সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গর্ভবতী হাতির মৃত্যু নিয়ে গোটা দেশ যখন উত্তাল, তখন কারাগারের অন্ধকারে কিন্তু রয়েছেন এক অন্তঃসত্ত্বা তরুণীও! তিনি জামিয়ার গবেষক ছাত্রী সফুরা জারগার। গত এপ্রিল মাসে সন্ত্রাসবাদ দমন আইনের ভিত্তিতে অন্তঃসত্ত্বা সফুরাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তখন তিনি ২ মাসের গর্ভবতী। বৃহস্পতিবার তৃতীয়বারের জন্য তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয় দিল্লির পাতিয়ালা হাউস আদালত।
জানুয়ারি মাসে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদসভায় উপস্থিত ছিলেন দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সফুরা জারগার। তার প্রায় ৪ মাস পরে সন্ত্রাসবাদী দমন আইন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ২৭ বছর বয়সি এই তরুণীকে। তাঁর বিরুদ্ধে উত্তর-পূর্ব দিল্লি হিংসার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সফুরা এই মুহূর্তে ২১ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা। এবং পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিসওর্ডারেও ভুগছেন। আর তাই মানবিকতার ভিত্তিতেই জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু তৃতীয়বারও জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয় দিল্লির পাতিয়ালা হাউস কোর্ট। আবেদন খারিজ করাকালীন বিচারক ধর্মেন্দ্র রানার মন্তব্য, “নিজে আগুন নিয়ে খেলা করে বাতাসকে কখনও দোষ দিতে পারেন না, দাবানল ছড়ানোর জন্য…।”
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে লোকসভায় পাশ হয় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। তারপরই CAA, NRC ইস্যু নিয়ে গোটা দেশ উত্তাল হয়ে পড়ে। অশান্তির আঁচ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল রাজধানীতে। সেই সময়েই প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেছিল জামিয়ার ছাত্রছাত্রীরাও। সেই প্রতিবাদে শামিল ছিলেন সফুরাও। ইতিমধ্যেই ফেব্রুয়ারি মাসে হঠাৎ অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে দিল্লি। বেশ কিছু অঞ্চলে কার্যত হিংসাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পুলিশের অভিযোগ, উত্তর-পূর্ব দিল্লি হিংসায় একজন ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে কাজ করেছেন সফুরা। এরপরই দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা সফুরাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রসঙ্গত, সফুরা ‘জামিয়া কো-অর্ডিনেশন কমিটি’র সদস্যাও। এমতাবস্থায় কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, এই অতিমারীর সময়ে দেশজুড়ে লকডাউন চললেও পুলিশি জুলুমের বিরাম নেই! তিহার জেলে অসংখ্য বন্দি রয়েছে। জনবহুল এই কারাগারে এই অতিমারীর সময়ে একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে বন্দি রাখা কতটা মানবিক? প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই বহু বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিলেও সফুরার বিরুদ্ধে অশান্তি, অস্ত্র দখল, হত্যার চেষ্টা, হিংসা ছড়ানো, রাষ্ট্রদ্রোহিতা নিয়ে প্রায় ১৮টি অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে! এমন দুঃসময়েও এই অন্তঃসত্ত্বা মেয়েটির গ্রেপ্তারি আদতে এটাই প্রমাণ করছে যে, সরকার আসলে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে যে কোনও শর্তে দমন করতে চায়। বক্তব্য ‘জামিয়া কো-অর্ডিনেশন কমিটি’র।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.