মণিশংকর চৌধুরি,শিলং: সূর্য মাথার উপর থেকে যত নিম্নগামী হচ্ছিল, ততই নামছিল শিলংয়ের তাপমাত্রা। কিন্তু এমন মরশুমেও উত্তাপ বেড়েই চলেছিল সিবিআই দপ্তরের অন্দরে। একটি করে ঘণ্টা অতিবাহিত হচ্ছে, আর চড়ছে উদ্দীপনার পারদ। কী হচ্ছে ভিতরে? কী প্রশ্ন করা হচ্ছে রাজীব কুমারকে? বাইরে ঠায় দাঁড়ানো সাংবাদিকদের এটাই ছিল আলোচ্য বিষয়। প্রতি ঘণ্টাতেই কিছু না কিছু আপডেট এসে পৌঁছচ্ছিল। কিন্তু কখন শেষ হবে জেরা, তার সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছিল না। সন্ধে প্রায় সাতটা নাগাদ এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। শিলংয়ের সিবিআই দপ্তর থেকে বেরিয়ে এলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার।
তিনি বেরতেই রীতিমতো হুলুস্থুল পড়ে যায়। প্রত্যেকেই জানতে উৎসুক, ভিতরে এতক্ষণ কী কী হল? কিন্তু বেরিয়ে প্রথমেই জানা গেল যে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়নি। একদিনেই যে রাজীব কুমারের সঙ্গে আলোচনা শেষ হবে না, তা আগেই আন্দাজ করা গিয়েছিল। সেই আশঙ্কা সত্যি করেই তাঁর আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেব জানিয়ে দিলেন, আগামিকাল অর্থাৎ রবিবার ফের সিবিআইয়ের দপ্তরে হাজিরা দিতে হবে পুলিশ কমিশনারকে। তিনি আরও জানান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই তদন্ত করেছে সিবিআই। জেরায় সমস্ত প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার। আগামিদিনেও তদন্তে সহযোগিতা করবেন তিনি।
এদিকে রবিবার আবার শিলংয়ে কুণাল ঘোষকে জেরা করবেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা। আইনজীবীর পরামর্শ মেনে তিনিও তদন্তে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। শোনা যাচ্ছে, রবিবার সিবিআই দপ্তরে কুণাল ঘোষ ও রাজীব কুমারকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে পারেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
[ অসমে প্রধানমন্ত্রীকে ‘কালো পতাকা’, ইটানগরেও বিক্ষোভের সম্ভাবনা]
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চিটফান্ড কাণ্ডে সিবিআই আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলতে শিলংয়ে গিয়েছেন কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। সঙ্গে রয়েছেন তাঁর আইনজীবীও। শনিবার সকাল ১০ টা ৪০ মিনিট নাগাদ শিলংয়ে সিবিআই দপ্তরে হাজিরা দেন রাজীব কুমার। প্রায় আট ঘণ্টা ধরে চলে ম্যারাথন জেরা। সূত্রের খবর, মাঝে একবার খাওয়ার জন্য বাইরে বেরনোর কথা ছিল রাজীব কুমারের। তাঁকে নিতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দার সংস্থার দপ্তর পৌঁছেও গিয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের দুই আধিকারিক জাভেদ শামিম ও মুরলীধর শর্মা। কিন্তু, জেরার মাঝপথে আর বেরোতে চাননি কলকাতা পুলিশ কমিশনার। শিলংয়ে সিবিআই দপ্তরের ক্যাফেটেরিয়ায় হালকা স্ন্যাক্স ও চা খান। জেরা চলাকালীন পুলিশ কমিশনারের আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেব পাশের ঘরে বসেছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তবে আইনজীবীর কথায়, “সবটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ ২০১৭ সাল থেকেই সিবিআইয়ের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন রাজীব কুমার। কিন্তু আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখেই মোদি সরকার ইচ্ছাকৃতভাবেই সিবিআইকে দিয়ে উত্তেজনা তৈরি করছে।”
কিন্তু, জেরায় কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে কী প্রশ্ন করলেন সিবিআই আধিকারিকরা? প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি কেউ। তবে শোনা যাচ্ছে, সারদা কাণ্ড সংক্রান্ত কী কী নথি কলকাতা পুলিশের কাছে আছে? কাশ্মীর পুলিশ সুদীপ্ত সেনের যে নথি বাজেয়াপ্ত করেছিল, তা সিবিআইকে হস্তান্তর করা হয়েছে কিনা? সুদীপ্ত সেনের পেনড্রাইভ কাকে দেওয়া হয়েছিল? জেরায় এমনই নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে রাজীব কুমারকে। তদন্তকারীদের বক্তব্য, এ রাজ্যের বহু রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল রাজীব কুমারের। তাঁদের বাঁচাতেই চিটফান্ড কাণ্ডের বহু তথ্য-প্রমাণ বিকৃতও করেছেন পুলিশ কমিশনার। ত্রিপুরা ক্যাসেলে যেখানে তাঁর থাকার ব্য়বস্থা করা হয়েছে, আজ রাতেও সেখানেই থাকছেন তিনি। আগামিকাল সকাল দশটা থেকে সাড়ে দশটার মধ্যে ফের শিলংয়ে সিবিআই দপ্তরে হাজিরা দিতে হবে রাজীব কুমারকে।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.