তরুণকান্তি দাস, জগদলপুর: কী বলা যাবে একে? বিশ্বকাপের ময়দানে যেমন হঠাৎ হঠাৎ কোচেরা আস্তিন থেকে তাস বের করে বিপক্ষকে ধাঁধায় ফেলেন তেমন? নাকি দাবার ঘুঁটি নাড়া? ছত্তিশগড়ের প্রথম পর্বের ভোটের প্রচারে শেষ দু’দিন যা চলছে তা এখানকার অধিকাংশ সিনেমাহলের পর্দায় হাজির ঠাগস অফ হিন্দোস্তানকে দশ গোল দেবে। নরেন্দ্র মোদি, অমিতশা, যোগী আদিত্যনাথ, স্মৃতি ইরানি, রাহুল গান্ধী, রাজ বব্বর, অজিত যোগীর সামনে কী করে দাঁড়ায় অমিতাভ, আমির, ক্যাটরিনার সিনেমা।
[টিপু জয়ন্তী ঘিরে উত্তপ্ত কর্ণাটক, অনুষ্ঠান বাতিল মুখ্যমন্ত্রীর]
ছত্তিশগড়ের ভোট সিনেমায় মশলার ঝাঁঝ কতটা তার ছোট নমুনা হল মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংকে হারাতে হঠাৎ করে তাঁর কেন্দ্র রাজনন্দগাঁওয়ের একটা পাতি হোটেলে রাহুলের রাত্রিবাস। এবং আজ সকালে সেখানে র্যালি, গুরুদ্বারে মাথা ঠেকানোর পর কোন্ডাগাও হয়ে সোজা জগদলপুরে। গতকাল এই জগদলপুরের যে মাঠ ভরেছিল মোদির সভায় সেই মাঠে আজ সেখানে হাতে হাত ধরে হাজির সব আদিবাসী মুখ। মঞ্চ এক। ম্যারাপ একই। মাথার উপর ছাউনিও বদলায়নি। বদলেছে সভার মুখ্য চরিত্র এবং কাপড়ের রং। ছিল গেরুয়া, হয়েছে তিনরঙা। রং বদলাচ্ছে ছত্তিশগড়। আজকেই শেষ প্রচার। সন্ধ্যা গড়ালেই ঝাঁপ বন্ধ হবে প্রকাশ্য সভা, মিছিলের। তাই বলে জানলা খোলা থাকবে না, তা তো নয়। ছত্তিশগড়ের ভোটের আগামী দেড়দিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অরুণ ভদ্র যেমন বলছেন, এবার তো হাওয়ায় ভোট হচ্ছে না। আমরা সংগঠন গড়েছি বুথস্তর পর্যন্ত। তাঁর কথা অনেকটাই সত্যি। এবং কংগ্রেসের মরণ কামড় টের পাচ্ছে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা বিজেপি। বিশেষ করে শেষবেলার নাটকীয়তা ছাপিয়ে যাচ্ছে আরব্য রজনীর টানটান ব্যাপার স্যাপারকে। অথবা বিশ্বকাপের কৌশল যেন।
গতকাল জগদলপুরে মোদির সভায় ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিং। তাঁর কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যায় রাহুল গান্ধী ইস্তেহার প্রকাশ করেছেন এবং একের পর এক সভায় প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর ভাইঝি, এবারের কংগ্রেস প্রার্থী অরুণা শুক্লাকে নিয়ে ঘুরছেন। মাথা ঘুরে যায় রমনের। তিনি রাতেই সেখানে গিয়ে দু’টি সভা করেন। রাহুলও বদলে ফেলেন কৌশল। রায়পুর না ফিরে এই ছোট জেলা শহরের একটি হোটেলে রাত কাটিয়ে আজ সকালে ফের এই মাঠেই ব্যাট করা শুরু করেন। মুখ্যমন্ত্রীকে যখন রাহুল বিঁধছেন, রমনের তখন হাত কামড়ানো ছাড়া কিছু করার নেই। পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী তিনি যে দলীয় সভাপতি অমিত শা’র সভায় হাজির। তবে চেষ্টা চলছে চারটা নাগাদ নিজের কেন্দ্রে ঢুকে শেষ জবাব দেওয়ার। তার আগে দলের ইস্তেহার প্রকাশেও যে হাজির থাকতে হয়েছে তাঁকে।
[ভারতরত্ন দেওয়া হোক মুখ্যমন্ত্রীকে, দাবিতে সরব তৃণমূল সাংসদ]
এদিকে গতকালই জগদলপুরে র্যালি করার অনুমতি চেয়েছিলেন রাহুল। কিন্তু মোদির সভা ছিল বলে তা মেলেনি। আজ তাই এখানে সভা করে প্রথম দফার প্রচারে ইতি টানছেন তিনি। এরই মধ্যে নকশাল প্রভাবিত ৪০টি বুথে হেলিকপ্টারে করে ভোটকর্মীদের পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম দফায় ভোটের ১৮টি আসনের অধিকাংশই তো মাওবাদী অধু্যষিত এলাকায়। মোদির মঞ্চের শামিয়ানা পাল্টে নির্বাচনী সভা রাহুল গান্ধীর যার নিয়ন্ত্রণ আদিবাসীদের হাতে। প্রচারের শেষ পর্বে একেবারে মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংকে সরাসরি আক্রমণ রাহুল গান্ধীর। বললেন দুর্নীতিগ্রস্ত। পানামা পেপার এ নাম আছে। একের পর এক ভুঁইফোড় সংস্থার মাধ্যমে লুট হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রী কোন ব্যবস্থা নেননি। কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে ভূমিহীনদের প্রত্যেককে জমি দেওয়া হবে। আদিবাসীদের যেসব জমি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে তা ফেরত দেওয়া হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.