সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লাগাতার বর্ষণের জেরে হাতেগোনা দু-এক রাজ্য নয়, বানভাসি দেশের অনেক রাজ্যই। পরিস্থিতি সবচেয়ে উদ্বেগজনক মহারাষ্ট্রের পশ্চিমাংশ, কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ওড়িশায়। বন্যার আশঙ্কা রয়েছে কর্ণাটক, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, উত্তরপ্রদেশেও। ডুবুডুবু অবস্থা তামিলনাড়ুর একটি বড় অংশেরও। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার ক্যাবিনেট সচিব পি কে সিনহা উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠকে অংশ নেন যেখানে মহারাষ্ট্র, কেরল, কর্ণাটক-সহ দেশের বন্যা-কবলিত রাজ্যগুলির পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখা হয়েছে। এই সব রাজ্যকে অবিলম্বে সাহায্য দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বর্ষণ-বন্যায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত মহারাষ্ট্র। ঘরবাড়ি জলের তলায় চলে যাওয়ায় ইতিমধ্যেই পুণেতে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অন্তত ১.৩২ লক্ষ মানুষকে। বন্যার জল ঢুকে গিয়েছে পশ্চিম মহারাষ্ট্রের সাংলির জেলখানাতেও। হাঁটুজলে আটকে পড়া ৩৭০ জন কয়েদিকে তড়িঘড়ি দোতলায় ব্যারাকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে এডিজি (কারা) সুনীল রামানন্দ জানিয়েছেন, জেলের একতলা এখনও জলের তলায়। যদিও এখনই জেলবন্দিদের অন্যত্র স্থানান্তরিত করার প্রয়োজন নেই। বন্যায় গত সপ্তাহে পশ্চিম মহারাষ্ট্র থেকে ১৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আগামী কয়েকদিন আরও ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস আকাশপথে বন্যাবিধ্বস্ত সাংলি এবং কোলাপুরের পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন। বৃষ্টির জেরে গত কয়েকদিনে একাধিক ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। প্রয়োজনে বদলে দেওয়া হচ্ছে যাত্রাপথও। যদিও বৃহস্পতিবার কর্ণাটক সরকার কৃষ্ণা নদীস্থিত আলমাত্তি বাঁধ থেকে পাঁচ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়তে রাজি হয়েছে। যার ফলে পশ্চিম মহারাষ্ট্রের বন্যাবিধ্বস্ত এলাকা থেকে জলস্তর অনেকটাই নেমে আসবে।
শুধু মহারাষ্ট্র নয়, পরিস্থিতি সুবিধার নয় দক্ষিণী রাজ্য কেরলেও। দিন কয়েকের অবিরাম বর্ষণ, ঝোড়ো হাওয়া এবং মাটি ধসে যাওয়ার ঘটনায় জেরবার এই রাজ্য। সেখানকার চারটি জেলায় (ইদ্দুকি, মলপ্পুরম, কোঝিকোড় এবং ওয়েনাড়) ইতিমধ্যেই ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করেছে আবহাওয়া দপ্তর। এই সব জেলায় নদীগুলির জলস্তর ক্রমশ বাড়ছে। রবিবার বেলা ৩টে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে কোচি বিমানবন্দর। শুক্রবার সমস্ত স্কুলগুলিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত ২২ হাজারেরও বেশি বানভাসী মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। রাজ্য সরকারের তৈরি ২১৫টি অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা।
Kerala Government declares holiday for the day, for all schools across the state. #KeralaRain pic.twitter.com/mhnwC3CNvc
— ANI (@ANI) August 9, 2019
ফুঁসছে মণিমালা, মীনাচল, চালিয়ার, ভালাপত্তনম, পেম্বার মতো নদীগুলি। ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’ জারি হয়েছে ত্রিশূর, পালাক্কড়, কান্নুর, কাসারগড়ে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মলপ্পুরম। সেখানে বাড়ির উপর গাছ ভেঙে পড়ায় প্রাণ হারিয়েছেন বছর পঞ্চাশের এক ব্যক্তি। ভেঙে পড়েছে দশটি বাড়িও। কান্নুরের চাপ্পামালায় ভূমিধসের খবরও মিলেছে। রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণে ইতিমধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। অন্যদিকে, প্রচণ্ড বৃষ্টিতে তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাত্তোর স্টেশনে পার্সেল ভবন ভেঙে পড়ায় মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। আহত তিন জন। ভবানী নদী ও তার লাগোয়া এলাকাগুলি বানভাসি হয়ে পড়েছে।
বর্ষণে বেহাল দশা অন্ধ্রপ্রদেশেরও। টানা বৃষ্টির জেরে সেখানকার শ্রীকাকুলাম জেলায় ভমসাধারা নদীর জলস্তর ক্রমশ বাড়তে থাকায় (জলস্তর বাড়তে বাড়তে ১.১১ লক্ষ কিউসেক ছাপিয়ে গিয়েছে) বৃহস্পতিবার সকালেই জারি করা হয়েছে তৃতীয় পর্যায়ের সতর্কতা। বানভাসি এলাকায় আটকে পড়া মানুষজনকে উদ্ধার করতে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৬০ সদস্যের একটি দল ছাড়াও সেখানে পাঠানো হয়েছে এসডিআরএফ-এর ৩৫ সদস্যের আরও একটি দলকে। গুজরাটের পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক।
অন্যদিকে, ওড়িশার বন্যা পরিস্থিতিও ভয়াবহ। বন্যায় রাস্তার একটি অংশ ডুবে যাওয়ায় আটকে পড়েছিলেন এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ও দুই শিশু-সহ মোট পাঁচ জন। তাঁদের উদ্ধার করেছেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর জওয়ানরা। বন্যায় খৈরাপুতের মাঝিগুড়া ও কেন্দুগুড়া বাকি রাজ্য থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গজপতি জেলায় কাশীনগর থেকে কিদিগান পর্যন্ত সড়কটি বন্যায়
সম্পূর্ণ ভেসে গিয়েছে। ওই এলাকা থেকে সাড়ে ছ’শোরও বেশি মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়াহয়েছে। এছাড়াও উত্তরপ্রদেশ সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, গত কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টিতে রাজ্যে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ছত্তিশগড়েও বৃষ্টির জেরে পাঁচ জেলায় (রায়পুর, মহাসমুন্দ, গরিয়াবান্দ, ধামতারি ও বালোদাবাজার) বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.