ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: নাগরিকত্ব (সংশোধিত) আইনের প্রতিবাদে অনশনে বসছেন কেরলেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। নবতিপর পিনারাই ও কেরল সিপিএম সূত্রে খবর, সোমবার তিনি ও কেরল সিপিএম-সহ বেশকিছু অবিজেপি জাতীয় দলের নেতৃত্ব তিরুবনন্তপুরমের পালায়মের শহিদ মিনারের কাছে অনশনে বসছেন। তার আগে রীতি মেনে পলিটব্যুরো সদস্য পিনারাই সীতারামের সঙ্গে ফোনে বিস্তারিত আলোচনা সেরে নিয়েছেন। কেরল সিপিএম সূত্রে খবর, কোনও ধংসাত্মক, প্ররোচনামূলক কাজ করা যাবে না নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করতে গিয়ে। অনশনই একমাত্র পথ বিজেপিকে আটকানোর।
বস্তুত, সিপিএমের এমন গান্ধীগিরি আচরণে বিজেপি মহল কিছুটা বিস্মিত। পিনারাইয়ের মোকাবিলায় বিজেপি নেতৃত্ব কোন পথে হাঁটে, সেটাই এখন দেখার। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, পিনারাইয়ের এই অনশন কর্মসূচি কতটা কার্যকর হয় তা দেখেই বিভিন্ন রাজ্যে পার্টি প্রয়োজনে অনশনে নামবে। কেরলের এই বেনজির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন তামাম অ-বিজেপি জনগণ।
চলতি সপ্তাহেই সংসদের দুই কক্ষেই পাশ হয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (CAB)। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের স্বাক্ষরের পর তা আইনেও পরিণত হয়েছে। কিন্তু এই বিতর্কিত আইন প্রত্যাহারের দাবিতে দেশজুড়ে সরব একাধিক রাজনৈতিক দল। চলছে দফায় দফায় আন্দোলন। আইনি লড়াইয়ের পথে হাঁটছেন অনেকে। বিল প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ উত্তর-পূর্ব ভারতও। এই পরিস্থিতিতে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন-সহ তাঁর মন্ত্রিসভার অন্য মন্ত্রীরা এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা রমেশ চেনিথালা-সহ বিরোধী নেতারা অনশনে বসতে চলেছেন।
সংসদে এই বিল পাশ হওয়ার পরই মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেম কেরলে এই আইন কার্যকর করতে দেওয়া হবে না। তাঁর অভিযোগ, এই আইন আদপে সংঘ পরিবারের অ্যাজেন্ডা মেনে হিন্দুরাষ্ট্র তৈরির ফিকির মাত্র। এ প্রসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় কেরলের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন আদপে ভারতীয় সংবিধানের সাম্য, ধর্ম নিরপেক্ষতার বৈশিষ্ট্যকে গলা টিপে হত্যা করছে। কেরল ঐক্যবদ্ধভাবে এই আইনের বিরোধিতা করবে।” জানা গিয়েছে, কেবলমাত্র রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা নয়, অনশন কর্মসূচিতে হাজির থাকবেন সংস্কৃতি, সাহিত্যের মতো একাধিক ক্ষেত্রের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বরা।
এ বিষয়ে কেরলের বিরোধী দলনেতা রমেশ চেনিথালা জানান, এই আইনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন তিনি। একইসঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে অনশনেও বসবেন।এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের কথা হয়েছে। আমরা বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করব। ওঁরা আরএসএসের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে চাইছে। কিছুতেই তাঁদের উদ্দেশ্য সফল হতে দেব না।” আইন প্রত্যাহার হবে কিনা জানা নেই। তবে চোখ বন্ধ করে এ কথা বলাই যায়, কেরলের ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের ঐক্যবদ্ধ লড়াই দেখতে মুখিয়ে রয়েছে গোটা দেশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.