সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: করোনা সংক্রমণের আতঙ্কে গত মার্চ থেকে টানা লকডাউনের পথে যেতে হয়েছিল ভারতকে। আর তারই ফলশ্রুতিতে এক ধাক্কায় কাজ হারিয়েছেন কোটি কোটি শ্রমিক, নিম্ন আয়ের দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ। এক কথায় ভারতের গরিব শ্রেণি। লকডাউনের জেরে এদেশে যে পরিযায়ী শ্রমিকদের সংকট তৈরি হয়েছিল, আজও তার সমাধান হয়নি। ফের এক শহর, রাজ্য থেকে ভিন রাজ্যে ছুটে যাচ্ছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। তার সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে খাদ্যপণ্যের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি। বিশেষত, যখন কয়েক মাসের কড়া লকডাউনে ভারতের কোটি কোটি দরিদ্র পরিবার আর্থিকভাবে আরও পঙ্গু হয়ে পড়েছে, খাদ্যের মুদ্রাস্ফীতি (Inflation) তাদের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই জোড়া ধাক্কা দেশের গরিব মানুষকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছে।
দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন সবজির দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, যদিও এর আগের কয়েক মাসের তুলনায় ধীর গতিতে। আগস্ট মাসের মূল্যবৃদ্ধির তথ্য থেকে জানা গিয়েছে যে, দেশে খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি এখনও ৯.০৫ শতাংশ। জুলাইয়ে দেশের নানা প্রান্তে শুরু হয় ‘আনলক পর্ব’। সে সময়ের মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় এই হার সামান্য কম। কিন্তু সরবরাহ ও জোগানের ঘাটতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। কমেনি বিভিন্ন পণ্যের দামও। আবার জোগান ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হলেও আবহাওয়ার পরিবর্তন কৃষিজাত পণ্যের ফলনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তার জেরে খাদ্যপণ্যের দাম কমার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। সেই আশঙ্কার কথা রিজার্ভ ব্যাংক (RBI)ও তাদের সাম্প্রতিক বার্ষিক রিপোর্টে উল্লেখ করেছে। বলেছে, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার জেরে জলবায়ুর পরিবর্তন কৃষির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।’
পরিবহণে নানা দেশে খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি এখনও ৯.০৫ শতাংশ। বিধিনিষেধ, বন্যা, কম বৃষ্টিপাত এবং জ্বালানির চড়া হার দেশজুড়ে সবজির দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। গত মাস থেকে আলু, টমেটো, পিঁয়াজের মতো জরুরি সবজির দাম অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। অনেক জায়গাতেই খুচরো বাজারে টম্যাটোর দাম কেজি প্রতি ১০০ টাকা। আলু-পিঁয়াজ ৫০ টাকার কাছাকাছি। বর্ষার মরসুম এভাবে চললে আরও কয়েক মাস সবজির দাম চড়া থাকবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ তাতে মাঠে ফসল নষ্ট হবে, সরবরাহ কম থাকায় বাড়বে দামও। যেমন, পাঞ্জাব ও হিমাচলপ্রদেশে আলু, পিঁয়াজ, টমেটোর পাইকারি দামও বাড়তে শুরু করেছে। এই সমস্ত সবজিই সাধারণত ঘরে ঘরে বহুল ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এদের দাম বৃদ্ধি, অন্যদিকে রোজগার কমে যাওয়ায় তাই মাথায় হাত গরিব মানুষের।
করোনার জেরে সংসারে চাপ বাড়তে থাকায় অনেকেই মাছ-মাংস কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সবজির দামও লাগামছাড়া হলে তাঁদের বিপদের শেষ থাকবে না। বিশেষত, গরিব-প্রান্তিক মানুষের। অসংগঠিত ক্ষেত্রে ব্যাপক শ্রমিক সংকোচন হয়েছিল করোনা আবহে। সরকার লকডাউন তুলে নেওয়ার পরেও পরিযায়ী শ্রমিক-সহ নিম্ন আয়ের বহু মানুষ আগের মতো উপার্জন করতে হিমশিম খাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে গৃহকর্ম সহায়িকা, নির্মাণ ও কারখানা শ্রমিক, রিকশচালক, ছোট দোকানিরাও রয়েছেন। তাঁদের সঞ্চয় নেই, বাড়তি উপার্জন বন্ধ। বেশি দামে সবজি কেনার ক্ষমতাও নেই। পরিযায়ী শ্রমিক, গরিব পরিবারকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়ার যে পরিকল্পনা সরকার করেছিল, তা প্রত্যাশার ধারেকাছেও পৌঁছয়নি। বাস্তবে উপকৃত হয়েছেন মাত্র এক-তৃতীয়াংশ উপভোক্তা। এবার খাদ্যপণ্যে দাম বাড়ার অর্থ, অভুক্ত-নিরন্ন মানুষের সংখ্যাও বাড়বে। যা ভারতের গরিব মানুষ (poor Indian) -এর সংকট দ্বিগুণ করতে পারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.