সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এই মুহূর্তে করোনা সংক্রমণ নিয়ে দেশে সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার নাম নিশ্চিতভাবেই নিজামুদ্দিন অঞ্চলের জমায়েত। ঠিক কতজন ওই অঞ্চলে জমায়েত হয়েছিল, তার মধ্যে কতজন বিদেশ থেকে এসেছিলেন, তার কোনও সঠিক হিসাব মিলছে না। ফলে সম্ভাব্য আক্রান্তদের শনাক্তকরণ বা বাকিদের থেকে তাঁদের বিচ্ছিন্নকরণ অর্থাৎ কোয়ারেন্টাইন করার প্রক্রিয়াটিও অধরাই থেকে যাচ্ছে। তাই সবার আগে যা প্রয়োজন তা হল ঠিক কারা এসেছিলেন তাঁদের খুঁজে বের করা। দেশের ভিতর থেকে ও বাইরে থেকে। বাইরে থেকে যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে সহজ হলেও অনেকেই রয়েছেন লুকিয়ে। আর কারা সেখানে এসেছিলেন আর কাদের সঙ্গেই বা যোগাযোগ করেছিলেন, তা খুঁজতে এই মুহূর্তে একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়াচ্ছে মোবাইল ফোন।
দিনকয়েক আগেই অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের যৌথ উদ্যোগে একটি তথ্য সামনে এসেছে যে, ওই সময়ের মধ্যে ১৩,৭০২ মানুষ যোগ দেন ওই জমায়েতে। কিন্তু তারপর তাঁরা কে কোথায় ছড়িয়ে পড়েছেন তা খুঁজতেও ফের ভরসা সেই মোবাইল। দিল্লি পুলিশও এই সেল ফোন ডেটা ট্র্যাক করেই খোঁজ পেতে চাইছে তবলিঘি জমায়েতের সঙ্গে সামান্যতম যোগ থাকা মানুষগুলোর। যেমন, রবিবারই মুর্শিদাবাদের বড়ঞা ব্লকের একটি গ্রাম থেকে এমন একজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। পরিবারের বাকি সদস্যদেরও সঙ্গে সঙ্গে পাঠানো হয়েছে কোয়ারান্টাইনে। এখনও পর্যন্ত দেশে যতজন করোনা রোগীর হদিশ মিলেছে তার মধ্যে হাজারের উপর রোগীরই তবলিঘি জমায়েতের সঙ্গে যোগ রয়েছে। এবং এঁরা সকলেই ধরা পড়েছেন তৃতীয় অর্থাৎ এখনও পর্যন্ত শেষ পর্যায়ে। প্রশাসনের ‘সামাজিক দূরত্ব’ মেনে চলার নির্দেশ অমান্য করে এবং রোগের পরোয়া না করেই এঁরা যোগ দেন মারকাজ মসজিদের এই জমায়েতে। এঁদের মধ্যে অনেকেই এতদিনে দেশে এবং বিদেশেও নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছেন এবং অজান্তেই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে দিয়েছেন।
আপাতত পুলিশের অপরাধ দমন শাখা ও গোয়েন্দা বিভাগ যা খোঁজার চেষ্টা করছে তা হল, মার্চে ওই জমায়েতের সময়কালের মধ্যে নিজামুদ্দিন অঞ্চলে একাধিক দিন ধরে কোন কোন মোবাইলের জিপিএস লোকেশন ছিল। তার থেকেই শনাক্ত করা যেতে পারে মোবাইল নম্বরের মালিকরা ওই জমায়েতে অংশ নিয়েছিলেন কি না। আপাতত একশো ত্রিশ কোটির দেশে এই সমস্ত ‘কন্ট্যাক্ট’ খুঁজে বের করা, তাঁদের পরীক্ষা করা ও হোম কোয়ারান্টাইন রাখাই করোনার মহামারী প্রকোপ রোধের একমাত্র পথ। গত সপ্তাহের গোটা সময়টা ধরেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মোবাইল নম্বরগুলি কোন কোন রাজ্যে সরে গিয়েছে তা শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এছাড়াও এই সমস্ত মানুষের সরাসরি সংযোগে এসেছেন যাঁরা তাঁদেরও কীভাবে শনাক্ত করা যায়, চলছে তার চেষ্টা। এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই ভারতীয় বায়ুসেনার এক অফিসারকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। এবং তাঁকে ও তাঁর সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের সকলকে রাখা হয়েছে কোয়ারেন্টাইনে।
রবিবারই কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়, এই মুহূর্তে করোনার দ্বিগুণ হওয়ার হার ৪.১। অর্থাৎ ৪.১ দিনে দেশে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, তবলিঘি জমায়েতের ঘটনাটি এড়ানো গেলেই এই হার অন্তত সাতদিনের বেশি জায়গায় থাকত। রবিবার পর্যন্ত তবলিঘি জামাতের সঙ্গে যোগ থাকায় উত্তরপ্রদেশে ১,২০৫ জনকে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। নিজামুদ্দিন অঞ্চলের মসজিদেও অনেকে এখনও লুকিয়ে থাকতে পারেন বলে গোয়েন্দা সূত্রে আগেই তথ্য মিলেছে। মোবাইল জিপিএস ট্র্যাক করে তাঁদের মধ্যে কতজনকে বের করা যায় সেটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ পুলিশ-গোয়েন্দা আর প্রশাসনের কাছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.