সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পেশার ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য চলছে। এই অভিযোগে রাষ্ট্রপতির কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করলেন রূপান্তরকামী নারী সানাভি পুন্নুস্বামী। অভিযোগের তির বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া ও অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের দিকে। অভিযোগ, অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও সানভি কেবিন ক্রু হিসেবে নিযুক্ত করছে না এয়ার ইন্ডিয়া। পর পর চারবার তিনি এয়ার ইন্ডিয়ার নিয়োগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। যতবার ইন্টারভিউয়ের মুখোমুখি হয়েছেন ততবার তাঁকে উৎসাহিত করা হয়েছে। বার বার চাকরি হয়েছে ভেবে তিনি আশায় বুক বেঁধেছেন। কিন্তু উত্তীর্ণ প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা বেরোতেই দেখা যায় অজানা কারণে নাম বাদ গিয়েছে সানাভির।
জানা গিয়েছে, বিমানে কেবিন ক্রু হিসেবে নিযুক্তির জন্য অভিজ্ঞতার দরকার। তাই এয়ার ইন্ডিয়ার চেন্নাই বিমান বন্দরে কাস্টমার সাপোর্ট এগজিকিউটিভের কাজে যোগ দেন। এই কাজে ১৩ মাসের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। এরপরেই তিনি লিঙ্গ পরিবর্তনের অস্ত্রোপচার করান।লিঙ্গ পরিবর্তনের পর তামিলনাড়ু গ্যাজেটে তাঁর নামও প্রকাশিত হয়। এদিকে পার বার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি পাচ্ছেন না সানাভি। মরিয়া হয়েই গত আগস্টে অসমারিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রককে চিঠি লিখে তাঁর নিযুক্ত না হওয়ার কারণ জানতে চান। একই সঙ্গে নিয়োগ প্রার্থীর তালিকায় রূপান্তরকামীদের জন্য একটি বিভাগ চালুরও আবেদন জানান। কিন্তু চিঠির উত্তরে জানানো হয়, সরকারের তরফে রূপান্তরকামীদের নিয়োগের জন্য কোনও বিভাগ তৈরিই হয়নি। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এখনও রূপান্তরকামীদের জন্য কোনও ব্যবস্থা নেই। ভবিষ্যতে যদি এই প্রক্রিয়া রূপ পায় তাহলে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো হবে।
যোগ্যতা থাকলেও দিনের পর দিন বিফল হয়ে শেষ পর্যন্ত দেশের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন সানাভি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের বিরুদ্ধেই লিঙ্গ বৈষম্যের অভিযোগ আনেন। গত ছয় নভেম্বর এই মামলার শুনানিতে সানাভির আবেদনের জবাব দেওয়ার নির্দেশিকা জারি করে। চার সপ্তাহের মধ্যে উত্তর দিতে বলা হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রককে। এরপর পাঁচ সপ্তাহ কেটে গেলেও কোনও উত্তর আসেনি মন্ত্রকের তরফে। এদিকে চাকরি না থাকায় কোনওরম উপার্জনও নেই সানাভির। এই অবস্থায় দিনের পর দিন সুপ্রিম কোর্টে চলতে থাকা মামলা চালিয়ে যাওয়া তাঁর পক্ষে অসম্ভব। কেননা আদালতে রেজিস্ট্রারের একটা খরচ রয়েছে। রয়েছে আইনজীবীর পারিশ্রমিক। যেখানে প্রতিদিনের খাবার জোগাড় করতেই তিনি হিমশিম খাচ্ছেন, সেখানে কী করে তিনি আইনি লড়াই লড়বেন। তাই গত আট ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকেই একটি চিঠি লেখেন। স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করে লেখা চিঠিতে নিজের অপারগতার কথা জানান। একই সঙ্গে তাঁর সঙ্গে হওয়া বৈষম্যমূলক আচরণের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। জানিয়ে দেন, দেশের সরকারের বদান্যতায় তাঁর মৃত্যু হলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করবেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.