ফাইল ফটো
নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবার রাজ্য সফর শুরু করবেন। জুন মাস থেকে মাঝেমধ্যে সাউথ ব্লকে নিজের দপ্তরে যাবেন। দেশে করোনা পরিস্থিতির জেরে লকডাউন জারি হতেই নিজেকে ঘরবন্দি করে ফেলেছিলেন তিনিও। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকে শুরু করে মন্ত্রীদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক, মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক চলেছে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তাঁর ৭ নম্বর লোককল্যাণ মার্গের সরকারি বাসভবন থেকেই। সেই রুটিনে ছেদ পড়েছে গত শুক্রবারই। আমফানের কারণে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শনের জন্য দুই রাজ্যে সফরে যান তিনি। এটিই ছিল লকডাউনের মধ্যে তাঁর প্রথম বাড়ির বাইরে পা রাখার এবং ৮৩ দিন পরে বিমান সফরও।
প্রধানমন্ত্রী মোদি শেষ ২৯ মার্চ চিত্রকূটে বুন্দেলখণ্ড এক্সপ্রেসওয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়েছিলেন। তারপর এই একইদিনে তাঁর বাংলা-ওড়িশা সফর তাৎপর্যপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রীর বিমান সফর আদতে দেশের মানুষকে এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা যে এবার থেকে সবকিছুকেই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরাতে হবে। আবার বিমানের মধ্যে মুখ ঢেকে ও সামাজিক দূরত্ব বিধি পালন করার ছবি সকলের সামনে তুলে ধরে বোঝাতে চাওয়া হয়েছে যে এভাবে করোনার সঙ্গে লড়াই করেই চলতে হবে।
আজ, সোমবার থেকে দেশে অন্তর্দেশীয় বিমান পরিষেবা চালু হচ্ছে। তবে নিয়ন্ত্রিত সংখ্যা। উড়ান ক্রমশ বাড়বে। ১ জুন থেকে দৈনিক ২০০ জন যাত্রী ট্রেন চালানোরও পরিকল্পনা রয়েছে রেলের। অন্য গণপরিবহণ চালু করার ব্যাপারেও কেন্দ্র চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছে। দীর্ঘ লকডাউনের জেরে দেশের অর্থনীতির বেহাল অবস্থা। অর্থনীতিকে লাইনে ফেরাতে আর্থিক প্যাকেজ থেকে শুরু করে সংস্কারের মতো পদক্ষেপও গ্রহণ করেছে মোদি সরকার। কিন্তু, সবকিছু যতদিন পর্যন্ত আগের মতো স্বাভাবিক না হচ্ছে, পরিস্থিতি শুধরানো সম্ভব নয়। দেশের জনতা যাতে ধীরে ধীরে তাঁদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে আসে সেই চেষ্টাতেই তিনি নিজে রাজ্য সফর শুরু করলেন বলেই মনে করা হচ্ছে। সমস্ত বিষয় মাথায় রেখে খুব শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রী রাজ্যসফর, সরকারি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ, দপ্তরে যাওয়া শুরু করতে চাইছেন বলেই সূত্রের খবর। উল্লেখ্য, ঘরবন্দি থাকার মতো বিষয় প্রধানমন্ত্রী মোদির চরিত্রের একেবারেই বিপরীতধর্মীও। দু’বারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গত ছ’ বছরে তিনি ৪৪৪ বার রাজ্য সফর করেছেন। বিদেশ সফরের তালিকাও দীর্ঘ। তবে, দপ্তরে আসতেন মাঝে মধ্যে।
প্রধানমন্ত্রীর রাজ্য সফরের পিছনে একদিকে যেমন দেশের মানুষকে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরাতে মনোবল তৈরির চেষ্টা রয়েছে, তেমনই রাজনৈতিক হিসেবেরও অঙ্ক রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গকে যে বিজেপি বেশ কয়েক বছর ধরেই ‘পাখির চোখ’ করেছে সেকথা নতুন নয়। সেই বাংলাতেই আমফানের মতো ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়া এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধানমন্ত্রীকে বিপর্যয় দেখতে আসার আহ্বান। মুখ্যমন্ত্রীর আর্জিতে তিনি সাড়া না দিতেই পারতেন। লকডাউনের কারণে আসতে পারছেন না এমন কথা জানিয়ে দিলেও চলত। কিন্তু, মোদি দুঁদে রাজনীতিবিদ। তিনি না এলে পরবর্তীকালে যে এই বিষয়টিকেই রাজ্যে বিরোধীরা হাতিয়ার করতে পারে সেকথা মাথায় রেখেছেন। শুধু আকাশপথে বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শনই নয়, প্রশাসনিক বৈঠক থেকে শুরু করে সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য রাখা এবং সেই সময়েই প্রাথমিক ত্রাণ হিসেবে এক হাজার কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণাও করেছেন। সঙ্গে আশ্বাস দিয়েছেন, আগামী দিনেও কেন্দ্র রাজ্যকে সবরকম সাহায্য করবে। তিনি যে সমস্ত রাজনীতির ঊর্ধ্বে দেশের প্রধানমন্ত্রী সেই ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছে মোদি। আবার আমফানের পরে মোদি যে সবকিছু পরিদর্শনে এসেছিলেন এই বিষয়টি বাংলার মানুষের মনে দাগ কেটেছে। লকডাউনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বাংলা সফর রাজ্য বিজেপিকে খানিকটা সুবিধা যে করে দিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.