গৌতম ব্রহ্ম, নয়াদিল্লি: কটাক্ষ-সংঘাতের আবহের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখোমুখি হচ্ছেন নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। সব ঠিক থাকলে আগামী ২২ অক্টোবর সকাল সাড়ে দশটায় প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে তাঁর বাসভবনে সাক্ষাৎ করবেন অভিজিৎবাবু। সূত্রের খবর, সাক্ষাতের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে অভিজিৎবাবুকে। ওইদিনই আবার সকালে নীতি আয়োগ এবং আইসিএমআরের সঙ্গে বৈঠক করার কথা অভিজিৎবাবুর। তবে সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হতে পারে ওই দুই বৈঠক। প্রসঙ্গত, শুক্রবারই দেশে ফিরেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। আগামিকাল, রবিবার তাঁর নিকটাআত্মীয় ও বন্ধুবর্গের সঙ্গে একটি ঘরোয়া পার্টি হওয়ার কথা। সোমবার দিল্লিতে তাঁর একটি বুক রিলিজ অনুষ্ঠান রয়েছে। ‘Good Economics for Bad Times’ নামক ওই বইটি সেদিন প্রকাশিত হবে।
উল্লেখ্য, অভিজিৎবাবুর নোবেল জয়ের সংবাদে উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী অভিনন্দন বার্তা টুইট করেছিলেন। শুধু তাই নয়, তাঁর স্ত্রী এস্থার ডাফলো এবং তৃতীয় নোবেলজয়ী মাইকেল ক্রেমারকে আলাদা আলাদাভাবে টুইট করে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। যা বেশ মনে ধরেছিল এস্থারের। সেকথা সংবাদ প্রতিদিন ডট ইন-কে নিজেই জানিয়েছেন অভিজিৎবাবু। সম্প্রতি তাঁর নোবেল প্রাপ্তির পর থেকে যেভাবে তাঁকে কখনও বামপন্থী বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আবার কখনও তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত কংগ্রেসের ‘ন্যায়’ প্রকল্প সাধারণ মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছিল বলে কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রীরা কটাক্ষ করেছেন, সেই আবহে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর মুখোমুখি হওয়া খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁর দারিদ্র দূরীকরণে অর্থনীতি নিয়ে যে তত্ত্ব-ব্যাখ্যা রয়েছে সেগুলি কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবহার করতে পারে ভবিষ্যতে, এমন সম্ভাবনাই প্রবল হচ্ছে। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলে খবর, তাতে অনুমান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের গবেষণা দেশের অর্থনীতির মানোন্নয়নে কাজে লাগাতে পারে সরকার।
তবে কেন্দ্রের আর্থিক নীতির সমালোচনা করলেও কেন্দ্র সরকার বা মন্ত্রীদের কখনও সমালোচনা করতে শোনা যায়নি অভিজিৎবাবুকে। কংগ্রেসের ন্যায় প্রকল্পের ক্ষেত্রেও তাঁর বক্তব্য, এটা কংগ্রেস বলে তাঁদের তথ্য দিয়েছেন এমনটা নয়। কংগ্রেসের তরফে প্রস্তাব এসেছিল বলেই তিনি ন্যায় প্রকল্পের জন্য কাজ করেছিলেন। এমন বিজেপির তরফ থেকে এলেও তিনি করতেন। তাই অভিজিৎবাবুর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়। বস্তুত, দারিদ্র দূরীকরণের গবেষণার জন্য ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছেন অভিজিৎ-এস্থার দম্পতি। বীরভূমের গরমও দমাতে পারেনি এস্থারকে। কলকাতার মেটিয়াবুরুজে দীর্ঘদিন গবেষণার কাজের জন্য থেকেছেন এস্থার। সেকথা এখন সবারই জানা। সুতরাং দারিদ্র দূরীকরণে তাঁদের গবেষণা-তত্ত্ব আগামিদিনে সরকারের কাজে লাগতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বস্তুত, একেবারেই লোকচক্ষু এড়িয়ে দেশে ফিরেছেন সদ্য নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার নিউ ইয়র্ক থেকে নয়াদিল্লি বিমানবন্দরে যখন তিনি নামলেন তখন তাঁকে অভ্যর্থনা জানানোর মতো কেউই উপস্থিত ছিলেন না। ছিলেন না পরিবারের কোনও সদস্য বা অভিজিৎবাবুর কোনও বন্ধুবান্ধব। অভ্যর্থনার কোনও ন্যূনতম আয়োজনও চোখে পড়েনি। সবার অলক্ষেই এদিন ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাটি ছোঁয় অভিজিৎবাবুর বিমান।
অভিজিৎবাবুর ভাই অনিরুদ্ধ ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ও মা নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’জনেই স্পষ্ট জানিয়েছেন, অভিজিতের শুক্রবার দেশে ফেরার কথা। কিন্তু তিনি কোন বিমানে ফিরেছেন এবং কোথায় উঠেছেন তা আমরা জানি না। অনিরুদ্ধবাবু শুক্রবার রাতেই মুম্বই থেকে দিল্লি এসেছেন। তিনি বলেন, ‘‘কোনওভাবেই দাদার সঙ্গে গত দু’দিন ধরে যোগাযোগ করা যায়নি। তাই ভারতে ফেরা নিয়ে কোনও তথ্য তাঁদের জানা নেই। তবে দিল্লি আইআইটি বা ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারেই দাদা সাধারণত ওঠেন। এবার উনি কোথায় উঠেছেন তা জানা নেই।’’
হাসিমুখে তিনি জানান, ‘‘আমরা কখনওই দাদা ও বউদিকে আনতে বিমানবন্দরে যাইনি। নোবেল পাওয়ার পরও সেই ট্র্যাডিশন আমরা বদলাচ্ছি না। বরং আমাদের বিমানবন্দরে দেখলে দাদা চমকে যেতে পারেন।’’ অনিরুদ্ধবাবু বলেন, ‘‘আমরা চাইনি, দাদাও চায় না, তাকে নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত কোনও বাড়াবাড়ি হোক। আমি নিশ্চিত, বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরার পথে ‘ওয়েলকাম নোবেল লরিয়েট অভিজিৎ ভি. বন্দ্যোপাধ্যায় লেখা প্ল্যাকার্ড বা হোর্ডিং না দেখলে দাদার এতটুকু মন খারাপ হবে না।’’ অবশ্য অভিজিৎবাবুর ঘনিষ্ঠ কলকাতার এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ দিল্লিতে নেমেছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.