ব্রিকস সামিট সেরে দিল্লিতে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাশিয়ার কাজানে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সামিট শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi)। বুধবারই তিনি দেশে ফেরার উড়ান ধরেন। বৃহস্পতিবার সকালে পা রাখেন দিল্লি বিমানবন্দরে। বিশ্ব মানচিত্রে যে ভারতের গুরুত্ব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, মোদির এই দুদিনের সফরে তারই প্রমাণ মিলল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত, শান্তির পথে ফিরতে ফের একবার দিল্লির উপরেই ভরসা রাখতে চাইলেন রাষ্ট্রনেতারা। পাশাপাশি সীমান্ত সংঘাত থেকে গ্লোবাল সাউথ নিয়ে চিনকেও বিশেষ বার্তা দিলেন নমো। এক কথায়, ব্রিকস সামিটে শক্তিশালী ভারত দেখল বিশ্ব।
#WATCH | Prime Minister Narendra Modi emplanes for Delhi after attending the 16th BRICS Summit in Kazan, Russia.
(Source: DD News) pic.twitter.com/gF6bE4ZId2
— ANI (@ANI) October 23, 2024
চলতি মাসের ২২ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত রাশিয়ার কাজান শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ষোড়শ ব্রিকস সামিট। আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে যোগ দিতে মঙ্গলবার ঐতিহ্যময় শহর কাজানে পা রাখেন মোদি। বিমানবন্দরে রাজকীয় অভ্যর্থনা জানানো হয় তাঁকে। এর পরই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মোদি। আলোচনার টেবিলে ওঠে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ। রণক্ষেত্রে যে সমস্যার সমাধান মেলে না সেই কথা ফের একবার মনে করিয়ে দিয়ে বন্ধু পুতিনকে শান্তির বার্তা দেন তিনি। অন্যদিকে, আগামিদিনে দিল্লি-মস্কো বন্ধুত্ব আরও মজবুত করার আশ্বাস দেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
ব্রিকসের আলোচনায় উঠে আসে গাজা যুদ্ধ থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতির প্রসঙ্গ। পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে মোদির সঙ্গে আলোচনা করেন ইরানের নয়া প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেস্কিয়ান। প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেওয়ার পর এই প্রথমবার নমোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেন তিনি। শান্তির পথে ফিরতে পেজেস্কিয়ানও ভরসা রাখতে চাইলেন দিল্লির উপরেই। মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে মোদি উদ্বেগ প্রকাশ করতেই শান্তিস্থাপনের উপর জোর দিয়ে পেজেস্কিয়ান বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যের সংকট নিরসনে নয়াদিল্লি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।”
হাই ভোল্টেজ এই সম্মেলনে আন্তর্জাতিক মহলের বিশেষ নজর মোদি-জিনপিং বৈঠকের উপর। নানা জল্পনার পর অবশেষে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। গালওয়ান সংঘর্ষের পর এই প্রথমবার দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মুখোমুখী হওয়া ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আলোচনার টেবিলে কার্যত মোদির বার্তা ছিল, গালওয়ান সংঘর্ষের মতো ঘটনা যেন ভবিষ্যতে না হয়। সীমান্ত সংঘাত দূর করে শান্তি স্থাপনের উপরই জোর দেন তিনি। এদিকে, সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে জিনপিংও একমত হয়ে জানান, উভয়পক্ষের নিয়মিত যোগাযোগ এবং সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া দিল্লি যে গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর, সেই প্রচ্ছন্ন বার্তাও চিনকে দেন মোদি।
অন্যদিকে, ১৬তম ব্রিকস সম্মেলনের ভাষণে পাকিস্তানকে বেঁধেন মোদি। সাফ জানিয়ে দেন, “আমরা আলোচনা এবং কুটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে, যুদ্ধের পক্ষে নই। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় ভাবে দাঁড়াতে হবে আমাদের, দ্বিচারিতার স্থান নেই।” বিশ্লেষকদের মতে, ‘দ্বিচারিতা’র কথা বলে পাকিস্তানকেই খোঁচা দিয়েছেন তিনি। এইসঙ্গে যে কোনও ধরনের হিংসা এবং হিংসায় মদত দিতে আর্থিক আনুকূল্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন মোদি। তাঁর সঙ্গে সহমত হন অন্যান্য রাষ্ট্রনেতারা।
কূটনীতির কারবারিদের মতে, সংঘাত থামিয়ে শান্তির পথে ফিরতে পুতিনের ভরসা মোদি। একইভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীই ‘শান্তির দূত’ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কাছে। এবার পেজেস্কিয়ানও হস্তক্ষেপ চাইছেন দিল্লির। এটাই প্রমাণ যে বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভারতের ভূমিকা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতের মতামতকে মান্যতা দিচ্ছে অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোও। আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক যেকোনও ইস্যুতেই ভারতের বিদেশনীতি থেকেই সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে চায় একাধিক দেশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.