সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পৃথক দু’টি ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত গুরমিত রাম রহিমকে ধর্ষণের অভিযোগে ২০ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে বিশেষ সিবিআই আদালত। আদালতের নির্দেশের পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন নির্যাতিতার পরিবার। আর আদালতের নির্দেশের পর বিচারব্যবস্থার উপর আস্থা ফিরে পেয়েছেন এমন অনেক সাধারণ মানুষ, যাঁরা একসময় ‘প্রভাবশালী’ রাম রহিমের ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতেন।
রাম রহিমের ব্যভিচার নিয়ে এবার মুখ খুললেন তার এক প্রাক্তন দেহরক্ষী বিয়ান্ত সিং। বললেন, যে ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলাটি বিশেষ সিবিআই আদালতে চলছিল, সেটাই রাম রহিমের একমাত্র কুকীর্তি নয়। তাঁর অভিযোগ, ডেরা সাচা সওদা আশ্রমের সমস্ত সাধ্বীকেই একে একে নিজের শয্যায় টেনে এনেছিল পাষণ্ড রাম রহিম। কাউকে ধর্মের নামে ভয় দেখিয়ে, কাউকে ‘আমিই ঈশ্বর’ এই যুক্তি দেখিয়ে। নিজেদের পরিবার, আপনজনদের চাপে অনেক অবিবাহিতা মহিলাই ডেরার বিভিন্ন আশ্রমে থাকতে কার্যত বাধ্য হতেন। ওই মহিলাদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, ‘পিতাজির উপর আমাদের পরিবারের বড়রা অন্ধের মতো বিশ্বাস করেন। যদি কাউকে বলি যে রাম রহিম আমাদের উপর কী কী যৌন নির্যাতন চালিয়েছেন, কেউ বিশ্বাস করত না।’
ঠিক কী অভিযোগ তুলেছেন একদা রাম রহিমের ডান হাত বিয়ান্ত সিং? সম্প্রতি ১৮ মিনিটের একটি ভিডিওতে একদা সিরসায় নিয়োজিত রাম রহিমের বন্দুকধারী দেহরক্ষী জানিয়েছেন, কীভাবে প্রতিদিনই আশ্রমের এক একজন মহিলাকে রাম রহিমের ব্যক্তিগত কক্ষে যেতে হত। তাঁদের উপর নারকীয় অত্যাচার চালাত রাম রহিম। সাধ্বীরা বাধ্য হতেন মুখ বুজে থাকতে। দিনের পর দিন তাঁদের ধর্ষণ করত ওই ভণ্ড ধর্মগুরু। বিয়ান্ত সিং এও জানিয়েছেন, শুধু সিরসা নয়, বিদেশ সফরে গিয়েও রাম রহিমের নতুন নতুন মেয়ের সরকার পড়ত। ১৯৯৫-তে মাউন্ট আবুতে থাকাকলীন এক নাবালিকাকে ঘন্টার পর ঘন্টা ধর্ষণ করেছে এই স্বঘোষিত ধর্মগুরু। তিনি একা নন, রাম রহিমের অন্যান্য দেহরক্ষীরাও ওই নৃশংস ঘটনার সাক্ষী ছিলেন সেদিন। হোটেলের ঘর থেকে মাত্র ১৬ বছরের ওই মেয়ের চিৎকার ভেসে আসছিল, কিন্তু কোনও নিরাপত্তারক্ষীই টু শব্দ করতে পারেননি ভয়ে। সেই নাবালিকা আজ বড় হওয়ার পরেও সিরসায় ডেরার আশ্রমে কার্যত বন্দী।
শুধু আশ্রমের সাধ্বীদের নিয়ে নয়, রাম রহিমের পালিতা কন্যা হানিপ্রীতকে নিয়েও বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন ওই প্রাক্তন নিরাপত্তারক্ষী। তিনি বলেছেন, ‘হানিপ্রীত সর্বক্ষণ রাম রহিমের সঙ্গে ঘুরতেন। তিনি নামেই রাম রহিমের পালিতা কন্যা, কিন্তু ডেরায় সকলেই জানেন যে তিনিই পিতাজির সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ। পিতাজির ধনী শিষ্য বিশ্বাস গুপ্তার স্ত্রী হলেও রাম রহিমের সঙ্গেই তাঁকে দেখা যেত সবসময়।’ রাম রহিমের দুই আপন সন্তান থাকলেও ডেরার আশ্রমের সর্বত্র ঘোরার অধিকার ছিল একমাত্র হানিপ্রীতের। চোখের সামনে দিনের পর দিন হানিপ্রীত ও আশ্রমের অন্যান্য সাধ্বীর সঙ্গে রাম রহিমের অবাধ যৌনচার মেনে নিতে না পেরে আশ্রম থেকে পালাতে চান বিয়ান্ত সিং। কিন্তু গুরমিত সিংয়ের নজর এড়িয়ে আশ্রম ছেড়ে যাওয়ার সুযোগ কাক-পক্ষীরও ছিল না। তাঁর আরও অভিযোগ, ডেরার ভিতরে এক আলাদাই সাম্রাজ্য চালাতেন রাম রহিম। ডেরার কোনও পুরুষের বাবা হওয়ার ক্ষমতা ছিল না, কারণ, তাঁদের প্রত্যেকেরই অন্ডকোষ কেটে নেওয়া হত। একদিন ডাক্তার তাঁর অন্ডকোষ কাটতে আসবে শুনে প্রাণ বাজি রেখে আশ্রমের পাঁচিল টপকে পালিয়ে শহর ছাড়েন একদা বাবার ডান হাত বিয়ান্ত সিং। সম্প্রতি তিনি মুখ খুলেছেন একটি সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেলে। জানিয়েছেন, আশ্রমিকদের পানীয়তে নিজের শরীরের রক্ত মিশিয়ে খেতে বাধ্য করতেন ওই ভণ্ড ধর্ষক বাবা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.