নন্দিতা রায়: সংসদের উচ্চকক্ষ ‘কাউন্সিল অফ স্টেটস’ সংক্ষেপে রাজ্যসভার নির্বাচন পর্বকে ঘিরে এতদিন ধরে যে চাপান-উতোর চলছিল তা শনিবারই শেষ হতে চলেছে৷ দুশো পঁয়তাল্লিশটি আসন সম্বলিত রাজ্যসভায় প্রতি দু’বছর অন্তরই এক তৃতীয়াংশ সদস্য অবসর গ্রহণ করেন এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়৷ এই বছরেও রাজ্যসভায় জুন থেকে আগষ্ট মাসের মধ্যে পঞ্চান্নটি আসন খালি হচ্ছে৷ কেন্দ্রে নতুন সরকার আসার পর এতদিন পর্যন্ত রাজ্যসভাই ছিল বিরোধীদের সরকারপক্ষকে আক্রমণের প্রধান জায়গা৷ আগামী দিনেও সেই চিত্র বহাল থাকবে বলেই অনুমান৷ তবে, পরবর্তীকালে প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস বা শাসক দল বিজেপি নয়, আঞ্চলিক দলগুলির শক্তি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷
এতদিন পর্যন্ত ৬৪টি আসন নিয়ে কংগ্রেসই রাজসভার সবথেকে বড় রাজনৈতিক দল ছিল৷ এবারের নির্বাচনের পরে কংগ্রেস নিজেদের স্থান ধরে রাখতে পারলেও তাদের আসন সংখ্যা কমতে চলেছে৷ অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, ঝাড়খণ্ড ও উত্তরপ্রদেশ থেকে আসন হারাতে চলেছে তারা৷ রাজ্যসভায় আগামীদিনে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা হতে চলেছে ৬০টি৷ অন্যদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও প্রধান শাসক দল বিজেপির শক্তি বৃদ্ধি পেতে চলেছে এবারের নির্বাচনে৷ বর্তমানে ৪৯টি আসন বিজেপির হাতে থাকলেও নির্বাচনের পরে রাজ্যসভায় বিজেপির আসন সংখ্যা হতে চলেছে ৫৩টি৷
এর আগে রাজ্যসভা নির্বাচন নিয়ে কোনও দিন এত হইচই হয়নি৷ কিন্তু এবারের নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক পারদ দ্রুত চড়ছে৷ সচরাচর রাজসভা নির্বাচন বিধায়কদের ভোটদানের মধ্য দিয়ে নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হয়৷ সেখানে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা খুব একটা চোখে পড়ে না বললেই চলে৷ কিন্তু এবারে সাত রাজ্যের সাত আসন ও ১৪ জন প্রার্থীকে ঘিরে ধুন্ধুমার লড়াইয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷
উত্তরপ্রদেশে এক নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করে লড়াই জমিয়ে দিয়েছে বিজেপি৷ না হলে ১১টি আসনে সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতেন৷ বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষ নেতা কপিল সিবালকে জেতার জন্য মায়াবতীর বিএসপি ও অজিত সিংয়ের রাষ্ট্রীয় লোকদলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে৷ সমাজবাদী পার্টির সাত প্রার্থী, বিএসপির দু’জন ও বিজেপির একজন প্রার্থীর জয় নিয়ে সংশয় নেই৷ বাকি আসনটির জন্য লড়াই সিবালের সঙ্গে বিজেপি সমর্থিত নির্দল প্রার্থী প্রীতি মহাপাত্রের৷ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মায়াবতী তাদের প্রার্থীকে সমর্থন করবে বলে দাবি করা হলেও, ক্রস ভোটিংয়ের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷
মধ্যপ্রদেশে বিজেপির দু’জন প্রার্থীর জয় নিশ্চিত৷ তৃতীয় আসনে সরাসরি বিজেপি-কংগ্রেস লড়াই হবে৷ ঝাড়খণ্ডে লড়াই দু’টি আসনে৷ কংগ্রেস সমর্থিত ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার প্রার্থী বসন্ত সোরেনের কাজ কঠিন করে তুলেছে বিজেপি৷ তারা মহেশ পোদ্দারকে প্রার্থী করেছে৷ দ্বিতীয় আসনে জয়ের জন্য জেএমএম-এর ছ’টি ভোট কম রয়েছে৷ প্রথম আসনে বিজেপির মুখতার আববাস নাকভির জয় নিশ্চিত৷
উত্তরাখণ্ডে কয়েকদিন আগে তীব্র রাজনৈতিক টানাপোড়েন দেখা গিয়েছিল৷ এবার কংগ্রেসের প্রদীপ টামটাকে বেগ দিতে দু’জন নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বিজেপি৷ এখানে নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারে মায়াবতীর বিএসপি৷ শুধু উত্তরাখণ্ড নয়, উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশেও বিএসপির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে৷
কর্নাটকে ভোট নিয়ে ঘোড়া কেনাবেচার অভিযোগ উঠলেও নির্বাচন স্থগিত করতে রাজি হয়নি নির্বাচন কমিশন৷ এখানে তৃতীয় প্রার্থী দিয়ে চার আসনের লড়াই জমিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস৷ বিজেপি একটি আসন পাবে৷ কিন্তু জনতা দলের (সেকুলার) প্রার্থী বি এম ফারুখ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছেন৷ একইভাবে হরিয়ানায় বিজেপি সমর্থিত প্রার্থী সুভাষ চন্দ্রও লড়াইয়ে রয়েছেন৷ এখানে কংগ্রেসের কোনও প্রার্থী নেই৷ কংগ্রেসের হাতে থাকা ভোট পাওয়ার জন্য চন্দ্র নিজে রাজ্যের প্রাক্তন কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিং হুডার কাছে দরবার করেছেন বলেই সূত্রের খবর৷ কিন্তু কংগ্রেস বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীকে সাহায্য করবে, সে সম্ভাবনা নেই বললেই চলে৷ কিন্তু প্রদেশ নেতৃত্ব ন্যাশনাল লোক দলের প্রার্থীকেও সমর্থন করতে নারাজ৷
আবার, কংগ্রেস ও বিজেপির মতো বড় রাজনৈতিক দল নিজেদের খেয়ালখুশি মতো নেতাদের ভিন রাজ্য থেকে মনোনয়ন দিয়েছেন বলেও অভিযোগের অন্ত নেই৷ কোনও রাজ্য নেতা নয়, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরমকে মহারাষ্ট্র থেকে মনোনয়ন দেওয়ায় সেখানকার কংগ্রেসের হেভিওয়েট নেতা গুরুদাস কামাথ দলত্যাগ করেছেন৷ এবারের নির্বাচনে জিতে রাজ্যসভায় ফিরতে চাইছেন ছ’জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী৷ বেঙ্কাইয়া নায়ডু, মুখতার আববাস নাকভি, নির্মলা সীতারমন, চৌধুরি বীরেন্দ্র সিং, সুরেশ প্রভু ও পীযূষ গয়াল৷ পাশাপাশি, দলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র এম জে আকবরকেও বিজেপি রাজ্যসভায় ফেরাতে চাইছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.