বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: ‘ভোট বড় বালাই’। লোকসভা ভোট এগিয়ে আসতেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টি সম্পর্কে নিজেদের অবস্থান বদল করল সিপিএম (CPM)। রাজ্য সরকারি আধিকারিকদের নিয়োগ ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিল রাজ্যসভায় আটকাতে দুই শিবিরকে এক টেবিলে বসিয়ে দিল। মঙ্গলবার দিল্লিতে সিপিএমের (CPM) সদর দপ্তরে মুখোমুখি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল (Arvind Kejriwal) ও সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি (Sitaram Yechuri)। তবে আশ্চর্যজনকভাবে বৈঠকে ছিলেন কেজরিওয়ালের প্রবল সমালোচক বলে পরিচিত পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য প্রকাশ কারাত (Prakash Karat)।! যিনি সাতবছর আগে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে কার্যত বিজেপির এজেন্ট বলেছিলেন। সেই কারাতের ব্যাখ্যা অনুযায়ী গেরুয়া শিবিরের এজেন্টের সঙ্গে বিজেপির আগ্রাসন ঠেকাতে বৈঠক করলেন কমরেডকুলের নেতারা!
বৈঠক শেষে জানালেন, রাজ্যসভায় (Rajyasabha)কেন্দ্রের আইন ঠেকাতে কেজরিবালের পাশেই থাকবেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে লাল পার্টির অবস্থান বদলের কারণ, বছর ঘুরলেই লোকসভার ভোট। তার আগে বিজেপি বিরোধী প্রমাণের দায়বদ্ধতার পাশাপাশি বিরোধী জোটে নিজেদের প্রাসঙ্গিক করে রাখার তাগিদ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ থাকার পরেও রাজ্যের আধিকারিকদের নিয়োগ ও নিয়ন্ত্রণ করতে মরিয়া নরেন্দ্র মোদি সরকার। সম্প্রতি এই সংক্রান্ত অধ্যাদেশ (Ordinance) জারি করে কেন্দ্র। আগামী বাদল অধিবেশনে আইন করতে বিল আনতে চলেছে কেন্দ্রের শাসকদল। সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, কোন রাজ্যের সরকারি আধিকারিকদের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকারই নিয়ন্ত্রণ করবে। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কেন্দ্রের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছে দিল্লির আম আদমি পার্টির (AAP) সরকার। আপ সরকারের একাধিক নির্দেশিকা কেন্দ্র নিযুক্ত উপরাজ্যপাল খারিজও করেন। মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। এই রায়কে খারিজ করতে দ্রুত অর্ডিনেন্স জারি করে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।
সংখ্যাতত্ত্বের জোরে লোকসভায় বিল পাসে সমস্যা না থাকলেও বিরোধীরা একজোট হলে রাজ্যসভায় ধাক্কা খেতে পারে নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহদের প্রত্যাশা। তাই বিরোধী এককাট্টা করতে বিরোধী নেতৃত্বের দোরে দোরে ঘুরছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। গত কয়েকদিনে গোটা দেশ চষে ফেলেছেন তিনি। এবার সিপিএমের শীর্ষনেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করলেন তিনি। এদিন সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর একে গোপালন ভবনে (AKG Bhaban)সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে বৈঠক করলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আপ নেতার সঙ্গে এই বৈঠকে ছিলেন পলিটব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাত এবং বৃন্দা কারাত।
কারাতকে বৈঠকে থাকতে কেজরিবাল ব্যক্তিগতভাবে আবেদন করেন বলে সিপিএম সূত্রে খবর। কারণ বামেদের অধিকাংশ সাংসদ কেরল থেকে। আর কেরল (Kerala) পার্টির ওপর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে কারাতের। এছাড়াও ছিলেন কেরলের দুই পলিটব্যুরেরার দুই সদস্য এম এ বেবি ও বিজয় রাঘবন। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এই ইস্যুতে তাঁরা কেজরিবালের পাশে থাকবেন বলে জানান সীতারাম ইয়েচুরি। কেন্দ্রের অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে সমস্ত বিরোধী দলকে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানান তিনি।
কিন্তু বৈঠকে কারাতের থাকা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে পার্টি ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে। কারণ ১৫ সালে বিশাখাপত্তনম পার্টি কংগ্রেসের খসরা প্রতিবেদনে কারাত আম আদমী পার্টিকে ‘বিজেপির সহযোগী’ বলে লেখেন। সেইসঙ্গে সেইসময় কেজরিবালকে নিয়ে বঙ্গ সিপিএমের মাতামাতি সঠিক নয় বলে উল্লেখ করেন। তারপর থেকেই আপের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ায় সিপিএম। তাহলে বৈঠকে কেন তিনি প্রশ্ন উঠেছে পার্টির অন্দরে। মনে করা হচ্ছে, প্রথমত, লোকসভা ভোটের কথা মনে করেই কারাতের এই সিদ্ধান্ত। সেইসঙ্গে ইয়েচুরি শিবিরকে কেরল সিপিএমের উপর তাঁর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণের বার্তা দিতেই কারাত দম্পতি বৈঠকে হাজির ছিলেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.