নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: লোকসভা নির্বাচনের প্রথম প্রার্থীতালিকা বৃহস্পতিবার দোলের দিনেই প্রকাশ করে দিয়েছে বিজেপি। ১৮২ জনের তালিকায় সবার প্রথমে নাম রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। গতবারের কেন্দ্র উত্তরপ্রদেশের বারাণসী থেকেই প্রার্থী হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। এবারও দু’টি আসনে প্রার্থী হবেন তিনি। তবে দ্বিতীয় কেন্দ্র এখনও নিশ্চিত করছে না বিজেপি সূত্র। তার খোঁজ চলছে। বিজেপি সূত্রে খবর, প্রার্থীরা তো রয়েছেনই, তবে দলের প্রচারের প্রধান মুখ নরেন্দ্র মোদিই। মোদির নামেই দল মানুষের কাছে ভোট প্রার্থনা করবে। আর তার জন্য দেশের প্রতিটি রাজ্যে সভা করবেন প্রধানমন্ত্রী। দেশজুড়ে প্রধানমন্ত্রী কমপক্ষে ১৬২টি নির্বাচনী জনসভা করবেন তিনি। সেই জনসভার দৌড় শুরু হবে আগামী বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ২৮ মার্চ উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপুর থেকে। সেদিনই দেরাদুন ও হরিদ্বারেও তাঁর জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী।
[বিহারে আরজেডির টিকিটে লড়বেন শরদ যাদব, জোটের তালিকা থেকে বাদ কানহাইয়া ]
জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী জনসভা গতি পাবে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে। মোদি দিনে পাঁচ থেকে সাতটি জনসভা করবেন, এমন ভাবনাচিন্তা নিয়েই প্রচার কর্মসূচি তৈরি করা হচ্ছে। জনসভার সঙ্গে সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়াতেও জোরকদমে প্রচার চালাবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কংগ্রেসকে আক্রমণের জন্য জনসভার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়াকেও হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করার কাজও তিনি শুরু করে দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য ‘ম্যায় ভি চৌকিদার’ প্রচার শুরু করেছেন তিনি। ৩১ মার্চ টুইটার প্ল্যাটফর্মে প্রধানমন্ত্রীকে সকলে সরাসরি প্রশ্ন করতে পারবেন। বিজেপি এবারের প্রচারের যে রণনীতি তৈরি করেছে তাতে প্রধানমন্ত্রীকেই প্রধান মুখ হিসেবে রেখে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মতোই লোকসভা ভোটে হাওয়া তুলতে চাওয়া হচ্ছে।
দলের প্রচার কমিটির প্রধান দায়িত্বে রয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলি। তিনি এবার নির্বাচনে দিল্লির সদর দপ্তরে বসেই প্রচারের ‘ওয়ার রুম’ সামলানোর কাজ করবেন বলে জানা গিয়েছে। লোকসভা নির্বাচনে জেটলিও প্রার্থী হচ্ছেন না বলেই বিজেপি সূত্রের খবর। তাঁর শারীরিক কারণেই এই সিদ্ধান্ত। চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠলেও সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েই গিয়েছে। তাই ভোটের ময়দানে সরাসরি না নেমে দফতর থেকেই প্রচারের ‘কামান’ সামলানোর ভার তাঁর হাতে দেওয়া হয়েছে। সেই কাজও তিনি শুরু করে দিয়েছেন। প্রতিদিনই সদর দপ্তরে দলের মন্ত্রী থেকে নেতাদের সঙ্গে প্রচারের কৌশল নিয়ে কথা বলছেন।
[উপত্যকায় নিষিদ্ধ ইয়াসিন মালিকের জম্মু কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট]
গুজরাটের গান্ধীনগর আসন থেকে প্রার্থী হচ্ছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। লোকসভায় এবারই প্রথম প্রার্থী হচ্ছেন শাহ। দলের প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য লালকৃষ্ণ আদবানির পরম্পরাগত আসন গান্ধীনগর থেকে শাহ-র প্রার্থী হওয়া তাৎপর্যপূর্ণ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ও পরিবহণমন্ত্রী নীতিন গড়কড়ি তাঁদের পুরানো আসন যথাক্রমে লখনউ এবং নাগপুর থেকেই প্রার্থী হচ্ছেন। আরেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিও এবারও কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে আমেঠি থেকেই প্রার্থী। গত লোকসভা নির্বাচনে এক লক্ষ ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন স্মৃতি। তারপরেও এবার রাজ্যসভার সাংসদ ও দলের তারকা প্রচারক স্মৃতির উপরেই বাজি রেখেছে দল। শুক্রবারও দিল্লিতে বিজেপির সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এবং শাহর নেতৃত্বে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠক হয়। সন্ধের পর থেকে শুরু হওয়া সেই বৈঠক চলে গভীর রাত পর্যন্ত। তার পরেই ৩৬ জনের দ্বিতীয় প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করে বিজেপি।
[দু’দিন পর গভীর নলকূপ থেকে উদ্ধার ১৮ মাসের শিশু]
এই তালিকায় আছে অন্ধ্রপ্রদেশ, অসম, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা ও মেঘালয়ের প্রার্থীরা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ওড়িশার বরগড় কেন্দ্র, সেখান থেকে প্রার্থী হয়েছেন সুরেশ পূজারী। পুরী কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র। পুরীতে মোদিকে প্রার্থী করার জন্য দাবি জানিয়েছিলেন ওড়িশার নেতারা। কিন্তু সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে পুরী থেকে সম্বিত পাত্রকে প্রার্থী করা হল। এরপর মোদির জন্য ফের গুজরাটেই দ্বিতীয় কোনও কেন্দ্র খোঁজা হবে কি না, তা দেখার। গতবার মোদি বারাণসী ছাড়াও ভদোদরায় প্রার্থী হয়েছিলেন। দু’দফা মিলিয়ে বিজেপি ২১৮ জন প্রার্থী নাম ঘোষণা করেছে। রাতে বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জে পি নাড্ডা জানান, প্রথম দুই পর্বের ভোটের প্রায় সব কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই বাকি আসনের প্রার্থীর নামও ঘোষণা হয়ে যাবে বলে জানা গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.