সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু৷’ এই ফরমুলা সামনে রেখে বিজেপির বিরুদ্ধে এককাট্টা কংগ্রেস ও সপা৷ উত্তরপ্রদেশে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনই শুধু নয়, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনেও জোট বেঁধে লড়তে পারে কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টি, ইঙ্গিত মিলল রবিবার৷
কংগ্রেস-সমাজবাদী পার্টি জোট হল গঙ্গা-যমুনার সঙ্গম৷ আর এর থেকেই উৎপত্তি হবে উন্নয়নের সরস্বতী নদী৷ বক্তা রাহুল গান্ধী৷ অখিলেশ যাদব বললেন, রাহুল ও আমি একই সাইকেলের দু’টি চাকা৷ সাইকেল ও হাত-এর এক হওয়াকে দুর্দান্ত বলে বর্ণনা করলেন তিনি৷ রবিবার রোড শোয়ের আগেই যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে রাহুল এবং অখিলেশ একে অপরের ভূয়সী প্রশংসার সেতু গড়লেন৷ জোট গঠনের পর এটাই প্রথম সাংবাদিক সম্মেলন৷ সেখানে দুই নেতা নিজেদের এক প্রাণ-এক আত্মা প্রমাণে কোনও উপমাই বাদ রাখলেন না৷ ‘হিংসা ও বিভেদের রাজনীতি’কে পর্যুদস্ত করতে দুই তরুণ নেতাই বোঝানোর চেষ্টা করলেন, তাঁরা শুধু শরিকই নন, পরস্পরের বন্ধুও৷ দুটি দলের লক্ষ্য ও মতাদর্শ অনেকাংশে এক৷ এদিকে, যাদব কুলপতি মুলায়ম সিং যাদব কংগ্রেস-সপার এই জোটের ঘোর বিরোধী৷ এমনকী, এদিন তিনি স্পষ্টই ঘোষণা করে দিয়েছেন, জোটের ভোট প্রচারেও তিনি থাকছেন না৷ তাঁর মতে জোটের কোনও প্রয়োজনই ছিল না৷ তিনি সমঝোতার বিরোধী৷
কিছুদিন আগে পর্যন্ত কংগ্রেস উত্তরপ্রদেশের সপা সরকারকে আক্রমণ করতে গিয়ে বলত, সাতাশ সাল ইউপি বেহাল৷ আর আজ লখনউয়ের পাঁচতারা হোটেলে কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী সপা সুপ্রিমো অখিলেশ যাদবকে পাশে বসিয়ে যখন জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করছেন, তা সত্যিই যেন ‘ঐতিহাসিক’ মুহূর্ত ছিল৷ অবশ্য সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে রাহুল বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি অখিলেশের চেয়ে বড়৷
যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির হয়েই রাহুল বুকে জড়িয়ে ধরেন অখিলেশকে৷ এরপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বেশিরভাগ সময়টাই দুই নেতা বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে গিয়েছেন৷ রাহুল বলেন, ১৮৫৬ সালে দেশে কোম্পানি শাসনের সময় যেমন প্রগতিশীলরা সেনার সঙ্গে মিলেছিল৷ কোম্পানি শাসনের অবসান হয়েছিল৷ তেমনই বিজেপি এবং আরএসএসের হিংসা, দেশভাগের রাজনীতি এবং ফ্যাসিস্ট মনোভাবের বিনাশের জন্য কংগ্রেস-সপা জোট গড়া হয়েছে৷
রাহুল বলেন, কংগ্রেস-সমাজবাদী পার্টি জোট হল গঙ্গা-যমুনার সঙ্গম৷ আর এর থেকেই উৎপত্তি হবে উন্নয়নের সরস্বতী নদী৷ রাজনীতিতে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য দেখা হয়৷ বিজেপি-আরএসএসের লক্ষ্য শুভ নয়৷ অখিলেশের লক্ষ্য ভাল৷ কেউ এটা বলতে পারবেন না, অখিলেশ উত্তরপ্রদেশে কাজ করেননি৷” জোট ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাহুল আরও বলেন, “এ হল মোদিজির ভাষায় ‘ট্রিপল টি’৷ এর ফলে উন্নতি হবে, বন্ধুত্ব বাড়বে এবং উত্তরপ্রদেশ উন্নয়নের পথে এগোতে থাকবে৷” তিনি অখিলেশের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন, অখিলেশের উদ্দেশ্য সঠিক ছিল৷ পুরো প্রচেষ্টা ছিল৷ আমরা তাঁর এই উদ্দেশ্যকে সমর্থন করতে চেয়েছি৷ ইনি উত্তরপ্রদেশের পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন৷ কংগ্রেস তাঁর এই লক্ষ্যের জন্যই তাঁকে সমর্থন করেছে৷” একই সঙ্গে নোট বাতিল ও দুর্নীতি ইস্যুতে মোদি সরকারকেও আক্রমণ করেন রাহুল৷ তিনি বলেন, “আমরা বিজেপিকে দেখিয়ে দেব, আপনারা দেশের মানুষকে ভাগ করতে পারবেন না৷ আমরা উত্তরপ্রদেশের মানুষের চেতনা বিজেপিকে দেখাব৷”
অন্যদিকে, অখিলেশ জোটের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে বলেন, “সাইকেলে হাত এক অনন্য বন্ধন৷ তাঁর মতে এই জোট, জনতার জোট৷” উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, তাঁদের দলীয় প্রতীক সাইকেল৷ আর উন্নয়নমুখী একই সাইকেলের দুটি চাকা হলেন তিনি এবং রাহুল৷ মোদি সরকারকে আক্রমণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, “দেশকে লাইনে দাঁড় করানোর জবাব দেবে জনতা৷”
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভোট প্রচারে থাকবেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে রাহুল বলেন, “প্রিয়াঙ্কা আমার বোন৷ সবসময়ই আমার পাশে থেকেছেন, সাহায্য করেছেন৷ উনি প্রচারে থাকবেন কি না, সেটা তিনিই ঠিক করবেন৷” তবে এদিন সন্ধ্যাতেই অবশ্য মুলায়ম সিং যাদব বলেছেন, “কোনও জোটেরই প্রয়োজন ছিল না৷ এই জোটের প্রচারের জন্য আমি কোথাও যাব না৷” তিনি বলেন, “আমি সমঝোতার ঘোর বিরোধী৷ আমাদের যে নেতারা টিকিট পেলেন না, তাঁরা এখন কী করবেন? পাঁচ বছরের জন্য তো তাঁরা সুযোগ হারালেন৷” এর আগে জোটের ভোট প্রচারে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী এবং সপা-র প্রাক্তন সুপ্রিমো মুলায়ম সিং যাদব থাকবেন কি না, সাংবাদিক সম্মেলনে সেই প্রশ্নের উত্তরে রাহুল বলেন, প্রচারের কৌশল নিয়ে আমরা এখনই কিছু জানাব না৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.