভিশন বেঞ্চ। সিবিআই পরবর্তী স্টেটাস রিপোর্ট দেওয়ার পর এ নিয়ে আলোচনা হোক, চাইছে শীর্ষ আদালত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.