সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অনাস্থা প্রস্তাব আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অল আউট অ্যাটাক কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর। বক্তব্যের শুরুটা কংগ্রেস সভাপতি করলেন নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে জুমলার অভিযোগ তুলে। ১৫ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি, রাহুলের অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী কোনও প্রতিশ্রুতিই রাখেননি, খালি জুমলা স্ট্রাইক করেছেন।
#WATCH LIVE: Congress President Rahul Gandhi speaking during #NoConfidenceMotion debate in Lok Sabha https://t.co/esYiOCM4fR
— ANI (@ANI) July 20, 2018
জুমলা-১
প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আজও সে প্রতিশ্রুতি পূরণ করেননি।
জুমলা ২
প্রধানমন্ত্রী বছরে ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, অথচ বাস্তবে বছরে মোটে ৪ লক্ষ চাকরি দিতে পেরেছে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী রোজগার তো দিতে পারছেনই না উলটে কখনও দোকান খুলতে বলছেন, পকোড়া ভাজতে বলছেন।
জুমলা ৩-
প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন নোট বাতিলের মাধ্যমে কালো টাকা কমবে। অথচ বাস্তবে দেখা গিয়েছে এতে কৃষক, ছোট ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আসলে কোনও লাভ হয়নি।
জুমলা ৪-
জিএসটি। নরেন্দ্র মোদি এক দেশ এক কর প্রবর্তন করার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত তাড়াহুড়ো করে ৫ রকমের কর ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছেন যাতে ক্ষতি হয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের।
জুমলা ৫-
রাফালে চুক্তি। রাফালে চুক্তি নিয়ে রাহুলের বক্তব্যে নিয়ে এদিন বেশ সরগরম হয় সংসদ। কংগ্রেস সভাপতি অভিযোগ করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ দেশকে মিথ্যে বলেছেন। কংগ্রেসের থেকে প্রায় ৩ গুণ বেশি দামে কেন রাফালে কেনা হচ্ছে তাঁর জবাবে মিথ্যে বলেছেন নির্মলা সীতারমণ। রাহুলের দাবি, নির্মলা সীতারমণ বলেছিলেন রাফালের দাম প্রকাশ্যে আনা যাবে না কারণ ফ্রান্স সরকারের সঙ্গে গোপনীয়তার চুক্তি রয়েছে ভারতের। অথচ ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি নাকি রাহুলকে নিজে বলেছেন এমন কোনও চুক্তি ভারত সরকারের সঙ্গে করেনি ফ্রান্স সরকার। ভারত চাইলে রাফালের নাম প্রকাশ্যে আনতেই পারেন। রাহুলের এই ব্যাখ্যার সময় হট্টোগোল শুরু করেন বিজেপি সাংসদরা। বাধ্য হয়ে কিছুক্ষণের জন্য অধিবেশন মুলতুবি করতে বাধ্য হলেন স্পিকার সুমিত্রা মহাজন।
এরপরই মোদির বিদেশনীতিতে চলে যান রাহুল গান্ধী। চিনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সঙ্গে মোদিজীর ‘হাগপ্লোমেসি’ অর্থাৎ জড়িয়ে ধরার রাজনীতি কীভাবে ব্যর্থ হয়েছে। বিদেশনীতি নিয়ে মুণ্ডপাতের পর নারী নিরাপত্তায় গোটা বিশ্বের কাছে কীভাবে ভারতের মাথা হেঁট করেছে মোদি সরকার তাও তুলে ধরেন কংগ্রেস সভাপতি। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি একটি রিপোর্টের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন রাহুল। যাতে বলা ছিল নারী নিরাপত্তায় নিকৃষ্টতম স্থানে রয়েছে ভারত। গোটা দেশে যেভাবে দলিত, সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ করা হচ্ছে তা নিয়েও সরব হন কংগ্রেস সভাপতি। গোরক্ষকদের দাপাদাপি, ক্রমাগত গণপিটুনি, গণধর্ষণ সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী নীরব কেন? প্রশ্ন তুললেন আমেঠির সাংসদ। অমিত শাহের ছেলে জয় শাহের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে রাহুল প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী নিজেকে যতই চৌকিদার হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করুন আসলে তিনি দুর্নীতিতে ‘ভাগীদার’। বক্তব্যের মাঝে মাঝে মোদিকে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি রাহুল। কংগ্রেস সভাপতি একবার বলেন প্রধানমন্ত্রী তাঁর চোখের দিকে তাকতে পারছেন না কারণ তিনি আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগছেন।
দীর্ঘক্ষণের চমকপ্রদ বক্তব্যের শেষদিকে অবশ্য রাহুলকে দেখা গেল অন্য রূপে। প্রথমে তিনি বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ ক্ষমতালোভী, কারণ ক্ষমতা হারালে তাদের কোনও অস্তিত্ব থাকবে না। কংগ্রেসিরা ক্ষমতার আশা করে না। কারণ কংগ্রেস ক্ষমতায় না থাকলেও মানুষের মনে থাকে। তাঁর প্রতি হওয়া ব্যক্তিগত আক্রমণের জবাবে এদিন কংগ্রেস সভাপতি সহিষ্ণুতার বার্তা দেন মোদি অমিত শাহদের। রাহুলের বক্তব্য, বিজেপি-আরএসএসের জন্যই নিজের হিন্দু হওয়ার, ভারতবাসী হওয়ার এবং কংগ্রেসি হওয়ার প্রকৃত অর্থ বুঝতে পেরেছেন তিনি। তাই, বিজেপি আরএসএস বা নরেন্দ্র মোদি কারও প্রতিই কোনও বিদ্বেষ নেই তাঁর। বক্তব্যের শেষে প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়েও ধরেন তিনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আস্থা ভোটের আগেই সংসদ রীতিমতো মাতিয়ে দিয়েছেন রাহুল। বক্তব্যের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পরতে পরতে রাহুলের বক্তব্যে ইস্যুভিত্তিক আক্রমণ থাকলেও শেষে এসে মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.