সুব্রত বিশ্বাস: ‘চেন পুল’ কথাটা এবার রেলের খাতা থেকে বিদায় নিতে চলেছে। সূচনা হতে চলেছে ‘বাটন পুশ’। দুটি সিস্টেম একই কাজের জন্য ব্যবহার হলেও তাদের কর্মপদ্ধতির বিস্তর ফারাক। প্রথমটির চেয়ে দ্বিতীয়টি অতিমাত্রায় সুবিধাজনক হওয়ায় এখন সেটি বাস্তবায়নের পথে। ট্রেন থেকে এবার পুলিং চেন বিদায় নিচ্ছে। আসছে সুবিধাজনক পুশ বাটন। এতকাল কামরায় ঝুলত একটি চেন। মাথায় হ্যান্ডেল। যা ধরে টানলেই ভ্যাকুয়াম ডেসট্রয় করে স্বয়ংক্রিয় ব্রেক চাকায় লেগে যায়। ট্রেন থমকে যায়। এই সিস্টেম এখন পুরনো আমলের। এখন নিউম্যাটিক ব্রেক। সুইচ মারলে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে ব্রেক চেপে ধরবে চাকাকে। এর পর নির্ধারিত কোচের উপর একটি লাইট জ্বলবে-নিভবে।
আপৎকালীন ট্রেন দাঁড় করানোর এই পদ্ধতির বদলে বাড়তি বহু সুবিধা রয়েছে বলে রেলকর্তাদের মত। চেন পুলিংয়ে ট্রেন দাঁড়ালে তা নির্ধারণ করে পুনরায় চালু করতে বেশ সময় লাগত। উদাহরণ দিতে গিয়ে তাঁরা বলেন, চেন পুলিং হলে চালক ও গার্ড দু’দিকে নেমে পরীক্ষা করতে করতে এগোতেন। কোন বগির ‘ক্লাপেট ভালভ’ বেরিয়ে এসেছে। সেই বিষয়টাতে জানা যেত কোন কোচে এই চেন পুলিং হয়েছে। এর পর সেই ভালভ ঘা দিয়ে সোজা করা হত। এর পর ভ্যাকুয়াম তৈরি হয়ে ব্রেক ছেড়ে দিত। এই পদ্ধতিতে ট্রেন সচল করতে বেশ সময় লাগত। এই চেন পুলিং জঙ্গল অধ্যুষিত ও ব্রিজের উপর হলে তার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে পড়ে। এখন বাটন পুশ সিস্টেমে কোচের বাইরের লাইট জ্বলবে। যা দেখে নির্ধারিত কোচে অপারেশন স্টাফ এসে চাবি ঘুরিয়েই ব্রেক সরিয়ে দিয়ে ট্রেন সচল করতে পারবেন। এজন্য সময় খুব কম লাগবে।
এই আপৎকালীন ট্রেন স্টপ করতে পদ্ধতি বদলের কাজ প্রথম সাবারবান ট্রেনে শুরু হয়েছে। লোকাল ট্রেনগুলিতে এই বটম পুশ সিস্টেম চালু হওয়ার পর দূরপাল্লার ট্রেনগুলিতেও এই বদলের পরিকল্পনা নিয়েছে রেল। তবে সেই ট্রেনে এই ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে কতটা ভাল ফল পাওয়া যাবে তাতেই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রেল কর্তাদের কথায়, সাবারবান ‘ইন্টিগ্রেটেড’ শুধু যাওয়া আর আসার কাজ করে। এই ট্রেনের যাত্রীরা নিত্যযাত্রী। ট্রেনের সংখ্যাও অনেক। ফলে সেই ট্রেনে চেন পুলিং খুব একটা হয় না। তবে দূরপাল্লার ট্রেনে, সময়মতো না পৌঁছলে সতীর্থরা চেন টানে। দুষ্কৃতী হানায় আতঙ্কিত যাত্রীরা চেন টানে। বিহার ও ঝাড়খণ্ড এলাকায় এমন বহু যাত্রী আছেন যাঁরা গ্রামের কাছ দিয়ে ট্রেন গেলে সেখানেও চেন টেনে নেমে পড়েন। যা পুশ করতে আরও সুবিধা হবে। একথা রেলকর্তারা মানলেও বলেন, ট্রেন সচল করতে সময় কম লাগবে। এটাই বাড়তি পাওনা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.