সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অল্পের জন্য নিজে আমলা হতে পারেননি। সেই আক্ষেপ মেটাতে নতুন প্রজন্মকে সরকারি চাকরির পাঠ দিচ্ছেন এক শিক্ষক দম্পতি। এক্কেবারে বিনামূল্যে। পাণ্ডববর্জিত এলাকার পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের মধ্যে পড়াশোনার নেশা তাঁরা জাগিয়ে দিয়েছেন।
[হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে মোদির ‘আপত্তিকর’ ছবি, গ্রেপ্তার ২]
বিহারে সুপার থার্টি ক্লাসের ধাঁচে রাজস্থানের অচেনা জায়গায় তাঁরা নিঃশব্দে লড়াই চালাচ্ছেন। দৌসা জেলায় বিনামূল্যে কোচিং করাচ্ছেন এই শিক্ষক দম্পতি। অভাবী পরিবারের সন্তানদের মধ্যে যাদের সম্ভাবনা আছে, তাদের খুঁজে বের করেন বিনোদ মীনা এবং সীমা মীনা। শিক্ষক দম্পতির পরশে শুরু হয়েছে বেশি কিছু ছেলেমেয়ের স্বপ্ন ছোঁয়ার দৌড়। ৬০ জন পড়ুয়াকে বাছাই করে এরা নিখরচায় চাকরির পরীক্ষার জন্য তালিম দেন। এর জন্য প্রতি মাসে তাদের পকেট থেকে যায় প্রায় ২০ হাজার টাকা। যে অর্থে কোচিং ক্লাসের ভাড়া, বইপত্র এবং পড়াশোনার সরঞ্জাম কেনেন বিনোদ-সীমা। কেন এমন নেশা চাপল? এর জবাবে বিনোদ বলছেন, তিনি আইএএসের ইন্টারভিউ পর্যন্ত তিনবার গিয়েছিলেন। কিন্তু সফল হতে পারেননি। তখন বিনোদ ঠিক করেন যারা অর্থের অভাবে চাকরির পরীক্ষা দিতে পারছেন না তাদের পাশে থাকবেন। নিজের জ্ঞান ভাগ করে নেবেন। এই ভাবনা থেকেই ফ্রিতে কোচিং ক্লাস শুরু হয়।
[আধুনিক সমাজকে ‘আলবিদা’ জানিয়ে কুড়ি বছর গাছের কোটরে জিগর ওরাওঁ]
বিনোদের সহযোদ্ধা তথা সহধর্মিণী সীমার কথায়, শুরুর দিকে প্রায়ই তাদের নানা বাঁকা কথা শুনতে হত। অনেকেই বলতেন ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়ে কী লাভ হবে? তবে তাদের এখন ভ্রান্ত ধারণা ভেঙেছে। বেশ কিছু প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ‘সুপার ৩০’ এবং ‘সুপার ৬০’ পড়ুয়াদের বেছে নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষক দম্পতির এই উদ্যোগে পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেকেই। কোচিং সেন্টারে ফ্রিতে পড়ান চন্দ্রপ্রকাশ শর্মা নামের এক শিক্ষক। তিনি রোজ এক ঘণ্টা করে পড়ান। প্রতিশ্রুতিবানদের পড়িয়ে চন্দ্রপ্রকাশ মনে করেন সমাজকে বোধহয় কিছু ফিরিয়ে দেওয়া গেল।
গত কয়েক বছরে বিনোদ-সীমার এই কোচিং ক্লাস থেকে অন্তত ৩০০ পড়ুয়া এখন প্রতিষ্ঠিত। যাদের মধ্যে কেউ কেউ এখন ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসে কর্মরত। তাদেরই একজন নীতু সিং। মাত্র ছাব্বিশে পদস্থ চাকরি পেয়েছেন রাজস্থানের দৌসার এই কন্যা। নীতু বলছেন বিনোদ স্যাররা খুব সহজভাবে তাদের পড়িয়েছেন। জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার ক্ষেত্রে এই কোচিং সেন্টারের অবদান ভোলার নয়। রবিবার ছাড়া প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে পড়ানো হয় দৌসায়। শিক্ষক দিবসে ওই দম্পতি বুঝিয়ে দিয়েছেন শিক্ষাকে বহন নয়, এভাবেই বাহন করে নিতে হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.