ফাইল ছবি
শুভজিৎ মণ্ডল: তিন রাজ্যের ফলাফলের পর অনেকেই বলতে শুরু করেছেন নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন রাহুল। মোদির বিরুদ্ধে বিরোধীদের মুখ হিসেবেও দলের সভাপতিকেই প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন কংগ্রেস নেতারা। তিন রাজ্যের জয়ের পর কংগ্রেস নেতারা ২০১৯-এর লড়াইকে মোদি বনাম রাহুলের লড়াই হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টার ত্রুটি করছেন না। কিন্তু কংগ্রেস সভাপতি কি সত্যিই যোগ্য নেতা হয়ে উঠলেন, নাকি তিন রাজ্যের জয় নেহাতই বিজেপির অকর্মণ্যতার ফল। তিন রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের প্রশ্নে কিন্তু রাহুলের সিদ্ধান্তহীনতা আরও একবার সামনে চলে এল।
ভোটে জয়ের পর রাহুলের কাছে দুটি কঠিন পরীক্ষা ছিল।
১. পরস্পর বিরোধী নেতাদের ইগোর লড়াই ভুলিয়ে এক ছাতার তলায় আনা। ভোট পরবর্তীকালে দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ন্ত্রণ করা।২. চেনা মুখের বাইরে গিয়ে কংগ্রেসে তরুণ ব্রিগেডের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানে শচীন পাইলট এবং জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার মতো সুযোগ্য দুজন নেতাও ছিলেন রাহুলের হাতে। কংগ্রেস সভাপতির কাছে সুবর্ণ সুযোগ ছিল কংগ্রেসের চিরাচারিত হাই কম্যান্ড কালচার থেকে বেরিয়ে নেতা কর্মীদের মতামত প্রতিষ্ঠা করা।
কিন্তু রাহুল তা পারলেন কি?
তিন রাজ্যে ভোটের আগে পর্যন্ত নবীন প্রবীণের মেলবন্ধন হোক, নেতাদের ইমেজ এবং ইগোকে নিয়ন্ত্রণ করে সবাইকে এক ছাতার তলায় আনার কাজে কংগ্রেস সভাপতিকে লেটার মার্কস দিতেই হবে। মধ্যপ্রদেশে যেভাবে দিগ্বিজয় সিংয়ের মতো বর্ষীয়ান নেতাকে নেপথ্যে পাঠিয়ে সিন্ধিয়া-কমলনাথদের এক ছাতার তলায় এনে গোটা দলকে একত্রিত করেছিলেন রাহুল তা সত্যিই প্রশংসাযোগ্য। রাজস্থানেও একই কাজ করেছেন পাইলট-গেহলটকে একত্রিত করে।
কিন্তু, আসল পরীক্ষাটি রাহুলের ছিল জয়ের পর। সিন্ধিয়া না কমলনাথ, পাইলট না গেহলট। একদিকে প্রবীণ, মা সনিয়ার ঘনিষ্ঠরা। অন্যদিকে, তারুণ্যে ভরপূর স্বচ্ছ ভাবমূর্তির দুই নব্য যুবক। এবং রাহুলের নিজের স্নেহভাজন। মুখে কংগ্রেস সভাপতি সবসময় তারুণ্যের কথা বলেন, তাই তাঁর কাছে চয়েস ছিল খুব সহজ। পুরনোকে সরিয়ে নতুনদের সুযোগ দেওয়া। তাতে কংগ্রেস একগুচ্ছ নতুন তারকা প্রচারক পেত। সেই সঙ্গে বার্তা যেত যে কংগ্রেসে তরুণদের জায়গা আছে, তরুণ নেতাদের জন্য সুযোগ আছে। কিন্তু কংগ্রেস সভাপতি এই কাজটিই করতে পারলেন না। তাঁর মা তথা প্রাক্তন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া ঘনিষ্ঠ দুই নেতাকেই বাছতে হল তাঁকে। তাছাড়া মুখ্যমন্ত্রী বাছার ক্ষেত্রে যেভাবে তাঁকে দফায় দফায় বৈঠক করতে হল, এমনকী মা সোনিয়া এবং বোন প্রিয়াঙ্কার সাহায্য নিতে হল তা তাঁর সিদ্ধান্তহীনতার প্রমাণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কংগ্রেসের কোনও পদে না থেকেও এত বড় সিদ্ধান্তে প্রিয়াঙ্কার মতামত দেওয়ার ব্যাপারটা অনেকেরই বোধগম্য হয়নি।
শোনা যাচ্ছে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী পদে পাইলটই প্রথম পছন্দ ছিলেন রাহুলের। কিন্তু সোনিয়ার হস্তক্ষেপেই মহার্ঘ্য আসনটি পান গেহলট। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে, এখনও সোনিয়া যা চাইছেন কংগ্রেসে তাই হচ্ছে। বিরোধীরা বলতে শুরু করেছে, যে ব্যক্তি নিজের দল চালাতেই এখনও মা-বোনের সাহায্য নিচ্ছেন, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে যাঁকে এখনও মায়ের সাহায্য নিতে হচ্ছে, তিনি দেশ চালাবেন কী করে?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.