রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খাড়গে। ছবি- সংগৃহীত।
সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: ‘খোলামনে ও উদার মানসিকতা’ নিয়ে আসন সমঝোতা করতে চায় কংগ্রেস। এই বার্তাই দিচ্ছে বিজেপি বিরোধী বৃহত্তম দলের হাইকমান্ড। কিন্তু সত্যিই কি তা চাইছেন বিভিন্ন প্রদেশের নেতারা? আরও একবার উঠল এই প্রশ্ন।
তৃণমূলের (TMC) সাহায্য না পেলে গতবার জিতে আসা বহরমপুর ও মালদহ দক্ষিণেও জেতা খুবই কঠিন। রাজ্যে কংগ্রেসের সংগঠনের ‘আসল’ অবস্থার ছবি বুঝিয়ে দিয়ে ঘুরপথে এই কথা মেনে নিয়েও বঙ্গ প্রদেশ সভাপতির পর দলের সর্বভারতীয় স্তরের আরেক বঙ্গ নেতার মুখে শোনা গেল বাংলায় আসন সমঝোতা নিয়ে তাঁদের ‘চিন্তাভাবনা’। তিনি প্রদেশ নেতৃত্বের বক্তব্যকে সিলমোহর দিয়ে দাবি করছেন, রাজ্যে ১০-১২টি আসনে লড়াই করার মতো জায়গায় রয়েছে কংগ্রেস (Congress)। সেক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে অন্তত পাঁচ থেকে ছয়টি আসন চাওয়ার জন্য জোর দেওয়া উচিত। অন্যদিকে, শুক্রবার হরিয়ানার আম আদমি পার্টির (আপ) বিভিন্ন স্তরের প্রায় চারশো নেতার ‘ঘর ওয়াপসি’ করাল কংগ্রেস। যার জেরে কংগ্রেসের সত্যিকারের মনোবাঞ্ছা নিয়ে প্রশ্ন জাগছে ‘ইন্ডিয়া’ (INDIA) শরিক দলগুলির মধ্যে। যা নিয়ে চিন্তায় হাইকমান্ডও।
‘ইন্ডিয়া’ জোটের মাথায় থাকা কংগ্রেসের শীর্ষনেতৃত্ব লাগাতার দাবি করে যাচ্ছে দেশকে বিজেপির হাত থেকে মুক্ত করতে তারা বিভিন্ন শরিক দলের সঙ্গে খোলামনে ও উদার মানসিকতা নিয়ে আলোচনা করতে তৈরি। কিন্তু রোজই বাংলায় বসে তার ঠিক উলটো কাজ করে যাচ্ছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury)। যার জেরে স্বাভাবিক নিয়মেই দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে রাজ্যে। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার কংগ্রেস কর্মসমিতির এক নেতা ড্যামেজ কন্ট্রোল করার ঢংয়ে জানিয়েছিলেন, “সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা খোলা মনে, উদার মানসিকতায়, মুখে কুলুপ এঁটে সবার কথা শুনছি। সেইমতো দেখবেন সুন্দরভাবে আসন সমঝোতা হয়ে যাবে।” কিন্তু সত্যিই কি তাই? সর্বভারতীয় স্তরের তাঁর এক সহকর্মী আবার বলছেন, “প্রদেশ নেতৃত্ব যা বলছে তা ভুল নয়। রাজ্যে তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরাও। তবে বৃহত্তর স্বার্থে সমঝোতা যদি করতেই হয়, তাহলে আমাদের মাথায় রাখতে হবে ১০ থেকে ১২টি কেন্দ্রে আমাদের সংগঠন বেশ শক্তিশালী। সেক্ষেত্রে তৃণমূল যদি অন্তত পাঁচ থেকে ছ’টি আসন আমাদের ছাড়ে, তাহলে জোট করে নেওয়াই ভাল।” পরক্ষণেই আবার তাঁর গলায় শোনা গেল, তাতে কংগ্রেসের এই ‘শক্তিশালী’ সংগঠন তত্ত্বকে কটাক্ষ করে তৃণমূল তুলনা করছে সোনার পাথরবাটির সঙ্গে। আশঙ্কা করে কংগ্রেসের সেই নেতার বক্তব্য, “আসলে তৃণমূলের সঙ্গে জোট না হলে গতবার জিতে আসা আসন দু’টিতেও আমাদের লড়াই কঠিন।” এখানেই তৃণমূলের প্রশ্ন, এই রিপোর্ট কি নেই কংগ্রেস হাইকমান্ডের কাছে? কীসের জোরেই বা এতখানি উদ্ধত আচরণ করছেন কংগ্রেস প্রদেশ সভাপতি?
একদিকে যখন বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে বিবাদের পথ চওড়া করছেন স্থানীয় নেতারা, তখন হরিয়ানাতেও চলছে একই কাজ। এদিন কংগ্রেস ছেড়ে আম আদমি পার্টিতে (Aam Aadmy Party) যাওয়া চারবারের বিধায়ক তথা হরিয়ানার প্রাক্তন মন্ত্রী চৌধুরী নির্মল সিংকে ঘর ওয়াপসি করাল হরিয়ানা প্রদেশ কংগ্রেস। ফিরলেন তাঁর মেয়ে চিত্রা সরওয়ারাও। যিনি একসময় সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সঙ্গে করে তাঁরা নিয়ে এলেন হরিয়ানা আম আদমি পার্টির ২৫৬ জন পদাধিকারী, সাতজন জেলা পারিষদ ও পূর্ব জেলা পারিষদ, ১২২ জন বর্তমান ও প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান, ১২জন প্রাক্তন পুর প্রতিনিধি। কংগ্রেসের সদর দপ্তরে এই ঘর ওয়াপসিতে হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিং হুড্ডা, সাংসদ দীপেন্দ্র সিং হুড্ডা, প্রদেশ সভাপতি ও অবজার্ভার উপস্থিত থাকলেও আশ্চর্জনকভাবে ছিলেন না সর্বভারতীয় স্তরের কোনও নেতা। যদিও আম আদমি পার্টির বক্তব্য, এভাবে অনুপস্থিত থেকে তাদের ঘর ভাঙার দায় এড়িয়ে যেতে পারে না কংগ্রেসের শীর্ষনেতৃত্ব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.