সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতির স্বাগত ভাষণের জবাবি ভাষণে বিরোধীদের কার্যত তুলোধোনা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। তাঁর দাবি, দেশের বর্তমান বিরোধীরা শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করছে। আমরা নিজেরাই নিজেদের ব্যঙ্গ করছি। কৃষি আইন নিয়ে বিরোধিতা যে ভিত্তিহীন, তা বোঝাতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়েরই (Manmohan Singh ) পুরনো একটি উক্তি ব্যবহার করলেন মোদি। বুঝিয়ে দিলেন, কৃষিক্ষেত্রে যে সংস্কার প্রয়োজন তা কংগ্রেসই বলেছিল। এখন তারাই ‘ইউ টার্ন’ নিচ্ছে। মজার কথা হল, মোদি যখন মনমোহনের পুরনো উক্তি তুলে কংগ্রেসকে কটাক্ষ করছেন, তখন রাজ্যসভায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নিজেও উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর দাবি, “কৃষি বিক্ষোভ নিয়ে অনেক কথা হল। আন্দোলন কীভাবে হচ্ছে? কেন এত তীব্র হচ্ছে? এসব নিয়ে অনেক আলোচনা হল। কিন্তু আন্দোলনের মূল কারণ নিয়ে কোনও আলোচনাই হল না।” প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী চরণ সিংয়ের এক উক্তি তুলে ধরে মোদি মনে করান, “আজ দেশের ৬১ শতাংশ কৃষকের কাছে ১ হেক্টরেরও কম জমি আছে। ৮৬ শতাংশ কৃষক ২ হেক্টরেরও কম জমির মালিক। এই ১২ কোটি কৃষকের জন্য কি আমাদের কোনও দায়িত্ব নেই?” মোদির দাবি, এই ১২ কোটি ছোট কৃষক শুরু থেকেই বঞ্চিত। কোনও কিছুরই সুবিধা এরা পায় না। না এরা কৃষি ঋণ মকুবের সুবিধা পায়, না পায় ফসল বিমার সুবিধা। এদের জন্য এই সংস্কারের প্রয়োজন ছিল।
এরপরই নিজের বক্তব্যকে বৈধতা দিতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের একটি উক্তি তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন মনমোহন সিং বলেছিলেন, “একটা বৃহৎ বাজার হিসেবে ভারতকে তুলে আনার ক্ষেত্রে যা যা বাধা হবে, সেটার বিরুদ্ধেই আমাদের লড়তে হবে। কৃষকরা যাতে ফসলের সর্বোচ্চ দাম পায়, তা নিশ্চিত করতে সংস্কারের প্রয়োজন।” প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দাবি, সব সরকারই কৃষি সংস্কারের পক্ষে কমবেশি কথা বলেছেন। এখন কংগ্রেস স্রেফ রাজনীতির জন্য উলটো কথা বলছে। কৃষকদের আজকের যে আন্দোলন, তাকে সবুজ বিপ্লবের সঙ্গে তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন,”সবুজ বিপ্লবের সময়ও প্রচুর বিক্ষোভ হয়েছিল। এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছিল যে, কেউ কৃষিমন্ত্রী হতে রাজি হচ্ছিলেন না। বামেরা লালবাহাদুর শাস্ত্রীকে (Lal Bahadur Shastri) আমেরিকার এজেন্ট বলেছিল। তবু, সেই সংস্কার হয়েছিল। যার ফল আজ দেশ দেখছে। আমাদের কৃষিক্ষেত্রে সমস্যা আছে। আর সেই সমস্যা মেটাতে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আন্দোলন শেষ করুন, একসঙ্গে বসে আলোচনা করে সমস্যা আমরা মিটিয়ে ফেলব।”
প্রধানমন্ত্রীর কটাক্ষ, দেশে কিছুদিন ধরে নতুন একটা জামাতের সৃষ্টি হয়েছে। যারা কিনা ‘আন্দোলনজীবী’। এরা আসলে পরজীবী। এদের কাজ সবকিছুর বিরোধিতা করা। যে কোনও আন্দোলনে গিয়ে এরা বসে পড়ে। এদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। মোদির ইঙ্গিত, কৃষক আন্দোলনের (Farmers Protest) পিছনেও রয়েছে এই আন্দোলনজীবীদের হাত। কৃষকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ করেছেন, “কোনও প্ররোচনায় বিভ্রান্ত না হয়ে আন্দোলন বন্ধ করুন। আসুন একসঙ্গে বসে আলোচনা করি। সব রাস্তা এখনও খোলা আছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.