সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ডেরা সাচা সওদা প্রধান স্বঘোষিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংকে দু’টি পৃথক ধর্ষণের মামলায় ২০ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আদালতের নির্দেশে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন আক্রান্তরা। আর সাহস ফিরে পেয়েছেন তাঁরা, যাঁদের উপর একসময় ছড়ি ঘোরাতেন এই ভণ্ড ‘পিতাজি’। কিন্তু এবার যে অভিযোগ প্রকাশ্যে এল তা জানলে আপনি চমকে উঠতে বাধ্য হবেন। রাম রহিম যাঁকে পালিতা কন্যা বলে দাবি করেন, সেই হানিপ্রীতের সঙ্গে নাকি তাঁর অস্বাভাবিক যৌন সম্পর্ক রয়েছে। এই অভিযোগ তুলেছেন খোদ হানিপ্রীতের স্বামী বিশ্বাস গুপ্তা।
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট মোতাবেক, হানিপ্রীতের (যাঁর আগে নাম ছিল প্রিয়াঙ্কা) সঙ্গে ১৯৯৯-তে সিরসায় ডেরারই এক ভক্ত বিশ্বাস গুপ্তার বিয়ে দেন গুরমিত রাম রহিম। কিন্তু বিয়ের পর একদিনের জন্যও নাকি শ্বশুরবাড়ি যাননি হানিপ্রীত। রাম রহিমকে ছাড়া কোথাও কোনওদিন দেখাও যায়নি তাঁকে। এমনকী জেলেও হানির সঙ্গেই থাকতে চেয়েছিল গুরমিত। ডেরা সূত্রের খবর, ব্যবসায়িক ফায়দার কারণেই রাম রহিম পুরোপুরি ছক কষেই বিশ্বাস গুপ্তার সঙ্গে হানিপ্রীতের বিয়ে দেয়। ২০০৯-এ হানিপ্রীত দাবি করেন, শ্বশুরবাড়ি থেকে তাঁর উপর পণের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। পালটা আদালতের দ্বারস্থ হয়ে স্ত্রীকে ডেরা থেকে ছাড়িয়ে আনতে চান গুপ্তাও। সেই সময় তাঁর সঙ্গে গুরমিতের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে।
পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্টে পিটিশন দায়ের করে গুপ্তা জানান, তাঁর স্ত্রী হানিপ্রীতের সঙ্গে রাম রহিমের অবৈধ যৌন সম্পর্ক রয়েছে। ২০১১-য় ইন্ডিয়া টিভিকে এক সাক্ষাৎকারে বিশ্বাস বলেন, ‘মে মাসে পিতাজির গোপন গুহায় আচমকা ঢুকে পড়ে আমি যা দেখতে পাই, সেটা আমার জীবনকে বদলে দিয়েছিল। এতটা শক আমি কখনও পাইনি। সেদিন গুহার দরজা কোনও কারণে বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিলেন রাম রহিম। আমি দেখি, আমার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় শুয়ে রয়েছেন গুরমিত। তাঁদের আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পেয়ে আমি সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ছিটকে সেখান থেকে বেরিয়ে যাই।’ বিশ্বাস আরও অভিযোগ করেন, সমাজের কাছে তিনি ও হানিপ্রীত বিবাহিত হলেও একদিনের জন্যও তাঁরা দাম্পত্যজীবনের সুখ পাননি। কারণ, গুরমিত কখনই হানিপ্রীতকে নিজের কাছছাড়া করতেন না। একা হানিপ্রীতকেই নয়, গুরমিতের আশ্রমের কয়েকশো অবিবাহিতা মহিলাদের মধ্যে কাউকেই পুরুষদের কাছে ঘেঁষতে দিতেন না রাম রহিম।
বিশ্বাসের দাবি, তিনি যখন গুরমিতের সঙ্গে কোনও হোটেলে দেখা করতে যেতেন, তখনও তাঁর স্ত্রী তাঁর সঙ্গে নয়, বরং গুরমিতের ঘরেই রাত কাটাতেন। পিতাজি’র উপর বিশ্বাসের অন্ধভক্ত ক্রমশ কমে আসে এই সব ঘটনার পর। এই সব ঘটনা এতদিন চাপাই থাকত হয়তো, যদি না গত শুক্রবার বিশেষ সিবিআই আদালতে সর্বক্ষণ ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত গুরমিতের সঙ্গে হানিপ্রীতকে দেখা না যেত! রাম রহিমের ছায়াসঙ্গী এই হানিপ্রীত। ডেরার ওয়েবসাইটে লেখা, হানিপ্রীত নাকি নিজে নিজেই পরিচালনা, নির্দেশনা, এডিটিং শিখেছেন। রাম রহিমকে নিয়ে ‘এমএসজি, দ্য ওয়ারিয়র লায়ন’ সিনেমার হাত ধরে পরিচালনায় হাতেখড়ি বহু চর্চিত হানিপ্রীতের। তিনি নাকি জেলেও রাম রহিমের সঙ্গে থাকতে চেয়ে আরজি জানিয়েছিলেন। তবে সেই আরজি খারিজ হয়ে গিয়েছে। শোনা যাচ্ছে, রাম রহিম জেলে থাকাকালীন ডেরার পরবর্তী প্রধান হতে পারেন এই হানিপ্রীতই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.