ফাইল চিত্র।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভোটে জিততে অকৃপণভাবে কৃষকদের ঋণ মকুব করতে গিয়ে আদতে দেশের অর্থনীতিরই চরম ক্ষতি করা হচ্ছে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের আখের গোছাতে গিয়ে অর্থনীতির এগিয়ে যাওয়ার চাকায় লাগাম পরানোর চেষ্টা করছে। দরিদ্র হলেই যে এদেশে কৃষকরা ঋণ পান তা নয়। অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, ঋণ পেতে গেলে উপরমহলে রীতিমতো যোগাযোগ থাকার দরকার হয়। শুক্রবার কৃষিঋণ মকুব নিয়ে এই মন্তব্য করলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। তাঁর মতামত নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন রাজন।
[চার বছরে মোদির বিদেশ সফরে খরচ ২ হাজার কোটি, তথ্য বিদেশমন্ত্রকের]
রাজন এদিন বলেছেন, “ভোটের মুখে জনপ্রিয়তার খাতিরে তড়িঘড়ি কৃষকদের ঋণ মকুব করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া কখনওই উচিত নয়। যদিও রাজনৈতিক দলগুলি হামেশাই এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। এভাবে ঋণ মকুব নিয়ে নেতিবাচক রাজনীতি আখেরে দেশের অর্থনীতিকেই পিছিয়ে দেবে। বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানিয়েছি।” কৃষিনির্ভর এই দেশে কৃষক সম্প্রদায়ের মন জিতে ভোটে বাজিমাত করতে আকছার কৃষিঋণ মকুবের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়ে থাকে। ছোট, বড়, মাঝারি প্রায় সব রাজনৈতিক দলই ঋণ মকুবের প্রতিশ্রুতি দেওয়াকে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছে। সম্প্রতি হয়ে যাওয়া পাঁচ রাজ্যের বিধানসভার ভোটেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। ওই সব রাজ্যের ভোটে কংগ্রেস-সহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনী ইস্তাহারে কৃষিঋণ মকুব ও ফসলের সহায়ক মূল্য বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাজন এদিন বলেন, “ভোটের প্রচারের যাতে এ ধরনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া না হয় সে কথা অনেকবার বলেছি। চিঠি লিখে নির্বাচন কমিশনকেও বিষয়টি জানিয়েছি। কৃষকদের দুরবস্থা নিয়ে ভাবা এবং তার সমাধান করা অবশ্যই দরকার। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, ঋণ মকুব করা। শুধু ঋণ মকুব করলেই কি কৃষকদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান হবে, সবার আগে তা ভেবে দেখতে হবে। দেশের মোট কৃষকের কত জন বা কত শতাংশ ওই ঋণ পান তা জানা দরকার? অভিজ্ঞতা বলছে খুব সামান্য যাকে বলে হাতেগোনা কয়েকজনই এই ঋণ পেয়ে থাকেন।”
[বিজয় দিবস: পাক বর্বরতার জবাবে ভারতীয় সেনার শৌর্যের দিন]
রাজনের দাবি, বিগত পাঁচ বছরে কেন্দ্র ও রাজ্যের আর্থিক ঘাটতি কমেনি। তাই মুদ্রাস্ফীতি কমেছে বলে যে দাবি করা করা তা যুক্তিহীন। এদেশে কৃষিঋণ দেওয়ার পদ্ধতিরও কড়া সমালোচনা করেছেন প্রাক্তন আরবিআই গভর্নর। রাজন সাফ বলেছেন, “গরিব হলেই যে কৃষক ঋণ পান তা নয়। দেখা গিয়েছে, যে সব কৃষকের সঙ্গে উপরমহলে বা রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ভাল যোগাযোগ আছে শুধুমাত্র তাঁরাই ঋণ পান। অথচ যাঁদের প্রকৃতই ঋণের প্রয়োজন আছে কিন্তু প্রভাবশালী এমন কারও সঙ্গে যোগাযোগ নেই তাঁরা ঋণ পান না। যে সব রাজ্য ইতিমধ্যেই কৃষকদের ঋণ মকুব করেছে দেখা গিয়েছে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে তার ফলে চরম সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে। অর্থনীতির পক্ষে এটা অত্যন্ত খারাপ বিষয়। ঋণ মকুবের সিদ্ধান্তে আদতে অর্থনীতির কোনও লাভই হয়ই না, বরং আখেরে ক্ষতি হয়। কৃষিতে বিনিয়োগের রাস্তা আরও সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে।” কেন্দ্রে যখন যে দল সরকার চালায় তখন সেই দল প্রায়শই তাদের আমলে জিডিপি বৃদ্ধির হার নিয়ে ঢাক পিটিয়ে থাকে। রাজন এদিন সরকারের এই প্রচারকেও কটাক্ষ করেছেন।
রাজন প্রশ্ন তুলেছেন, জিডিপির হার বাড়লে কি দেশের বিপুল সংখ্যক বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়? বেকাররা কি চাকরি পাচ্ছেন? মানুষের আয় কী বৃদ্ধি হচ্ছে? দারিদ্রসীমার নিচে থাকা মানুষের সংখ্যা কি কমছে? যদি তা না হয় তা হলে এতটা বাড়ল কি অতটা বাড়ল বলে ফলাও করে প্রচার করার কী দরকার? তা হলে এটা পরিষ্কার যে, জিডিপির বৃদ্ধি কিন্তু চাহিদা মতো কর্মস্থান সৃষ্টি করতে পারছে না। বেকারদের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না। মানুষের হাতে টাকা আসছে না। ফলে তাঁদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে না। জিডিপি বৃদ্ধি পেলেও কর্মস্থান যে বাড়ছে না তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ রেলমন্ত্রক। রেলমন্ত্রক সম্প্রতি ৯০ হাজার শূন্য পদে লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করলে ২৫ লক্ষ বেকার আবেদন করছেন। এ থেকেই দেশের কর্মস্থানের ভয়াবহতা স্পষ্ট হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.