সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পরতে পরতে উন্মোচিত হচ্ছে নানা অচেনা অধ্যায়, নানা অজানা কাহিনি। একই সঙ্গে বই প্রকাশিত হওয়ার পর নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়ের ‘প্রণব মাই ফাদার: আ ডটার রিমেমবার্স’।
একজন রাষ্ট্রপতি কিংবা রাজনীতিকের বাইরেও শুধুমাত্র মানুষ হিসাবে প্রণব মুখোপাধ্যায় কী ছিলেন, কেমন ছিলেন পারিবারিক জীবনে তা নিয়ে আপামর বাঙালির কৌতূহল স্বাভাবিক। একই সঙ্গে ভারতীয় রাজনীতির কৌটিল্য যে কথা প্রকাশে্য কখনও বলতে পারেননি, যার সাক্ষী ছিল শুধুই তাঁর পরিবার আর নিকটজনেরা, তেমনই অনেক তথ্য উঠে আসছে শর্মিষ্ঠার কলমে। ফলে প্রণব-কন্যার বই নিয়ে উত্তেজনা শুরু থেকেই চরমে। আর বইয়ে কী কী উন্মোচিত হতে চলেছে তা নিয়ে প্রকাশের আগে থেকেই যেভাবে আলোচনা হচ্ছে, তা-ও টেনে নিচ্ছে নজর।
স্বাভাবিকভাবেই বইয়ে কন্যার স্মৃতিচারণার মধে্য থাকছেন ইন্দিরা গান্ধী কিংবা রাজীব, সোনিয়া কিংবা রাহুল, আরএসএস কিংবা রাইসিনা হিলসের অন্দরমহলের সাতকাহন। ‘পলিটিক্যালি কারেক্ট’ থাকা প্রণব পরিবারের সদস্যদের কাছে জানিয়েছিলেন, রাজীব গান্ধীর মন্ত্রিসভায় কেন জায়গা হয়নি ভারতীয় রাজনীতির চাণকে্যর। প্রণব বলেছিলেন, নিজের ‘অনমনীয় মনোভাবের’ কারণেই ঠাঁই হয়নি রাজীব-মন্ত্রিসভায়।
১৯৮৪-র অক্টোবরে ইন্দিরা-হত্যার পর প্রাথমিকভাবে যে দু’মাস প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন রাজীব গান্ধী, সেখানেও অর্থমন্ত্রী হিসাবেই ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। কারণ, ভোটের প্রায় দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ইন্দিরার মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়ার কোনও কারণ সম্ভবত দেখেননি রাজীব গান্ধী। তবে দু’মাস পর যখন রেকর্ড সংখ্যক আসন নিয়ে পূর্ণ মন্ত্রিসভা গঠন করেন ইন্দিরা-পুত্র, তখন সেখানে জায়গা হয়নি প্রণবের। সেই প্রসঙ্গেই নিজের অনমনীয় মনোভাবের কারণ দেখিয়েছিলেন কীর্ণাহারের ব্রাহ্মণ। যদিও রাজীবের মায়ের জমানাতে রাজনৈতিক জীবনের ‘সোনালি সময়’ কাটিয়েছিলেন বলেও জানিয়েছেন প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি।
বাবাকে সামনাসামনি দেখা এবং স্মৃতিকথন ছাড়াও প্রণব-কন্যার বইয়ের অন্যতম প্রধান উপাদান নিশ্চিতভাবেই তাঁর লিখে যাওয়া প্রচুর ডায়েরি। যেখান থেকে নানা পুরনো তথ্য এবং একই সঙ্গে রাইসিনার বাসিন্দার মনের কথা জানতে পেরেছেন কন্যা শর্মিষ্ঠা। বইয়ে সোনিয়া গান্ধী কিংবা রাহুল সম্পর্কে কী কী তথ্য রয়েছে তা নিয়ে বই প্রকাশের আগেই সংবাদমাধ্যমের সামনে কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। তবে রাজীব গান্ধী প্রসঙ্গটি শর্মিষ্ঠা জানান বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে। সোমবার যে অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম এবং বিজেপি নেতা বিজয় গোয়েল।
আরএসএস-এর অনুষ্ঠানে কেন প্রণব যোগ দিতে গিয়েছিলেন তা নিয়েও বইয়ে লিখেছেন শর্মিষ্ঠা। তিনি জানিয়েছেন, ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বাবার সঙ্গে তাঁর তিন-চার দিন তাঁর রীতিমতো ঝামেলা হয়েছিল। পরে তাঁকে বাবা জানিয়েছিলেন, এটা শুধু তাঁর ব্যক্তিগত পছন্দের প্রসঙ্গ নয়। বরং দেশের এবং গণতন্ত্রের কথা ভেবেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। কারণ গণতন্ত্রে সকলের সঙ্গে কথা বলতে হয়। বিরোধীদের কথাও শুনতে হয়। সেই কথা মাথায় রেখেই আরএসএস-এর সভায় যেতে রাজি হয়েছিলেন কংগ্রেসের এই প্রাক্তন নেতা-মন্ত্রী। বইয়ের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে রয়েছে এমনই নানা কথা, কীর্ণাহার থেকে রাইসিনার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.