নন্দিতা রায়, বেঙ্গালুরু: আগামী লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরলে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে বসার জন্য প্রস্তুত। খোলাখুলি জানিয়ে দিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। মঙ্গলবার ভোট-ব্যস্ত কর্নাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে রাহুলের সরাসরি আলাপচারিতার একটি উদ্যোগ নেয় প্রদেশ কংগ্রেস। সেখানে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদে বসতে রাজি কি না। উত্তরে রাহুল বলেন, “এটা নির্ভর করছে কংগ্রেস নির্বাচনে কতটা ভাল ফল করবে তার উপর। যদি কংগ্রেস সবচেয়ে বড় দল হিসাবে উঠে আসে তাহলে অবশ্যই। কেন নয়!”
বিজেপি আগামী লোকসভা নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে পারবে না বলে দাবি করে রাহুল বলেন, “পরের বার নরেন্দ্র মোদি যে আর প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, সে বিষয়ে তিনি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী।” বিজেপিকে হারানোর জন্য কংগ্রেস যে অন্য রাজনৈতিক দলগুলিকে নিয়ে মহাজোট করার চেষ্টা করবে এদিন সে ইঙ্গিত দেন তিনি। বলেছেন, “যদি কংগ্রেস প্ল্যাটফর্মের ভূমিকা পালন করে তাহলে বিজেপি আর ক্ষমতায় ফিরতে পারবে না।” অবশ্য এই প্রথম নয়, এর আগেও গত সেপ্টেম্বরে ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদেরও রাহুল জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদে বসতে তিনি প্রস্তুত।
[বিধানসভা ভোটে ডিজিটাল প্রচার, লাস্যময়ী রম্যার শরাঘাতে বিদ্ধ বেঙ্গালুরুর নয়া প্রজন্ম]
রাহুল গান্ধীর এই মন্তব্যকে এদিন বিজেপি অবশ্য ‘দিবাস্বপ্ন’’ বলে কটাক্ষ করেছে। বিজেপির কটাক্ষকে পাত্তা দিতে নারাজ কংগ্রেস। সকালে রাহুলের মন্তব্যের পরেই দুপুরে কর্নাটকের প্রদেশ কংগ্রেস দপ্তরে সাংবাদিক বৈঠকে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম রাহুলের মন্তব্যের সমর্থনে জোরাল সওয়াল করেন। তিনি বলেন, রাহুল গান্ধী দেশের প্রধানমন্ত্রী হোন তা কংগ্রেসের প্রত্যেক নেতা-কর্মীই চান। আগামী লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে তারা কি একাই সরকার গড়বে, সে প্রশ্নও উঠেছে এদিন। তবে এসব বিষয় নিয়ে এখনই ভাবার সময় হয়নি বলেও প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছেন চিদম্বরম। পাশাপাশি তিনি বলেছেন, বিজেপিকে হারাতে কংগ্রেস যে সবাইকে নিয়ে এগোতে চায়, তা তো রাহুল নিজেই জানিয়েছেন। ‘প্রধানমন্ত্রী হতে প্রস্তুত’, রাহুলের এই মন্তব্যে যাতে কেন্দ্র-বিরোধী অন্য রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে কংগ্রেসের দূরত্ব তৈরি না হয়, সে কথা মাথায় রেখেই চিদম্বরমের এই সাবধানী মন্তব্য বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। শুধু তিনিই নন, রাহুল নিজেও যে এই বিষয়টি মাথায় রেখেছেন তারও প্রমাণ মিলেছে। কংগ্রেস মঞ্চ হিসাবে থাকবে, এই মন্তব্য তাঁরই ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
[নাথু লা দিয়ে আবার শুরু মানস সরোবর যাত্রা, জানালেন সুষমা]
এদিকে, হাতে গোনা তিনদিন পরেই শনিবার কর্নাটকের বিধানসভা নির্বাচন। তাকে কেন্দ্র করে রাজ্যে প্রচারের পারদ তুঙ্গে। একদিকে, রাহুল যেমন দীর্ঘদিন ধরে কর্নাটকে একপ্রকার চরকি পাক কাটছেন, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও শেষ মুহূর্তের প্রচারে ঝড় তুলতে দিনে তিন থেকে চারটি জনসভা করছেন। রাজ্যে কংগ্রেস আবার ফিরতে চলেছে বলেই মনে করছেন স্থানীয় সংবাদমাধ্যম। রাজ্যের প্রথম শ্রেণির কন্নড় দৈনিক ‘প্রজাবাণী’-র সাংবাদিক রবির কথায়, “কংগ্রেসই আবার ক্ষমতায় আসতে চলেছে। মোদি ম্যাজিক দেশের অন্য রাজ্যের নির্বাচনে যেভাবে কাজ করেছে তা এখানে করবে না। বা করছে না, সে কথাও বলতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর জনসভাগুলিতে লোক হয়ত হচ্ছে, কিন্তু সেটা প্রধানমন্ত্রীকে একবার চোখে দেখার ভিড়। মানুষের মধ্যে মোদিকে নিয়ে কোনও উন্মাদনা নেই।” শুধু ‘প্রজাবাণী’ই নয়, বিভিন্ন কন্নড় চ্যানেলের প্রাক-ভোট সমীক্ষাতেও অন্ততপক্ষে পাঁচটি নামকরা সংস্থা কংগ্রেস শতাধিক আসন পেতে চলেছে বলে জানিয়েছে। ১০৩ থেকে শুরু করে ২২৪ আসন সম্পন্ন বিধানসভার ম্যাজিক ফিগার, ১১৩ পর্যন্ত তাতে রয়েছে। অন্যদিকে, এই পাঁচটি সংস্থা বিজেপির আসন সংখ্যা ৭০ থেকে ৮০-র মধ্যেই থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলেই জানিয়েছে। রাজ্যের আরেক দল জেডিএস, কিংমেকার হতে পারে বলে রাজনৈতিকমহলে শোনা যাচ্ছিল। তাদের আসন সংখ্যা ৩৫ থেকে ৪০-এর মধ্যেই থাকতে পারে বলেই প্রাক-ভোট সমীক্ষায় উঠে আসছে।
[সর্বোচ্চ সাফল্য, প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসার জবাবে বললেন ‘অ্যাংরি হনুমান’ সৃষ্টিকর্তা]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.