সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আচ্ছা ভাবুন তো, যাঁর কাছ থেকে চাকরির প্রস্তাব চান, যাঁর সহকর্মী কিংবা অধঃস্তন কর্মী হিসেবে সংস্থায় কাজ করতে চান, সেই ‘আইডল’ই যদি কখনও আপনাকে নিজে থেকে ফোন করে কাজের সুযোগ দেন, তাহলে? নিঃসন্দেহে স্বর্গীয় অনুভূতি! অনেকটা মেঘ না চাইতেই জল গোচের ব্যাপার। ঠিক এরকমটাই ঘটেছে মুম্বইয়ের যুবক শান্তনু নায়ডুর সঙ্গে। রতন টাটা নিজে ফোন করে তাঁকে চাকরির প্রস্তাব দিয়েছেন। ভাবছেন তো, এমনটাও কি সম্ভব?
মুম্বই নিবাসী বছর সাতাশের যুবক শান্তনু। প্রথিতযশা শিল্পপতি রতন টাটার সঙ্গে কে না কাজ করতে চায়! শান্তনুও চেয়েছিলেন। কিন্তু যেভাবে তাঁর এই স্বপ্ন সত্যি হল, তা কোনও রূপকথার গল্পকেও নির্ঘাত পিছনে ফেলে দেবে। অবাক হয়েছেন শান্তুনুর কাছের মানুষেরাও। সম্প্রতি ফেসবুকে ‘হিউম্যানস অফ বম্বে’-র পেজের দৌলতেই প্রকাশ্যে এসেছে শান্তনুর সেই স্বপ্ন সত্যি হওয়ার গল্প।
ঘটনার সূত্রপাত ২০১৪ সালে। সেসময়ে একবার রতন টাটার সঙ্গে দেখা হয় শান্তনুর। আজ, বছর পাঁচেক পর সেই শিল্পপতিই কী-ই না তাঁকে নিজে যেচে চাকরির প্রস্তাব দিলেন। একদিন অফিস থেকে বাড়ি ফেরার সময় রাস্তায় একটি কুকুরকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন শান্তনু। দেখেই বুঝতে পারেন, দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তার। ঘটনাটি শান্তনুকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। তখনই ভাবতে শুরু করেন, কীভাবে পথ-কুকুরদের এভাবে দুর্ঘটনা থেকে রোখা যায়। অনেক ভেবে, বন্ধু-বান্ধবদের সাহায্যে তিনি এক ধরনের কলার তৈরি করেন, যেখানে ‘রিফ্লেকটর’ বসানো থাকবে। এই কলারগুলিতে আলো পড়লেই তা জ্বলজ্বল করবে। ফলে রাতে গাড়ি চালাতে গিয়ে চালকরা দূর থেকেই তা দেখতে পাবেন। আর এতে সতর্কও হবেন। এতে ঘন ঘন পথ দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার হাত থেকে বাঁচবে কুকুরগুলো।
শান্তনুর এই কাজের কথা টাটা গ্রুপের নিউজ লেটারে প্রকাশিত হয়। যার সুবাদে অনেকেই তাঁর কাছে সেই কলার কিনতে চান। কিন্তু শান্তনুর পক্ষে অতগুলো কলার সরবরাহ করা সম্ভব ছিল না। ইতিমধ্যে শান্তনুর বাবা তাঁকে পরামর্শ দেন, রতন টাটাকে চিঠি লিখে সমস্যার কথা জানাতে। প্রথমে দ্বিধায় ভুগলেও পরে তাই করেন শান্তনু। মাস দু’য়েক পর রতন টাটার কাছ থেকে চিঠির জবাব পান শান্তনু। সেই চিঠিতে শান্তনুকে দেখা করতে বলেন টাটা। মুম্বইয়ে রতন টাটার অফিসে গেলে রতন টাটা তাঁকে জানান, তাঁর কাজ দেখে তিনি অভিভূত। এমনকী, নিজের পোষ্যদের সঙ্গেও শান্তনুর দেখা করিয়ে দেন টাটা। যাওয়ার সময় শান্তনু টাটাকে প্রতিশ্রুতি দেন, মাস্টার্সের পড়াশোনা করতে তিনি বিদেশে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু পরে অবশ্যই তিনি টাটা ট্রাস্টের হয়ে কাজ করবেন। দেশে ফেরার পরই টাটা তাঁকে ফোন করেন এবং বলেন, ‘‘আমার অফিসে অনেক কাজ পড়ে আছে। তুমি কি আমার সহকারী হিসাবে কাজ করতে চাও?’’ প্রথমে কী বলবেন, বুঝে উঠতে পারছিলেন না শান্তনু। কিন্তু আবেগ সামলে সম্মতি দিতে আর দেরি করেননি শান্তনু। গোটা ঘটনা ‘হিউম্যানস অফ বম্বে’র ফেসবুকে পেজে আসতেই নেট দুনিয়ায় ভাইরাল শান্তনু।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.