সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মাত্র ৮ বছরেই বিয়ে। স্বামী চাষি। কৃষিজীবী পরিবারে পড়াশোনার আলোচনা ছিল অপরাধের মতো। নববধূ ছাড়ার পাত্রী নন। তাঁকে যে ডাক্তার হতে হবে। স্বামীকে বুঝিয়ে আড়ালে পড়াশোনা। প্রতিবেশীদের থেকে এর জন্য কম গঞ্জনা শুনতে হয়নি। দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় দুর্দান্ত রেজাল্টের পর ওই বধূ অনেকের মুখ বন্ধ করে দেন। ডাক্তারি পড়াশোনার সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষা NEET-এ দেশের মধ্যে ২,৬১২ ব়্যাঙ্ক করেছেন রূপা যাদব। রাজস্থানের অতি সাধারণ পরিবারের প্রতিনিধি রূপা দেখিয়ে দিলেন লক্ষ্য স্থির থাকলে, কোনও কিছুই বাধা হতে পারে না।
রাজস্থানে বাল্য বিবাহ এখনও জাঁকিয়ে রয়েছে। ১০-এর কোঠার আগেই মেয়েদের বিয়ে দেওয়াটা যেন এরাজ্যের গ্রামাঞ্চলগুলিতে দস্তুর। জয়পুর জেলার কারেরি গ্রামের বাসিন্দা রূপা যাদবের একই অবস্থা হয়েছিল। রূপা তখন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। বয়স মেরেকেটে আট। ওই বয়সেই তার বিয়ের ব্যবস্থা হয়েছিল। পাত্রর বয়সও কম, ১২। শঙ্করলালের সঙ্গে ঘর করলেও, রূপা স্বপ্ন দেখা ছাড়েনি। ছেলেবেলা চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিল একরত্তি মেয়ে। শ্বশুরবাড়ির মনোভাব বুঝে পড়ার কথা বলতে ইতস্তত বোধ করছিল রূপা। শঙ্করলাল বিষয়টি বুঝতে পেরে স্ত্রীকে পড়ার ব্যাপারে উৎসাহ দেয়। শঙ্করের ভাই বৌদির জন্য বইপত্র এনে দেন। শ্বশুরবাড়ির লোকজন কোনওরকমে তা মানলেও আত্মীয় এবং আত্মীয়রা এই নিয়ে শঙ্করলালকে নানা কথা শোনাতে থাকে। এসব অগ্রাহ্য করেই রূপা পড়াশোনা চালায়। এর মধ্যেই স্বামীকে চাষের কাজও সাহায্য করেন রূপা। দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ৮৪ শতাংশ নম্বর পায় এই কৃতী ছাত্রী। বিজ্ঞানে ভাল নম্বর পেয়ে রূপার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন আরও গতি পায়। স্নাতক স্তরে পড়াশোনার পাশাপাশি NEET-এর প্রস্তুতি শুরু করে রূপা। কিন্তু মেডিক্যালে এন্ট্রাসের প্রস্তুতির জন্য বাড়ি থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে কোটায় পড়তে যাওয়া তার কাছে ছিল কঠিন ব্যাপার। শঙ্করলাল স্ত্রীকে অটোতে করে নিয়ে যেতেন কোটায়। প্রথম বছর ডাক্তারি প্রবেশিকায় পরীক্ষা দিলেও রূপার ভাল ব়্যাঙ্ক হয়নি। হাল না ছেড়ে আরও মন দিয়ে পড়াশোনা। যার সুবাদে এবার দেশের মধ্যে ২,৬১২ ব়্যাঙ্ক করেছেন এই কৃতী ছাত্রী। ৭২০-র মধ্যে রূপা পেয়েছেন ৬০৩।
এবার ডাক্তারি পড়াশোনা। ইচ্ছেপূরণের দিনে ২১ বছরের রূপা বলছেন, তাঁর পরিবার পাশে না দাঁড়ালে এই জায়গায় পৌঁছতে পারতেন না। তাঁকে আরও এগোতে হবে। তার মতো মেয়েরা পড়াশোনায় এগিয়ে আসলে সমাজের মঙ্গল বলে মনে করেন রূপা। কৃষিজীবী পরিবারের প্রতিনিধি রূপার এই উত্থানের কাহিনি এখন রাজস্থানের মুখে মুখে ফিরছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.