সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মার্কিন উদ্বেগ উসকে দু’দিনের ভারত সফরে এসেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আজ অর্থাৎ শুক্রবার একটি ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করতে চলেছে নয়াদিল্লি ও মস্কো। ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনীর হাতে আসতে চলেছে অত্যাধুনিক এস-৪০০ মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম। শুধু তাই নয় নৌসেনার জন্য আরও ‘তলোয়ার ক্লাস’ ফ্রিগেটও রয়েছে দিল্লির নজরে। তবে জল ঘোলা হচ্ছে এস-৪০০ নিয়েই। হাতিয়ারটি ক্রয় করলে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে ভারতকে, ইতিমধ্যেই এমনটা হুঁশিয়ারি দিয়েছে আমেরিকা। কিন্তু সিদ্ধান্তে অনড় নয়াদিল্লি। এস-৪০০ কিনতে যেন একপ্রকার মরিয়া ভারত।
কী এই এস-৪০০?
আসুন জেনে নিই এই মারণ হাতিয়ারটির বিষয়ে। এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শত্রুপক্ষের পরমাণু বোমা বহনকারী যুদ্ধবিমান, স্টেলথ ফাইটার জেট, গোয়েন্দা বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন শুধু শনাক্তই করতে পারে না, ৩০ কিলোমিটার উচ্চতায় সেগুলো ধ্বংসও করতে পারে। এ ধরনের অস্ত্র যুক্ত হলে ভারতের সামরিক বাহিনী আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। এস-৪০০ ‘ট্রায়াম্ফ’ ক্ষেপণাস্ত্ররোধী ব্যবস্থাটি ৪০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অন্তত ৩০০টি লক্ষ্যবস্তুকে চিহ্নিত করতে সক্ষম৷ একইসঙ্গে তিন ডজন লক্ষ্যবস্তুকে ধ্বংসও করতে পারবে৷ অন্য ব়্যাডারে প্রায় ধরাই পড়ে না, এমন ‘স্টিল্থ’ এয়ারক্র্যাফটও এই সিস্টেমের ব়্যাডারে ধরা পড়ে যাবে৷ দেশের গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু কেন্দ্র ও সরকারি ভবনগুলি এর ফলে নিরাপদ হবে৷ পাক ও চিনা পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণের বিপদ থেকেও অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকবে ভারত৷ ২০০৭ সাল থেকেই এই অস্ত্র ব্যবহার করছে রুশ সেনা। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় রুশ সেনাঘাঁটির সুরক্ষায় মোতায়েন রয়েছে এস-৪০০ সিস্টেম।
এস-৪০০-এর মতোই মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম রয়েছে আমেরিকা ও ইজরায়েলের কাছে। তবুও রাশিয়ার সঙ্গে অস্ত্রচুক্তিতে কেন মরিয়া দিল্লি?
এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে রয়েছে ইতিহাসের পাতায়। ‘নন এলাইনমেন্ট মুভমেন্ট’ শুরু করলেও বরাবরই সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষেই ছিল নেহেরুর ভারত। এর মূল কারণ ছিল পাকিস্তানকে দেওয়া মার্কিন মদত। পাঁচের দশকেই বাগদাদ চুক্তিতে সই করে মার্কিন হাতিয়ার পেতে শুরু করে ইসলামবাদ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সোভিয়েতের দিকে ঝুঁকে পড়ে ভারত। সেই সম্পর্ক বজায় রাখেন ইন্দিরা গান্ধীও। প্রেসিডেন্ট ব্রেজনভের মদতেই ১৯৭১-এ পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে জয় হাসিল করে ভারত। সেই পুরোনো সম্পর্কই আরও মজবুত করতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। এছাড়াও, পড়শিদের বাগে আনতে প্রয়োজন এস-৪০০। পাকিস্তানের কাছে প্রায় ২০ স্কোয়াড্রন মার্কিন এফ-১৬ বিমান রয়েছে। চিনের থেকেও বিপদের আশঙ্কা দিন-দিন বাড়ছে। ফলে দেশের সুরক্ষায় এই হাতিয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও রয়েছে আরও একটি কারণ, আমেরিকা থেকে অস্ত্র কিনলে অনেক শর্ত মানতে হবে। রাশিয়ার সঙ্গে সেরকম কোনও সমস্যা নেই। মস্কো পাশে থাকলে ভারতকে ঘটতে সাহস পাবে না চিনও। বিশেষজ্ঞদের মতে, সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে মেজাজি ট্রাম্প নয়, বিচক্ষণ পুতিনেই ভরসা রাখছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।
[বিধ্বস্ত ইন্দোনেশিয়ায় ত্রাতা ভারতীয় বায়ুসেনা, শুরু অপারেশন ‘সমুদ্র মৈত্রী’]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.