সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শরীরে একটু একটু করে বেড়ে উঠছে গর্ভস্থ সন্তান। আটমাস পেরিয়ে যাওয়ায় তার উপস্থিতি ভালভাবেই টের পাচ্ছিলেন ইয়াসমিন। ইদানীং আর বিশেষ কাজ করতে পারছিলেন না তিনি। একটুতেই ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু লকডাউনের জেরে প্রায় একশো কিলোমিটার রাস্তা হাঁটতে হল ওই অন্তঃসত্ত্বাকে। স্বামীর হাত ধরে দীর্ঘ রাস্তা হাঁটতে হাঁটতে বারবার ক্লান্ত হয়ে পড়েন তিনি। জোটেনি সামান্য খাবারও। পরে পুলিশের উদ্যোগে অ্যাম্বুল্যান্সে চড়ে অন্তঃসত্ত্বা অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন তাঁর স্বামী।
গ্রামে সেভাবে রোজগার হত না। দুজনের অন্ন সংস্থান করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হত ইয়াসমিনের স্বামী ভাকিল। বাধ্য হয়ে একটু বেশি উপার্জনের আশায় শাহারানপুরে চলে আসে ওই দম্পতি। সেখানেই একটি কারখানায় কাজ করতেন ইয়াসমিনের স্বামী। থাকতেন কারখানা মালিকের ব্যবস্থা করে দেওয়া একটি ঘরে। দিব্যি চলছিল সংসার। মাঝে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন ইয়াসমিন। এভাবেই কেটে যায় প্রায় আট মাস।
চেনা জীবনে ছন্দপতন ঘটাল করোনা ভাইরাস। সংক্রমণ রুখতে লকডাউনের কথা ঘোষণা হওয়ামাত্রই কারখানা বন্ধ কর দেন মালিক। অভিযোগ, কোনও শ্রমিককেই বেতনও দেননি ওই কারখানা মালিক। কীভাবে সংসার চালাবেন সেই চিন্তায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে ভাকিলের। এরপর আবার ওই কারখানা মালিক জানিয়ে দেন অবিলম্বে ওই দম্পতিকে ঘর ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু বাস, ট্রেন যে বন্ধ কীভাবে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ফিরবেন, সেই প্রশ্ন করেন কারখানা মালিককে। বাড়িতে থাকতে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু মেলেনি লাভ।
তাই বাধ্য হয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটতে শুরু করেন ভাকিল। খুব কষ্ট করে প্রায় দুদিন ধরে একশো কিলোমিটার রাস্তা হাঁটেন দম্পতি। মীরাটের সোহরাব গেট বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছন দুজনে। পুলিশকে নিজেদের করুণ পরিস্থিতির কথা খুলে বলেন ওই মহিলা। এরপরই পুলিশ দুজনের জন্য খাবারের বন্দোবস্ত করে। অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁদের বুলন্দশহরের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। পুলিশের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তাঁরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.