হাই রোডের ধারে দীর্ঘদিন ধরেই আখরোট, বাদাম, কাজুর ব্যবসা করেন জাহিদ আহমেদ বাট। কিন্তু এমন আতঙ্কের মুহূর্তের মুখোমুখি হতে হয়নি কখনও। প্রেম দিবসের দুঃস্বপ্ন কিছুতেই ভুলতে পারছেন না তিনি। হামলার দিন ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ৪০০ মিটার দূরের দোকানেই ছিলেন জাহিদ। ঘটনার দশদিন পর সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে বললেন সেই দুঃসহ স্মৃতির কথা। শুনলেন সোম রায়।
প্রশ্ন: সেদিনের আতঙ্ক আগে অনুভব করেছেন?
জাহিদ: না না এমন আতঙ্কের মুখোমুখি আগে হতে হয়নি। যখন হামলা হল তখন আমরা দোকানে ছিলাম। যখন বিস্ফোরণ হল তখন আমাদের দোকান খোলা ছিল। তবে, হামলার পরও কাউকে মারধর করেনি কেউ, আমাদের দোকানের জিনিসপত্রও ভাঙচুর করা হয়নি। শুধু বলে গেল আর এখানে থাকবেন না। আমাদের অনেক কাজ বাকি আছে। আপনারা দোকান বন্ধ করে বাড়ি যান।
প্রশ্ন: বিস্ফোরণ কটা নাগাদ হল?
জাহিদ: এই সওয়া ৩ টে নাগাদ।
প্রশ্ন: হঠাৎ বিস্ফোরণ হয়ে গেল?
জাহিদ: হঠাৎই বিস্ফোরণ হল। আমরা বসে ছিলাম, পাশের দোকানের দাদাও বসে ছিলেন। যখন বিস্ফোরণ হল কাচ ভেঙে পড়ল আমাদের উপর। আমরা একে অপরকে দেখছিলাম শুধু। হঠাৎ পুরোপুরি নীরবতা।
জাহিদের সহযোগী: এরপর গুলি চালানো শুরু হল। আমাদের মনে হল বিস্ফোরণ হয়েছে। আমরা পালিয়ে গেলাম।
প্রশ্ন: তারপর ফিরলেন কখন?
জাহিদ: আমরা আর ফিরিনি।
প্রশ্ন: সারাদিন দোকান খোলা ছিল?
জাহিদ: হ্যাঁ, সারাদিন খোলা ছিল। সওয়া তিনটে থেকে শুরু করে পরেরদিন সকাল সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত।
প্রশ্ন: আপনাদের বাড়িতে কি সকলেই ভয়ে আছেন?
জাহিদ: সেদিন আমরা এতটা ভয় পেয়েছিলাম যে সারারাত কেউ ঘুমোতে পারিনি।
প্রশ্ন: তাহলে আট-দশদিন পরে দোকান খুললেন?
জাহিদ: না না, মোটামুটি পাঁচদিন পরেই আমরা দোকান খুলে ফেলি।
প্রশ্ন: অনেকে বলেন এখানে সিআরপিএফ জওয়ানরা, সেনার লোকেরা আপনাদের উপর অত্যাচার করেন, এমন কি কিছু হয়েছে?
জাহিদের সহযোগী: বড় কোনও ঘটনা ঘটলে কখনও কখনও হয়। এই ধরনের ঘটনা ঘটলে কখনও কখনও স্থানীয়রা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। সেনা জওয়ানদের হাতে অধিকারও থাকে। কখনও কখনও মারধর হয়। তবে, সেসব বড় কোনও ঘটনা ঘটলে তবেই।
জাহিদ: এখানে যে সেনা জওয়ানরা আছেন, তারা কাউকে মারধরও করেননি, ভয়ও দেখাননি। তবে, আমাদের মধ্যে একটা ভয়ের পরিবেশ এমনিতেই সৃষ্টি হয়েছিল।
প্রশ্ন: হামলার পর কি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে?
জাহিদ: এখন তো এই রাস্তাটায় কোনও গাড়িই চলে না। সন্ধে ৬ টার পর আর গাড়ি চলে না। তখন ভয় লাগে। আগে আমাদের দোকান রাত দশটা পর্যন্ত খোলা থাকত। এখন ৭ টা-সাড়ে ৭ টা বেজে গেলেই আমরা বাড়ি চলে যাই।
প্রশ্ন: আপনার বাড়ি কতদূর এখান থেকে?
জাহিদ: এখান থেকে ৫-৭ মিনিটের রাস্তা।
প্রশ্ন: আপনার ব্যবসার কী অবস্থা?
জাহিদ: পুরো শেষ হয়ে গিয়েছে। আগে যেখানে দিনে ১০ হাজার টাকা বেচাকেনা করতাম, এখন সেটা মাত্র হাজার টাকা হয়।
প্রশ্ন: তার মানে এখন আর মানুষ এদিকে আসেন না?
জাহিদের সহযোগী: সবাই ভয়ে আছে। যখন আমরা এখান থেকেই ভয় পাই, বাইরের লোক তো পাবেই, প্রাণের ভয় সকলেরই থাকে। কিছুদিন এমন চলবে, এরপর ঠিক হয়ে যাবে আস্তে আস্তে।
আশেপাশে ঘুরে বোঝা গেল এখনও সেদিনের আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেননি স্থানীয়রা। পুলওয়ামার ঘটনার সাতদিন পরও বিস্ফোরণের কথা মনে পড়লে শিউরে ওঠেন অনেকেই। ঘটনাস্থল এখনও ঘিরে রেখেছে আধা সামরিক বাহিনী। কড়া নজরদারি এড়িয়ে কাকপক্ষীরও প্রবেশ করার ক্ষমতা নেই। তবু, স্থানীয়রা যেন কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছেন না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.