সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ঝিকঝিক আওয়াজ। চলন্ত ট্রেন। আর মাটির ভাঁড়ে ধোঁয়া ওঠা গরম চা। ট্রেন সফর মানেই এই অভিজ্ঞতার আস্বাদন ছিল মাস্ট। বাঁকা-চোরা-সামান্য টাল খাওয়া সেই ভাঁড়ের চা অনেককাল আগে বিদায় নিয়েছে। পারফেকশনের চাহিদাতে গ্রাহকদের পছন্দমাফিক প্ল্যাটফর্মে, রেলের টি ভেন্ডারদের কাছে জায়গা হয়েছে কাগজের কাপ এবং প্লাস্টিক কাপের। এমনকী রেলের প্যান্ট্রিতে ক্যাটারার কর্মীরাও ওই কাপই ব্যবহার করেন। কিন্তু, এবার সেই অভ্যাস বদলাতে চলেছে। কাগজ আর প্লাস্টিকের কাপকে প্রতিযোগিতায় হারিয়ে রেলের ভাঁড়াড়ে সদর্পে রি-এন্ট্রি নিতে চলেছে মাটির ভাঁড়। ফলে চলন্ত ট্রেনে মাটির ভাঁড়ে গরম চা খাওয়ার নস্ট্যালজিয়াও সমহিমায় ফিরছে রেলযাত্রীদের সফরে।
ঘোষণাটি করেছে রেল দপ্তর। এ বিষয়ে একটি সার্কুলারও জারি করেছে তারা। যেখানে ক্যাটরারদের উদ্দেশে রেলমন্ত্রী পীযুষ গোয়েল সাফ নির্দেশ দিয়েছেন, বারণসী ও রায়বরেলি স্টেশনে এবং সংলগ্ন এলাকায় যাত্রীদের চা-কফির মতো গরম পানীয় দিতে হবে মাটির ভাঁড়ে। এমনকী ওই দুই স্টেশনে যাত্রীদের খাবারও দেওয়া হবে পোড়া মাটির থালা-বাটিতেই।
এতে যেমন রেলের পরিবেশবান্ধব, সবুজপন্থী ভাবমূর্তি বজায় থাকবে, তেমনিই অক্সিজেন পাবে স্থানীয় মৃৎশিল্পীরাও। অর্থাৎ সবদিক থেকেই লাভজনক ব্যবস্থা। আপাতত রেল মাত্র দু’টি স্টেশনে নতুন নিয়ম চালু করলেও ভবিষ্যতে দেশের অন্য বড় স্টেশনগুলিতেও রেল এই ব্যবস্থা করবে বলে আশা করছেন মৃৎশিল্পীরা। যদিও রেলের তরফে ওই সার্কুলারে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। অবশ্য এই ব্যবস্থা ১৫ বছর আগে লালুই করেছিলেন। ২০০৪ সালে লালুপ্রসাদ যাদব রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মৃৎশিল্পীদের সহায়তার জন্য ট্রেনে পরিবেশ বান্ধব মাটির ভাঁড়ে চা দেওয়ার ব্যবস্থা প্রথম চালু করেন। সরকারের উদ্যোগ সত্ত্বেও সেই চেষ্টা বেশিদিন টেকেনি। প্রথমত বাজেটে ভাঁড়ের জন্য আলাদা বরাদ্দ হয়নি। অন্যদিকে চা বিক্রেতা এবং যাত্রীরা বাঁকা-টেরা চায়ের কাপের অভিযোগ জানানোয় কিছুদিনের বন্ধ হয়ে যায় ট্রেনে মাটির ভাঁড়ে চা দেওয়ার ব্যবস্থা।
যাত্রীদের চা-কফি দেওয়ার জন্য কাগজ আর প্লাস্টিকের কাপের বোলবোলাও উত্তরোত্তর বেড়েছে গত কয়েক বছরেই। এদিকে, কাগজ এবং প্লাস্টিক কোনওটাই পরিবেশ বান্ধব নয়। ফলে ট্রেনে ওই দুই কাপের ব্যবহার রেলের সবুজপন্থী ভাবমূর্তিতে প্রভাব ফেলছিল। নয়া সিদ্ধান্তে সেই ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে সাহায্য করবে রেলকে।
অবশ্য এ নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু হয়েছিল গত বছর ডিসেম্বর মাস থেকেই। রেলের কাছে প্রস্তাবটি রেখেছিল খাদি গ্রামোদ্য়োগ কমিশন (কেভিআইসি)। বারাণসী এবং রায়বরেলি এই দুই এলাকায় মৃৎশিল্পীদের জন্য উপার্জনের ব্যবস্থা করতে বলে রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলকে চিঠি লিখেছিলেন কেভিআইসি চেয়ারম্যান ভি কে সাক্সেনা। তারই প্রেক্ষিতে এই ব্যবস্থা। সাক্সেনা জানিয়েছেন, বারাণসী এবং রায়বরেলিতে মৃৎশিল্পীদের ইতিমধ্যেই বৈদ্য়ুতিক কুমোরের চাকা বা পটারস হুইল দিয়েছেন তাঁরা। কুমোর ক্ষমতায়ন যোজনার অধীনে ওই চাকা দেওয়া হচ্ছে সরকারের তরফেই। যা ব্যবহার করে দিনে ৬০০টি মাটির ভাঁড় বানাতে পারবেন কুমোররা। যা আগে ১০০টির বেশি কোনওভাবেই সম্ভব ছিল না। ফলে এখন ওই দুই স্টেশনের চাহিদার যথাযথ জোগান দিতে দৈনিক আড়াই লক্ষ ভাঁড় সহজেই তৈরি করতে পারবেন শিল্পীরা।
বারাণসী, যা কিনা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কেন্দ্র, সেখানে ৩০০টি এমন চাকা দেওয়া হয়েছে মৃৎশিল্পীদের। আরও ১০০০টি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছ। অন্যদিকে রায়বরেলি, যা কি না ইউপিএ চেয়ার পার্সন সোনিয়া গান্ধীর কেন্দ্র, সেখানে মৃৎশিল্পীদের ১০০টি বৈদ্য়ুতিক কুমোরের চাকা দেওয়া হয়েছে। আরও ৭০০টি দেওয়া বাকি রয়েছে। সবমিলিয়ে কেভিআইসি দেশজুড়ে মোট ৬০০০ বৈদ্য়ুতিক কুমোরের চাকা দেবে মৃৎশিল্পীদের। অনুমান রেলের অন্য স্টেশনগুলিতেও অদূর ভবিষ্যতে তাদের উদ্যোগে মাটির ভাঁড় ও পাত্রে খাবার দেওয়া হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.