নন্দিতা রায়: উৎসবের মরশুম শুরুর আগেই ঘুরপথে ভাড়া বাড়িয়ে রেলের ভাঁড়ার ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলমন্ত্রক৷ বুধবার রেলের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছিল৷ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিমানের মতই ‘ফ্লেক্সি ফেয়ার’ চালু করা হচ্ছে রাজধানী, দুরন্ত, শতাব্দীর মতো প্রিমিয়াম ট্রেনগুলিতে৷ এতে চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভাড়া বাড়বে৷ আজ, শুক্রবার থেকেই এই সমস্ত প্রিমিয়াম ট্রেনের টিকিট কাটতে এই নতুন হারে ভাড়া দিতে হবে৷ সেখানে মাত্র প্রথম দশ শতাংশ আসনের টিকিট বর্তমান ভাড়ায় কাটা গেলেও তারপরে থেকেই প্রতি দশ শতাংশ আসন পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাড়াও বাড়বে দশ শতাংশ হারে৷ যা পঞ্চাশ শতাংশ পর্যন্ত নেওয়া যাবে৷ অর্থাত্ এই সমস্ত প্রিমিয়াম ট্রেনের এসি ফার্স্ট ক্লাস ও এক্সিকিউটিভ চেয়ার কার ছাড়া বাকি সব শ্রেণিতেই বর্ধিত মূল্যে ভাড়া নেওয়া হবে৷ এবার থেকে এই ট্রেনগুলিতে এসি টু-টিয়ারের ক্ষেত্রে পঞ্চাশ শতাংশ টিকিট দেড়গুণ দামে বিক্রি করবে রেল৷ আবার এসি থ্রি-টায়ারের ক্ষেত্রে ষাট শতাংশ টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে বর্তমান ভাড়ার চল্লিশ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হবে৷
রেলের পক্ষ থেকে এই নতুন ভাড়া বৃদ্ধির ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের উপর চাপ ফেলবে না বলেই সওয়াল করা হচ্ছে৷ তবে, রাজধানী ও দুরন্তর মতো ট্রেনের এসি থ্রি-টিয়ারে বহু সাধারণ মানুষ যাত্রা করেন৷ মূলত সময় বাঁচানোর জন্যই তাঁরা এই ট্রেনগুলিকে বেছে নেন৷ রেলের এই নতুন নিয়মের ফলে যে সমস্ত যাত্রীরা সফরের কয়েকদিন আগে টিকিট কাটেন তাদের জন্য তো বটেই এমনকী, যারা আড়াই মাস আগেও টিকিট কাটবেন তাদেরকে এই নতুন নিয়মে ব্যয় বহন করতে হবে৷ বর্তমানে যাত্রার নব্বই দিন আগে রেলের সংরক্ষিত আসনের টিকিট কাটা যায়৷ প্রিমিয়াম ট্রেনগুলির ক্ষেত্রে তিরিশ থেকে চল্লিশ শতাংশ আসনই প্রথম দিনই কয়েক মিনিটের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়৷ এক্ষেত্রে আগে থেকে কাটা বিমানের টিকিটের সঙ্গে রেলের টিকিটের দামের ফারাক হবে খুবই সামান্য৷ রেল বোর্ডের সদস্য (ট্রাফিক) মহম্মদ জামশেদ বলেছেন, “এটা পরীক্ষামুলক ভাবে করা হচ্ছে৷ অন্য সিদ্ধান্তের মতোই তিন-চার মাস পরে এবিষয়ে রিভিউ করা হবে৷ এর মধ্যে রেলের পাঁচশো কোটি টাকার মত আয় হতে পারে৷” তবে রেলমন্ত্রক সূত্রের খবর, এটা কথার কথা৷ এই ব্যবস্থা চালু করার পরে তা তুলে নেওয়ার সম্ভাবনা একেবারে নেই বললেই চলে৷ কারণ, সরকারের বড়সড় মহল থেকেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ রেলমন্ত্রকের মতে, এই সমস্ত প্রিমিয়াম ট্রেনের টিকিট দালালরা চড়া দামে বিক্রি করে৷ নতুন ব্যবস্থার ফলে তা কমবে৷
কেন্দ্রীয় সরকারের রেলভাড়া বাড়ানোর এই সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক বিরোধীরা প্রবল সমালোচনা করেছেন৷ কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দিকে আঙুল তুলেছেন৷ বৃহস্পতিবার টুইটারে রাহুল লিখেছেন, “ট্রেনের গতি বাড়ুক না বাড়ুক, মোদিজি ভাড়ার গতি বাড়িয়ে দিয়েছেন৷ মোদিজির মডেল হল সাধারণ মানুষকে লুটে নিয়ে কয়েকজন বন্ধু শিল্পপতিকে ছাড় দেওয়া৷ প্রাক্তন রেল রাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রেলের ভাড়া বৃদ্ধিকে মানুষের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায়ের চেষ্টা বলে সমালোচনা করেছেন৷ অধীর বলেন, “এটা তো এক্সটরশন, রেলও মানুষের গলা কেটে সুযোগের সদ্বব্যবহার করতে চাইছে৷ এটা সম্পূর্ণ জনবিরোধী সিদ্ধান্ত৷ এইভাবে রেলের আর্থিক অবস্থা ফেরানো যাবে না৷ বিমান ও ট্রেনকে এক করে দিলে মুশকিল৷ সরকারও রাখব, আবার মনোপলিও চালাব- এটা একেবারেই ঠিক নয়৷”
রেল ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করেছে বামেরাও৷ সিপিএমের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাধারণ মানুষ যখন মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, কম মজুরি পাওয়ার মতো সমস্যায় জেরবার রয়েছে তখনই সরকারের এই সিদ্ধান্ত আরও বোঝা হয়ে উঠবে৷ এসি থ্রি-টায়ার, টু-টায়ার এমনকী নন-এসি দুরন্ত ক্ষেত্রেও এই নতুন নিয়ম চালু করা হলেও ট্রেনের সবথেকে বিলাসবহুল শ্রেণি এসি ফার্স্ট ক্লাসের ক্ষেত্রে ভাড়া না বাড়িয়ে সরকার আদতে বড়লোকদেরই সুবিধা দিতে চেয়েছে, অভিযোগ করেছে বামেরা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.