তপন বকসি, মুম্বই: শনিবারের বারবেলায় বিদর্ভের ছোট রাজনৈতিক দল ‘প্রহার জনশক্তি পার্টি’-র দুই জয়ী এমএলএ যেমন শিব সেনায় যোগ দিলেন, তেমন সেদিনই মীরা-ভায়ন্দরের আর এক জয়ী নির্দল প্রার্থী গীতা জৈন যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন বিজেপিতে। অর্থাৎ মহারাষ্ট্রের চোদ্দ-তম রাজ্য সরকার গঠনের আগে নাটক জারিই রইল।
মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন নিয়ে শিব সেনা-বিজেপি দ্বৈরথ ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির হিসাবে বারবার ঘুরে ফিরে আসে। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। ফলে সারা দেশের নজর এখন মহারাষ্ট্রের দিকে। এই যা পরিস্থিতি তাতে, কাজিয়ায় জল ঢেলে পরিস্থিতি শান্ত করতে হরিয়ানার মতো এখানেও অমিত শাহর মধ্যস্থতা ভীষণ জরুরি। মহারাষ্ট্র বিজেপির পর্যবেক্ষক সরোজ পান্ডে আর বিধান পরিষদের সদস্য গিরিশ ব্যস বলেছেন, বুধবার ৩০ অক্টোবর মহারাষ্ট্রের জয়ী বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনা করতে অমিত শাহ মুম্বই আসছেন। তারপরেই সম্ভবত তিনি উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে দেখা করবেন।
কিন্তু তার আগে প্রতিমুহূর্তে মহারাষ্ট্রের রাজ্য সরকার গঠন প্রক্রিয়া নতুন নতুন বাঁক নিচ্ছে। ২০১৯-এর বিধানসভা ভোটে বিজেপি আর শিব সেনা দু’পক্ষই ২০১৪-র থেকে কিছু আসন কম পেয়েছে। বিজেপির আসন ১৭ টি কমেছে। শিব সেনার কমেছে ৭ টি আসন। তুলনায় কম আসন হারিয়েছে বলে শিব সেনা এবার নিজেদের দাবি দাওয়া কার্যকর করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। সেনার সেই আস্ফালনের মধ্যেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন শরদ পওয়ারের এনসিপির কথা।
২০১৪ সালে শরদ পাওয়ারের এনসিপি বিধানসভা মোটে ৪১টি আসন পেয়েছিল, সেই এনসিপি এবার ১৩টি আসন বাড়িয়ে পেয়েছে ৫৪টি আসন। যা শিব সেনার (৫৬ টি) ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলার মতো। যে শরদ পওয়ার চব্বিশ ঘন্টা আগে এবারের সরকার গড়তে বিজেপির সামনে শিব সেনার দাবিকে ন্যায্য বলেছেন, সেই শরদ পাওয়ারই চব্বিশ ঘন্টা পরে প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর দল শিব সেনার সঙ্গে জোট বাঁধতে যাবে না। বর্ষীয়ান এই ধুরন্ধর নেতা এভাবে বিজেপির সঙ্গে জোট বাঁধার রাস্তা পরোক্ষে খোলা রেখে মহারাষ্ট্রের রাজ্য সরকার গঠনের খেলায় অন্য রঙ এনে দিয়েছেন।
পাঁচ বছর আগে ২০১৪-র সেই মহারণের সময়েও এই এনসিপি বিজেপিকে রি-ইলেকশনের দিকে নিয়ে যেতে পরোক্ষে নির্দেশ দিয়েছিল। বিজেপির সঙ্গে শিব সেনার এহেন দড়ি টানাটানির ফাঁক গলে তাঁদের সঙ্গে ঘর বাঁধার সেরকম গোপন ইচ্ছে এবারেও জিইয়ে রাখছে শরদ পওয়ার। তাতে তাঁর এবং তাঁর দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা প্রফুল্ল প্যাটেল কিংবা ভাইপো অজিত পাওয়ারের বিরুদ্ধে বিজেপি সরকারের আনা যাবতীয় দুর্নীতি কিংবা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরটের তদন্তকেও একসঙ্গে রুখে দেওয়া যাবে। এরকমই এক পরিস্থিতি শরদ তৈরি করেছিলেন ২০১৪-তেও। আর সেই সময়েই নিজেদের ধরে ধনুক ভাঙ্গা পণ ভঙ্গ করে শিব সেনা ‘শর্ত সাপেক্ষ জোট’-এ রাজি হয়ে গিয়েছিল রাতারাতি।
মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবিশের হাতে থাকা ১৭ জন বিজয়ী নির্দল বিধায়ক বা শিব সেনায় এসে পড়া অন্য দু চারজন নির্দল বিধায়কের হিসাব গোটা ছবিকে পালটে দেওয়ার পক্ষে যে যথেষ্ট নয়, সেকথা সবাই বুঝতে পারছেন। আপাতত বিজেপি চাইছে, রেকর্ড দ্বিতীয়বারের জন্য ফড়ণবিসকে সিংহাসনে বসাতে। আবার সেনা চাইছে মাত্র ২৯ বছর বয়সি আদিত্য ঠাকরেকে মহারাষ্ট্রের কুর্সিতে বসিয়ে রেকর্ড করতে। এবার অমিত শাহ বুধবার কোন সমাধানসূত্র নিয়ে মুম্বই আসছেন, তা জানার অপেক্ষায় মারাঠাভূমের রাজনৈতিক মহল। কিন্তু তার আগে মহারাষ্ট্রের চোদ্দতম বিধানসভা গঠনের খেলায় শুধু শিব সেনা নয়, আশি ছুঁতে যাওয়া শরদ পওয়ারের পাশার চাল, আবারও সেই খেলা জমিয়ে দিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.