সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জনপ্রিয় বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম সংস্থা হ্যাভেলস-এর পাখার বিজ্ঞাপন মনে আছে? যেখানে রেজিস্ট্রি বিয়ের পর বউয়ের পদবি গ্রহণ করেছিলেন স্বামী? বিজ্ঞাপনের ক্যাচলাইন ছিল, হাওয়া বদলেগি। কিন্তু বাস্তবে তা কি সম্ভব? বিয়ের পর স্বামীর পদবি গ্রহণ করবে স্ত্রী সেটাই তো স্বাভাবিক। অন্তত আমাদের দেশে তো এমনটাই রীতি। ঐতিহ্য, সংস্কারের ধুয়ো দিয়ে যুগ যুগ ধরে এমন প্রথাই মেনে চলে এসেছি আমরা। প্রথা ভাঙার সাহস ক’জন দেখিয়েছেন, তা খুঁজতে গেল আতসকাচ লাগবে। স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েও চিন্তাধারায় কতটা স্বাধীন হতে পেরেছি আমরা? এমন ‘দুঃসাহসিক’ পদক্ষেপ নিলে পাছে সমাজের বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে প্রথাবিরোধী কার্যকলাপ করার সাহস কেউ দেখায় না। কিন্তু বিজ্ঞাপন ভুল বার্তা দেয়নি তার প্রমাণ মিলল এই দেশেই। পাঞ্জাবের ভাটিন্ডাতে এমনই প্রথাভাঙা বিরল দৃশ্য দেখা গেল। যেখানে কনে এল বরের বেশে এবং বর তার ঠিক উল্টোটা। শেষপর্যন্ত বিয়ের পর কনের পদবি গ্রহণ করলেন বর। বৃদ্ধ মা-বাবার মেয়েকে বিয়ে করলেন প্রথা ভেঙে।
মণ্ডি গোবিন্দগড়ে এমনই এক রূপকথার বিয়ের সাক্ষী থাকলেন বহু মানুষ। ৩০ বছরের পাত্র পেশায় জীবনবিমা কর্মী সুখমিন্দর ২৬ বছরের বলজিতকে বিয়ে করে চললেন শ্বশুরবাড়ি। গত ২৬ ফেব্রয়ারি ভাটিন্ডার মণ্ডি গোবিন্দগড়ে অনুষ্ঠিত হয় এমন অভিনব বিয়ে। দ্বাদশ শ্রেণি উত্তীর্ণ পেশায় বুটিক ব্যবসায়ী বলজিত এদিন বিয়ে করতে আসেন কন্যাপক্ষের লোকজনকে নিয়ে। বরের মতোই সেহরা বেঁধে, হাতে কৃপাণ নিয়ে বিয়ের মণ্ডপে বসেন তিনি। আর হাতে মেহেন্দি লাগিয়ে কনের মতোই বিয়ের মণ্ডপে ছিলেন সুখমিন্দর। বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পর চোখের জলে মা-বাবা, পরিজনদের বিদায় জানিয়ে চলে আসেন কনের বাড়িতে। সুখমিন্দর জানিয়েছেন, তাঁর একটি ভাই এবং বোন রয়েছে বাড়িতে। তাঁর অনুপস্থিতিতে তারা মা-বাবার দেখাশোনা করতে পারবে। কিন্তু বলজিতরা পাঁচ বোন। তাঁর একমাত্র ভাইও এই পৃথিবীতে আর নেই। তাই এমন বিয়েতে মা-বাবার দেখাশোনাও করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন বলজিত। এমনকী সুখমিন্দর নিজের ট্রান্সফারও শ্বশুরবাড়ির কাছেই করিয়ে নেবেন বলে জানিয়েছেন।
ডেরা সচ্চা সৌদা প্রধান গুরমিত রাম রহিমের সৌজন্যেই এমন প্রথাভাঙা বিয়ে সম্ভব হল। এমন বিয়েকে ‘কুল কা ক্রাউন’ নামে অভিহিত করা হয়। এর উদ্দেশ্য, ভবিষ্যতে কন্যাপক্ষই বংশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাই বিয়ের পর কনে শ্বশুরবাড়িতে না বাপের বাড়িতে ফিরে আসে। তারপর সেখানেই স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে থাকেন। বলজিতের মা জসবিন্দর জানিয়েছেন, তাঁর মেয়ে বরকে সঙ্গে নিয়ে আসেননি। বরং তাঁর ছেলে বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছে বলে মনে করেন তিনি। তাঁর মেয়ে এমনটা না করলে তাঁদের বংশ থেমে যেত। এখন তিনি খুব খুশি। বংশ এবার মেয়েই এগিয়ে নিয়ে যাবে মনে করেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.