ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্য়ায়: এ নিয়ে তিনি নিজে দলের মধ্য়ে এখনও মুখ খোলেননি। ঘনিষ্ঠমহলে প্রশ্ন শুনে হেসেছেন। বিরোধীদের কিছু জবাব দিয়েছেন। তবে রাহুল গান্ধীর টি-শার্ট রহস্য়ের মধ্য়েই ঠান্ডা কাবু করার মন্ত্র বলে দিলেন রাহুলেরই এক সতীর্থ। শেষরাতে ঠান্ডা জলে স্নান। যা শুনে রাহুলকে ঘিরে থাকা দলের মধ্যেই প্রশ্ন, তিনিও কি তবে সেই পথেই হাঁটছেন!
যত দিন এই পদযাত্রা চলছে, তার মধ্যে একাধিক বার এমন কয়েকজনকে দেখা গিয়েছে, যাঁরা রাহুলের মতো ভোরে টি-শার্ট পরে বেরিয়েছেন। যেমন উত্তরাখণ্ডের এক নেতা রাহুলের সেই সতীর্থ রাজপাল বশিষ্ঠ। ওইভাবেই চলছে দু’দফায় ৩০ কিলোমিটার হাঁটা। এমনিতেই পাহাড়ি ঠান্ডায় অভ্যস্ত রাজপাল। তাতে শেষরাতে স্নান। জানিয়েছেন, এতেই গায়ের শীত মরছে। তার পর রাতের উপোস কাটিয়ে ভোর ৫টা থেকে টানা হাঁটা। ডাক্তারি ভাষায় যাকে বলে ‘সিমপ্যাথেটিক ওভার-অ্যাক্টিভিটি’।
ভারত জোড়ো যাত্রা এখন পাঞ্জাবের বিভিন্ন এলাকা ছুঁয়ে হোশিয়ারপুরে। সকালে বেশ বরফ জমে থাকছে দেখা যাচ্ছে। সন্ধ্যার পর পারদ নামছে ৩-৪ ডিগ্রিতে। এই অবস্থায় ভোর থেকে প্রথম দফা হাঁটার পর সকাল ১০টায় লাঞ্চ খেয়ে বিশ্রাম নিয়ে দ্বিতীয় দফা। ডিনার দেওয়া হচ্ছে সন্ধ্যা সাতটায়। রাজ্য থেকে ক’দিন আগেই রাহুলের সঙ্গে পদযাত্রায় অংশ ছিলেন কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকার, মানস সরকার, জিসান আহমেদরা। প্রথম থেকে সঙ্গে রয়েছেন সল্টলেকে পুরভোটে দলের প্রার্থী পূজা রায়চৌধুরি আর শিলিগুড়ির সেবাদলের সদস্য কিরণ ছেত্রী। রাজপালের সঙ্গে কথাপ্রসঙ্গে ঠান্ডা তাড়ানোর রহস্যটা জানতে পেরেছেন পূজা। তাঁর কথায়, “রাজপালই বললেন ঠান্ডা তাড়ানোর রহস্যটা। তাতে শরীরও সয়ে যাচ্ছে।” রাহুলও কি তবে তাই করছেন? প্রশ্ন জমছে। রহস্য বাড়াচ্ছেন রাহুলও।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. অরিন্দম বিশ্বাস এই প্রসঙ্গেই জানালেন ‘সিমপ্যাথেটিক ওভার-অ্যাক্টিভিটি’-র কথা। তাঁর কথায়, “সকালে উঠে ঠান্ডা জলে স্নান করে নিলে রক্তের ‘মেটাবলিজম’ অনেকটা বেড়ে যায়। তখন সোয়েটার না পরলেও চলে। ঠান্ডা তাড়ানোর এটা পুরনো টোটকা।” তাঁর সংযোজন, এই অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কথা নয়। সেক্ষেত্রে টানা হাঁটলে শরীর গরম থাকবে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ডেপুটি সুপার ডা. দ্বৈপায়ন বিশ্বাস আবার বলছেন, “মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে থাকে থার্মোস্ট্যাট। তার মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হয় দেহের তাপ। সকালে ঠান্ডা জলে স্নান করে নিলে থার্মোস্ট্যাট শরীরের তাপমাত্রা বাড়ানোর কাজ শুরু করে।” প্রদেশ কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকার এ প্রসঙ্গে বলছেন, “আমি শীতকাতুরে। কিন্তু আমায় সবাই বলল, আধঘণ্টা টানা হাঁটলেই গরম লাগবে। ঠিক তাই। জুতোর ফিতে খুলে গিয়েছে। বাঁধতে হাত পকেট থেকে বের করতে পারছি না ঠান্ডায়। কিন্তু হাঁটতে হাঁটতে শরীর গরম হয়ে যাচ্ছে।”
পদযাত্রার ফাঁকে ফাঁকে রাহুল খুব নির্বাচিত কয়েকজনের সঙ্গে টুকটাক কথা সেরে নিচ্ছেন। এমনই একটি দলের মধ্যে থাকছেন পূজা। তাঁর কথায়, “রাহুলজি বলছেন, ওঁকে একটা কিছু শক্তি টেনে নিয়ে যাচ্ছে। উনি সেটা উপলব্ধি করছেন। রোজ ভোরে উঠে কিছু খেয়ে হেঁটে বিশ্রাম নিয়ে আবার হাঁটা– এটা টানা করতে করতে হতাশা আসে। কিন্তু রাহুলজি রোজ বুলেটের মতো ছুটছেন। আমরা জোরে হেঁটেও পারছি না। তাতেই ঘেমে-নেয়ে স্নান।” রাহুলের রোজকার রুটিনের মধ্যে আরও একটি জরুরি কাজ জুড়েছে। প্রতিদিন দু’দফায় ৩০-৩২ কিলোমিটার হাঁটার পর খাওয়াদাওয়া সেরে অল্প বিশ্রাম নিয়ে রাতেই অসুস্থ মা-কে দেখতে যাচ্ছেন রাহুল। ফিরছেন শেষ রাতে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.