সুলয়া সিংহ: অযোধ্যানগরী। শ্রীরামচন্দ্রের জন্মভূমি। এই অযোধ্যাভূমেই তাঁর বড় হওয়া, জনকরাজার কন্যা সীতার সঙ্গে বিবাহ। সৎ মা কৈকেয়ির প্রতিজ্ঞা পূরণে ১৪ বছরের জন্য বনবাস, রাবণের সীতাহরণ এবং অবশেষে রাবণ বধ করে রামের অযোধ্যায় ফেরা। ভারতীয় সংস্কৃতিতে মহাকাব্য হিসেবেই পরিচয় এই রামায়ণের। স্কুল পাঠ্যে এর কোনও উল্লেখ নেই। তবে কি রামায়ণের চরিত্ররা শুধুই কাল্পনিক? ইতিহাসের সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই? দেশ-বিদেশে এনিয়ে অনেক বছর ধরেই চলছে নানা গবেষণা। অযোধ্যায় পা রেখে সেই উত্তরের খোঁজ শুরু করি আমরাও। দেখা যায়, অযোধ্যার অলিগলি থেকে রাজদালান- সর্বত্রই রামের ছাপ। যা বারবার প্রমাণ করতে চায় রামের অস্তিত্ব।
যেমন কনক ভবন। কথিত আছে, রাম মিথিলা থেকে সীতাকে বিয়ে করে আনার পর কৈকেয়ী এই ভবন তাঁদের উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। দশরথের দ্বিতীয় স্ত্রীর থেকে পাওয়া এই উপহার সাদরে গ্রহণ করেন তাঁরা। এখানেই দীর্ঘ ১২ বছর ছিলেন রাম ও সীতা। একইরকম ভাবে রামায়ণের অস্তিত্ব বহন করে নিয়ে চলেছে দশরথ মহল। কনক ভবন এবং নতুন রামমন্দিরের মাঝে অবস্থিত এই মহলেই ছিল রাজা দশরথের বাস। তিন স্ত্রী কৌশল্যা, কৈকেয়ী এবং সুমিত্রা সন্তানলাভের জন্য এখানেই করেছিলেন যজ্ঞ।
রামায়ণের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে মণি পর্বত, বৈদ্যকুন্ড, ভরতকুন্ডের মতো জায়গাগুলিও। কথিত আছে, সীতার ইচ্ছাপূরণ করতে রামের নির্দেশে উত্তর থেকে মণিমুক্তে ভরা এই পর্বত অযোধ্যায় এনেছিলেন গরুর। তাই এর নাম মণিপর্বত। রামমন্দির উদ্বোধনে এসে সেই মণি পর্বতে ভিড় জমাচ্ছেন ভক্তরা।
আবার লক্ষ্মণের জন্য গন্দোমাধন পর্বত নিয়ে যাওয়ার সময় এই অযোধ্যা অতিক্রম করেছিলেন হনুমান। তবে ভরত সে সময় হনুমানকে চিনতে না পেরে তীর চালান। যাতে আঘাত লেগে পড়ে যান হনুমান। তবে সত্যিটা জানার পর রামভক্ত হনুমানের কাছে ক্ষমা চান ভরত।
হনুমানগড়ি মন্দিরের সঙ্গেও জুড়ে রামায়ণ। শ্রীরাম অযোধ্যা থেকে বিদায় নেওয়ার সময় হনুমানকেই অযোধ্যা দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তাই আজও রামদর্শনের আগে হনুমান দর্শন করেন ভক্তরা।
রামায়ণ আর মহাভারতে বেদের উল্লেখ আছে। তাই মনে করা হয়, বেদের পরে রচিত হয় এই দুই মহাকাব্য। ৪০০ থেকে ১০০ খ্রীস্ট পূর্বাব্দে রামায়ণ রচিত হয়েছিল। যে কাহিনি ৪০০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দের। নয়া রামমন্দিরে বেলা ১২টার পর রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এর নেপথ্যেও রয়েছে বিজ্ঞান। মহর্ষি বাল্মীকির রামায়ণের প্রথম কাণ্ডের ১৮তম অধ্যায়ে উল্লেখ আছে, চৈত্রের নবম তিথিতে জন্মেছিলেন রাম। বেলা ১২টা থেকে ৪টের মধ্যে।
ইনন্টিটিউট অফ সায়েন্টিফিক রিসার্চ অন বেদ গবেষণা করে দেখে, ১০ জানুয়ারি ৫১১৪ খ্রীস্ট পূর্বাব্দে দুপুর ১২টা থেকে ১টা নাগাদ গ্রহ, নক্ষত্রের ঠিক এমনই অবস্থান ছিল। আর ভারতীয় লুনার ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, সেই দিনটি ছিল চৈত্রের শুক্লপক্ষের ৯ তারিখ। ভেবে দেখুন, প্রতি বছর এই সময়ই কিন্তু রামনবমী পালিত হয়।
তবে শুধু অযোধ্যা নয়। গোটা দেশের আনাচে-কানাচে এমনকী শ্রীলঙ্কাতেও গবেষকরা রামায়ণের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। যেমন রামসেতু। মার্কিন ভূতত্ববিদরা এনিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা চালাচ্ছেন। ভূতত্ববিদ চেলসি রোস জানান, কার্বন ডেটিং করে জানা যায় এই সেতুতে থাকা বালি ৪০০০ বছর পুরনো। আর কিছু পাথর ৭০০০ বছর পুরনো। অর্থাৎ রাবণ বধের সময়কালের। আবার শ্রীলঙ্কায় যেখানে বারণের মহল ছিল বলে উল্লেখ রয়েছে, সেখানে চারটি সুপ্রাচীন বিমান অবতরণের স্থান পাওয়া গিয়েছে। তবে কি পুস্পক রথ এখানেই নামত?
নানা গবেষণা উঠে আসছে রামায়ণের অস্তিত্ব। আবার রূপকথার আঁচও রয়েছে এই মহাকাব্যে। তাই ইতিহাস ও কল্পনায় মিলেমিশে গিয়েছে রামায়ণ। কিন্তু অযোধ্যা জানে, রাম তারই, সে রামেরই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.